০৫ নভেম্বর ২০২৫, বুধবার, ০৯:১৯:৫৭ অপরাহ্ন


তিস্তা সমস্যার আশু সমাধান জরুরি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-১১-২০২৫
তিস্তা সমস্যার আশু সমাধান জরুরি নদী নিয়ে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারীরা


‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন সরকারের নিকট তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোন তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) এর যৌথ উদ্যোগে ঢাকায় প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)’র ১নং ভবনের (৬ষ্ঠ তলার) সেমিনার কক্ষে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বাপা সভাপতি, অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক, আলমগীর কবির এর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বাপা’র সহ-সভাপতি ও বেন এর বৈশ্বিক সমন্বয়ক যুক্তরাষ্ট্রের কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জমান। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বাপা’র সহ-সভাপতি ও বেন এর প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতিসংঘের উন্নয়ন ও গবেষণা বিভাগের (সাবেক) গবেষণা প্রধান, ড. নজরুল ইসলাম এবং বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক ও তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির, সভাপতি ফরিদুল ইসলাম ফরিদ।

মতবিনিময় উপস্থিত থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রুহীন হোসেন প্রিন্স, সাধারণ সম্পাদক, সিপিবি, বজলুর রশীদ ফিরোজ, সাধারণ সম্পাদক, বাসদ, শাকিল আনোয়ার, যুগ্ম সম্পাদক, এনসিপি, শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, সাধারণ সম্পাদক, জাসদ (রব), ড: আবু ইউসুফ সেলিম, সাধারণ সম্পাদক, ভাষানী জনশক্তি পার্টি, সাকিব আনোয়ার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, নাগরিক ঐক্য, কমরেড সাইফুল হক, সাধারণ সম্পাদক, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টি, মোঃ রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক, গণঅধিকার পরিষদ, উপাধ্যক্ষ নূরুজ্জামান হীরা, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, শাকিল আনোয়ার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, মাসুদ রানা, সমন্বয়ক বাসদ (মার্কসবাদী), মুসাবিন ইজাহার, সাধারণ সম্পাদক, নেজামে ইসলামি, অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশের বিপ¬বী কমিউনিস্ট লীগ, ইবনে শাহ আলী তিস্তাপাড়ের মানুষ, ইঞ্জিনিয়ার ড. লুৎফর রহমান, সাবেক ডিজি, নদী গবেষণা কেন্দ্র, ইঞ্জিনিয়ার. তোফায়েল আহমেদ, পরিবেশবিদ, ইঞ্জিনিয়ার ড. কর্নেল আনোয়ার হোসেন, পরিবেশবিদ প্রমুখ। 

বিশেষজ্ঞ ও নদী গবেষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাপার সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এম শহীদুল ইসলাম, ঢাবির ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মতিন উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন। 

মতবিনিময় সভায় সভার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার একটি খসড়া প্রস্তাবনা পাঠ করেন। এবং এটি সভায় গৃহীত হয়। 

এতে আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতই রাখতে হবে। দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তি সার্থকে উপেক্ষা করে দেশের সার্থকে বড় করে দেখা। যেসকল প্রকল্প দির্ঘ মেয়াদী সেসকল প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই দেশের জনগণের মতামত গ্রহণ করতে হবে। 

ড. নজরওল ইসলাম বলেন, বাপা-বেন এন লক্ষ্য উদ্দেশ্য দেশের নদী ও পরিবেশকে রক্ষা করা। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাচ্ছে না। সরকারের কেউ এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের জন্য চীনের সাথে মনমালিন্য নিয়ে ভাবছে ফলে তারাও এই তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করছে না। বাপার এই ধরনের মনমালিন্যকে পাত্তা না দিয়েই পরিবেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও অসংগতি তুলে ধরতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাপা-বেন প্রায় ২০ বছর ধরে তিস্তা নিয়ে আন্দোলন করে আসছে। তিনি আরো বলেন ভারত কর্তৃক তিস্তার প্রবাহের উপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন ও প্রবাহ অপসারণ এবং দেশের ভেতরে অনুসৃত বিভিন্ন অনুপযোগী নীতি অনুসরণের ফলে তিস্তা নদী এক গভীর সংকটে নিপতিত। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব, বর্ষাকালের বন্যা, অসময়ে হড়কা বন্যা, প্রকট নদী ভাঙ্গন, ইত্যাদি বহুমুখী সমস্যা দ্বারা তিস্তাপাড়ের প্রায় দুই কোটি মানুষের জীবন জর্জরিত। তিস্তা সমস্যার আশু সমাধান অত্যন্ত জরুরি। 

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, বাপা কখনও উন্নয়ন বিরোধী না। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে।

ড. মতিন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ওয়াটার ডিপ্লোমেসি অত্যন্ত জরুরি। ভারতকে উপক্ষো করে তিস্তা প্রকল্প নেওয়া ঠিক হবে না। 

অধ্যাপক ড. এম শহীদুল ইসলাম বলেন, বাপা-বেন রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সময় পরিবেশগত দিকগুলো নিয়ে সতর্ক করেছিল একাধিকবার। সরকারকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ যে ক্ষতি করবে সেবিষয়ে সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল কিন্তু সরকার আমাদের সাথে আলোচনায় বসার সাহস করেনি। 

সাইফুল হক বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনার সিদ্ধান্ত এক তরফাভাবে নেওয়া ঠিক হবে না। ভারত, নেপালসহ অববাহিকার সকল দেশকে সম্পৃক্ত করে টেকসই প্রকল্প নিতে হবে। তিনি এই প্রকল্পের আরো পাবলিক হেয়ারিং ও পুন: পর্যালোচনা করার দাবি জানান। 

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমাদের নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত। আমরা সবাই নদী রক্ষা করতে চাই কিন্তু সেটাকে খালে পরিণত করে নয়। প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশের বিশেষজ্ঞ, গবেষক, স্থানীয় জনগনের মতামতকে প্রধান্য দিতে হবে, বিদেশে বিশেষজ্ঞ হায়ার করে নয়। তিনি তিস্তাামহাপরিকল্পনা পূন:মূল্যায়ণ করার দাবি জানান।

অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার বলেন, তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আদায় করার জন্য ভারতের সাথে আলোচনা করতে হবে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল প্রতিনিয়ত করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিস্তা নদীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কোন প্রকল্প আমরা চাই না।

রাশেদ খান বলেন, তিস্তার সমস্যা সমাধানে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। ভারত বিভিন্ন সময় আমাদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। ভারতের নিকট থেকে আমাদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।

ইমরান ইমন বলেন, তিস্তার উপর যে আগ্রাসন হয়েছে তার উপর বিদ্যুতায়নের সম্পর্ক আছে। নদীকে যে হাইকোট জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে তার বাস্তবায়ন কোথায়? জনঘনের মতামতকে পাশকাটিয়ে এই প্রকল্প কোনভাবেই বাস্তবায়নযোগ্য নয়।

শাকিল আনোয়ার বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এখনই এই প্রকল্প বাস্তবায়নে তোড়জোড় না করাই উত্তম।

মাসুদ রানা বলেন, বর্তমান সরকার এতো জনগুরুত্ব প্রকল্প জনগণের আড়াল করছে। উপযুক্ত পরিকল্পনার মাধ্যমে তিস্তা সমস্যার সমাধান করতে হবে। 

শেয়ার করুন