নারীরা অবৈতনিক গৃহস্থালি কাজের ভার বহন করছেন। পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও পুরুষদের ছাপিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রকৃত উন্নয়ন তখনই উদযাপন করা যায়, যখন নারীদের উভয় অবদান যথাযথভাবে স্বীকৃতি পায়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, কর্মজীবী নারীরা শীঘ্রই তাদের সন্তানদের কর্মক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়ার আইনি অধিকার পাবেন এবং তা প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত “রেকগনিশন: এ ফার্স্ট স্টেপ টুয়ার্ডস জেন্ডার ইকুয়ালিটি” শীর্ষক সংলাপে, গুলশানের একটি হোটেলে (ক্রাউন প্লাজা) তিনি এই উদ্যোগের কথা জানান।
সংলাপের আলোচনায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এর হাউসহোল্ড প্রোডাকশন স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট (HPSA) রিপোর্ট তুলে ধরা হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, অবৈতনিক গৃহস্থালি কাজের মূল্য ৬,৭০,০০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৮.৯% সমান। এর ৮৫% অবদান নারীদের, যা জিডিপির ১৬.১৪% সমান।
ড. মাহমুদ বলেন, কর্মক্ষেত্রে নারীরা তুলনামূলকভাবে পুরুষদের চেয়ে ভালো অবদান রাখছেন। দেশের প্রকৃত উন্নয়ন তখনই উদযাপন করা যাবে, যখন নারীরা যথাযথ সম্মান পাবেন। তিনি আরও যোগ করেন, যদি নারীদের সন্তানদের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে আসার সুযোগ দেওয়া হয়, তা ভবিষ্যতের জন্য পথপ্রদর্শক হবে। যার মাধ্যমে প্রতিটি অফিসে বাধ্যতামূলক ডে কেয়ার সুবিধা স্থাপন প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হবে।
এমজেএফ-এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম তাঁর সংগঠনের এক যুগেরও বেশি সময়ের প্রচেষ্টা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখেছি, যেখানে নারীরা ঘরে সম্মানিত হবেন এবং পারিবারিক সহিংসতার সম্মুখীন হবেন না। অবৈতনিক গৃহস্থলির কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া ছিল সেই স্বপ্নের মূল বিষয়। আজ সরকার কর্তৃক এই স্বীকৃতি, নারীর অধিকার অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপ-পরিচালক আসমা আখতার একটি যত্নশীল সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে আরও তথ্য হালনাগাদ করা সম্ভব হবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এমজেএফ-এর পরিচালক- রাইটস অ্যান্ড গভর্ন্যান্স প্রোগ্রামস বনশ্রী মিত্র নিয়োগী বলেন, প্রয়োজনীয় সমীক্ষাগুলো প্রায়শই আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার অর্থায়নে হয়। ভবিষ্যতে তারা সবসময় তা করতে সক্ষম হবেন না। তাই সরকারকে এগিয়ে এসে এই ধরনের উদ্যোগ প্রহণ করা উচিত।
আয়াত ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী নুসরাত আমান বলেন, পুরুষদের কাজকে উদযাপন নয়, সমান দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এডিবি-এর প্রিন্সিপাল সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট নাসীবা সেলিম বলেন, মানুষ আশা করেন যে গৃহস্থালি কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নারীরা করবেন। এই মনোভাব পরিবর্তন করা দরকার এবং সমান জেন্ডারভিত্তিক ভূমিকা নির্ধারণ করতে হবে।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব কাজী গোলাম তৌসিফ বলেন, পুরুষ ও নারী, আমরা সবাই মিলে সমাজের কল্যাণে কাজ করব। এটিই আমাদের মূলমন্ত্র।
ইউ এন ওমেন বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ গীতাঞ্জলি সিং বলেন, পুরুষ ও নারীর সম্মিলিত প্রচেষ্টা অবৈতনিক যত্নমূলক কাজের ক্ষেত্রে গেম চেঞ্জার হতে পারে।
স্টেফানি সেন্ট-লরেন্ট ব্রাসার্ড, সেকেন্ড সেক্রেটারি (ডেভেলপমেন্ট- জেন্ডার ইকুয়ালিটি) কানাডিয়ান হাই কমিশন, বাংলাদেশ বলেন, আজ আমরা পুনরায় নিশ্চিত হই যে গৃহস্থলি কাজ কোনও ব্যয় নয়, এটি একটি বিনিয়োগ। এটি মূলত একটি সম্ভাবনা, সমতা এবং সমৃদ্ধ ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যতের বিনিয়োগ।
নাগরিকতা সিইএফ-এর ডেপুটি টিম লিডার ক্যাথারিনা কুনিগ বলেন, নারীর অবৈতনিক যত্নমূলক কাজের বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে স্বীকার করি। ভবিষ্যতে আমরা অবশ্যই প্রচারাভিযান এবং জনসচেতনতা কর্মসূচি পরিচালনা করব।
এমজেএফ-এর গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারপারসন পরভীন মাহমুদ এফসিএ বলেন, নারীদের অবৈতনিক যত্নমূলক কাজের স্বীকৃতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন, যা এমজেএফ-এর দীর্ঘমেয়াদী অ্যাডভোকেসির ফল। সমাজের অংশীজনদের জেন্ডার সমতা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা উচিত।
এই ফলাফল এমজেএফ-এর ২০১৩ সালে চালু হওয়া “মর্যাদায় গড়ি সমতা” প্রচারাভিযানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি নারীদের অবদান স্বীকৃতি, পরিবারের ও সমাজে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি এবং সহিংসতা ও বৈষম্য হ্রাসে কাজ করে আসছে।