সাউথ এশিয়ানস ফর কুমো হিন্দু, মুসলিম, শিখ নেতাদের সঙ্গে মঞ্চে মেয়র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো
নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদপ্রার্থী অ্যান্ড্র এম. কুমোর সমর্থনে গত ১৯ অক্টোবর রবিবার কুইন্সের ফ্রেশমিডোজের ১৭৩-১৫ হোরেস হার্ডিং এক্সপ্রেসওয়েতে ‘সাউথ এশিয়ানস ফর কুয়োমো’ শীর্ষক এক বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। জনাকীর্ণ এই সমাবেশে হিন্দু, মুসলিম ও শিখ-এই তিন ধর্মের দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর প্রতি তাঁদের দৃঢ় সমর্থন জানান। এক্সপেরিয়েন্স ম্যাটারস এবং টু বিল্ড এ নিউ এনওয়াইসি স্লোগানকে সামনে রেখে আয়োজিত এই র্যালিটি কুয়োমোর সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের এক প্রতীকী মঞ্চে রূপ নেয়। দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটিতে কুমোর প্রচারণার এই ধাপটি ছিল একটি শক্তিশালী তৃণমূল উদ্যোগ, যার উদ্দেশ্য নিউইয়র্কজুড়ে দক্ষিণ এশীয় ভোটারদের সংগঠিত ও উদ্বুদ্ধ করা যাতে তারা একটি নিরাপদ, ন্যায়নিষ্ঠ ও সাশ্রয়ী শহর গঠনের প্রচেষ্টায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারেন।
বক্তারা বলেন, নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর কুয়োমো সবসময়ই সংখ্যালঘু ও অভিবাসী সম্প্রদায়ের পাশে থেকেছেন। ঘৃণা-অপরাধ দমনে তাঁর অবদান, ক্ষুদ্র ব্যবসার বিকাশে সহায়তা এবং অভিবাসী জনগোষ্ঠীতে বিনিয়োগ সহ সবমিলিয়ে তাঁকে একজন পরীক্ষিত ও দৃঢ় নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়। সাউথ এশিয়ানস ফর কুমো-এর মাধ্যমে তাঁর প্রচারণা দল দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে যে ঐক্য গড়ে তুলতে চায়, তা শুধু একটি নির্বাচনী কৌশল নয়; বরং এটি ধর্ম, সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের বৈচিত্র্যকে রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তর করার একটি সচেতন প্রচেষ্টা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতারা বলেন, অ্যান্ড্র কুমো এমন একজন নেতা, যিনি নিউইয়র্কের বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন এবং প্রশাসনকে জনকল্যাণে কীভাবে কাজে লাগাতে হয়, সে বিষয়েও অভিজ্ঞ। তাঁদের মতে, এই নতুন উদ্যোগ শুধু একটি নির্বাচনী জোট নয়; এটি দক্ষিণ এশীয় নিউইয়র্কবাসীর রাজনৈতিক ও সামাজিক অংশগ্রহণের এক নতুন অধ্যায়। কুমোর প্রচারণার স্বেচ্ছাসেবকরা ইতোমধ্যেই শহরের বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির ও কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন, তাঁদের উদ্বেগ ও প্রত্যাশা শুনছেন এবং কুয়োমোর নীতিমালা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরছেন।
গুজরাটি সমাজ অব নিউইয়র্ক-এর সভাপতি হর্ষদ প্যাটেল বলেন, গভর্নর কুমো সবসময়ই অভিবাসী ও কর্মজীবী নিউইয়র্কবাসীর পাশে থেকেছেন। ঘৃণা-অপরাধ ও অর্থনৈতিক সংকটের এই সময়ে আমাদের এমন একজন মেয়র দরকার, যিনি আমাদের পরিবারকে সুরক্ষা দেবেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়বেন এবং আমাদের পাড়ায় নিরাপত্তা ও জীবনমান নিশ্চিত করবেন। কুমোর অভিজ্ঞতা, সহানুভূতি ও দৃঢ়তা রয়েছে যা আজকের নিউইয়র্ক শহর ও দক্ষিণ এশীয় সমাজের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এবং কমিউনিটি বোর্ড ৩-এর সদস্য ফাহাদ সোলাইমান বলেন, ছোট ব্যবসায়ীরা জানে, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ছাড়া কোনো অর্থনীতি টিকে থাকতে পারে না। গভর্নর কুয়োমো বুঝতে পারেন যে, আমাদের রাস্তাগুলো নিরাপদ থাকলে ব্যবসা বাড়ে এবং পরিবারগুলো নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করতে পারে। তিনি সবসময় ঘৃণার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন এবং পরিশ্রমী নিউইয়র্কবাসীর পক্ষে লড়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, তিনিই নিউইয়র্ককে সবার জন্য নিরাপদ ও সমৃদ্ধ করে তুলতে পারবেন।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যানিটি এমপাওয়ারমেন্ট রাইটস ফাউন্ডেশন ইনক-এর সভাপতি ফেমড রকি বলেন, প্রতিটি সফল সমাজের ভিত্তি হলো জননিরাপত্তা, আর গভর্নর কুমো এটি গভীরভাবে বোঝেন। তিনি সবসময় ঘৃণা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, প্রত্যেক নিউইয়র্কবাসী তাঁদের ধর্ম, বর্ণ বা জাতিগত পরিচয় নির্বিশেষে নিরাপদে চলাফেরা, উপাসনা এবং সন্তান লালন করতে পারবেন। কুমো এমন এক নেতা, যিনি কথায় নয়, কাজে ফল দেখাতে পারেন। মোহাম্মদিয়া সেন্টারের ইমাম কাজী কাইয়ূম বলেন, গভর্নর কুমোর মূল্যবোধ আমাদের ধর্মীয় শিক্ষার সহানুভূতি, ন্যায়বিচার এবং অন্যের সেবায় আত্মনিয়োগের সঙ্গে মিলে যায়। তিনি সবসময় বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষের পাশে থেকেছেন। তিনি বোঝেন, শহরের নিরাপত্তা মানে ঘৃণা ও বিভাজনের বিরুদ্ধে প্রতিটি সম্প্রদায়কে সুরক্ষিত রাখা। তাঁর নেতৃত্বে আমরা ঐক্য, মর্যাদা ও সুযোগের এক নিউইয়র্ক দেখতে পাচ্ছি।
রবিবারের এই র্যালি শুধু অ্যান্ড্রু কুমোর সমর্থনে এক রাজনৈতিক সমাবেশ নয়, বরং নিউইয়র্কের দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠীর ঐক্য, রাজনৈতিক সচেতনতা ও অংশগ্রহণের এক শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।এই ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ নিউইয়র্কের রাজনীতিতে দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও নেতৃত্বের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।