২৯ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার, ০৮:১০:৪৮ অপরাহ্ন


থলের বিড়াল বের হয়ে গেলো
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-১০-২০২৫
থলের বিড়াল বের হয়ে গেলো কুমিল্লার চান্দিনায় জামায়াতের দু’গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি


ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার চান্দিনায়। চান্দিনায় এক জামায়াত প্রার্থীকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দেওয়া নিয়েই ঘটনা। আর এধরনের ঘটনাটি ঘটে যাওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান আলোচনা জমজমাট। 

আগে জানা যাক চান্দিনার ঘটনাটি:

কুমিল্লার চান্দিনায় জামায়াতে ইসলামীর কুমিল্লাা উত্তর জেলা শাখা আয়োজিত গণমিছিলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। খবরটি প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক প্রথম আলোতে। 

প্রকাশিত খবরে জানা গেলো সেখানে কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থীকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে দলের একটি পক্ষকে। তাদের ভাষ্য, যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। তবে জামায়াতের প্রার্থীর দাবি, তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস করেননি। ২৭ অক্টোবর সোমবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা বাসস্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পাঁচ দফা দাবিতে এই গণমিছিলের আয়োজন করা হয়।

এব্যাপারে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদ উল ইসলাম বলেন, জামায়াতের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ঘটলেও তাঁদের নেতা-কর্মীরাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তবে বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা সেখানে ঘটেনি।

প্রথম আলো তাদের খবরে পত্রিকাটির রিপোর্টারের বরাত দিয়ে বলা হয় যে, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে বের হওয়া গণমিছিলের শেষ পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীর চান্দিনা উপজেলার নায়েবে আমির ও কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে দলের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা মোশাররফ হোসেন বক্তব্য দেওয়ার সময় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে জামায়াত ও শিবিরের অপর একটি পক্ষ। তারা প্রার্থীর হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেয়। এ সময় কয়েকজন নেতাকর্মী ‘দল বিক্রি চলবে না, আওয়ামী দোসর প্রার্থী মানি না’ বলে শ্লোগান দিতে থাকেন। তখন মোশাররফ হোসেনের পক্ষ ও অপর পক্ষ মুহূর্তেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে। তাদের মধ্যে হাতাহাতি, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

মোশাররফ হোসেনের বিরোধীরা জামায়াতে ইসলামীর চান্দিনা আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিস্টার মোস্তফা শাকের উল্লাহর সমর্থিত বলে জানা গেছে। তবে ঘটনাস্থলে মোস্তফা শাকের উল্লাহর নাম কাউকে নিতে দেখা যায়নি। মোস্তফা শাকের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। আর ঘোষিত প্রার্থী মোশাররফ হোসেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার সুপার (অধ্যক্ষ)।

সংগঠনটির নেতাকর্মীরা জানান, দলীয় প্রার্থী হিসেবে মোশাররফ হোসেনকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নেতাকর্মীরা অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, সংগঠনের নিয়ম না মেনে ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে উত্তর জেলা শাখা সিন্ডিকেট করে মোশাররফ হোসেনকে দলীয় প্রার্থী করে।

সংঘর্ষের সময় নেতা-কর্মীদের একটি অংশকে কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের আমির আবদুল মতিন ও জেলা সেক্রেটারি সাইফুল ইসলামের (শহীদ) বিরুদ্ধে শ্লোাগান দিতে দেখা যায়।

চান্দিনা উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সাজিদ আল-আমিন (সোহাগ) বলেন, জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির ও সেক্রেটারি অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে মোশাররফ হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। অথচ মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য প্রাণ গোপালের সঙ্গে উঠান বৈঠক করেছেন। আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তপন বকসীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তিনি। জেলা সংগঠন আওয়ামী লীগের একজন দালালকে জামায়াতের মাধ্যমে সহযোগিতা করেছে। দলের হাইকমান্ডের কাছে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছেন বলে জানান সাজিদ আল-আমিন।

থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়লো

এদিকে এই ঘটনার ব্যাপারে মোশাররফ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করলেও এটা পরিস্কার ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সেসময়ে ক্ষমতাসীন দলটির সাথে জামায়াতের একটি বিরাট অংশ গোপনে যোগাযোগ ঠিক রাখে। যদিও মোশাররফ হোসেন ওই গণমাধ্যমে দাবি করেন, ‘দলীয় নেতা–কর্মীরা এখন দুই ভাগে বিভক্ত। আমার পক্ষে মিছিল হলে অন্য পক্ষ তার বিরুদ্ধে মাঠে আছে। তবে আমি কখনোই রাজনৈতিকভাবে আপস করিনি। স্থানীয় উন্নয়নমূলক আলোচনায় অংশ নেওয়াকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।’ 

তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠকসহ বিভিন্ন সময়ে যে গোপনে যোগাযোগ- তিনি ছাড়াও যে আরও অনেকে রেখেছেন তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। জানা গেছে, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে মোস্তফা শাকের উল্লাহ যে সময়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন করে এলাকা ছাড়া হয়েছিলেন তা এলাকার অনেকেই স্বীকার করেন। তা-ই তাদের চোখের সামনে তরুণ এই নেতা সমর্থিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেলেছেন, কারণ তাদের মূল দল জামায়াতের সেসময়ে গোপন যোগাযোগের বিষয়টি হয়তবা তিনি জানতেন না। 

এ কথা ঠিক এঘটনার সত্য মিথ্যা জামায়াত চিরাচরিত কায়দায় ঢেকে দেবে তা বলা অপেক্ষা রাখেন না। তবে জামায়াতের একটি বড় অংশের নেতাকর্মীরা যে ফ্যাসিবাদী শাসনামলে গোপনে আওয়ামী লীগের ছায়াতলে নিরাপদে ছিলেন তা স্পষ্ট। চান্দিনা আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিস্টার মোস্তফা শাকের উল্লাহ প্রতিবাদে তা ফুটে উঠেছে। কারো কারো থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়লো আর কি।

শেয়ার করুন