১৫ নভেম্বর ২০২৫, শনিবার, ৬:৪০:৫৫ পূর্বাহ্ন


মুক্তি পাচ্ছেন ব্রিটিশ ভাষ্যকার সামি হামদি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১১-২০২৫
মুক্তি পাচ্ছেন ব্রিটিশ ভাষ্যকার সামি হামদি ব্রিটিশ রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও প্রো-প্যালেস্টাইন সাংবাদিক সামি হামদি


যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর হাতে আটক থাকা ব্রিটিশ রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও প্রো-প্যালেস্টাইন সাংবাদিক সামি হামদি শিগগিরই মুক্তি পাচ্ছেন বলে তার পরিবার গত ১০ নভেম্বর জানিয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে ক্যালিফোর্নিয়ায় এক কনফারেন্সে ইসরায়েলবিরোধী বক্তৃতা দেওয়ার পর সফরের মধ্যেই তাকে আটক করা হয়। ২৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি তার ভিসা বাতিল করে জানায়, হামদিকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং তিনি সফর অব্যাহত রাখতে পারবেন না। ট্রাম্প প্রশাসনের মুখপাত্র ত্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন তখন বলেন, যেসব ব্যক্তি সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করে, তারা এ দেশে কাজ বা ভ্রমণ করতে পারবে না। ইসরায়েলপন্থী ও কনজারভেটিভ মহলের একটি অংশ হামদির সফর বন্ধ ও তাকে বহিষ্কারের দাবিতে চাপ অব্যাহত রাখছিল, কারণ তিনি গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের কঠোর সমালোচক এবং দীর্ঘদিন ধরে প্যালেস্টাইনের অধিকারের পক্ষে কথা বলে আসছেন। এসবের প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার সংগঠন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো তার আটকের নিন্দা জানায় এবং অবিলম্বে মুক্তির দাবি তোলে।

হামদির পরিবার ১০ নভেম্বর এক বিবৃতিতে জানায়, ক্যালিফোর্নিয়ায় কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার)-এর দায়ের করা মামলায় সরকার সামিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। তিনি শিগগিরই বাড়ি ফিরতে পারবেন। তবে বিস্তারিত তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি। আইসের কাছে মন্তব্য জানতে চাইলে সংস্থাটি পূর্বে প্রদত্ত বিবৃতি পুনরুল্লেখ করে। সেখানে বলা হয়, ২৪ অক্টোবর তার ভিসা তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করা হয় এবং এরপর তাকে অবৈধ অবস্থান হিসেবে আটক করা হয়।

আটকের আগে হামদি ক্যালিফোর্নিয়ায় কেয়ারের এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন এবং পরে ফ্লোরিডায় আরেকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তার স্ত্রী এবং কেয়ার দাবি করে, সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই তাকে আটক করা হয়েছে। কেয়ারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জটিল আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি না হয়ে তিনি স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে সম্মত হয়েছেন। আইসের অভিযোগ অনুযায়ী, ভিসা বাতিলের পর তার উপস্থিতি ভিসা ওভারস্টে বলে গণ্য হয়, যদিও ভিসা বাতিল করা হয়েছিল কোনো আগাম নোটিশ ছাড়াই। কেয়ার-ক্যালিফোর্নিয়া শাখার প্রধান হুসাম আইয়ালুশ বলেন, সামির প্রকৃত অপরাধ হলো ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে সত্য কথা বলা। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা কত সহজেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কাছে তুচ্ছ হয়ে যেতে পারে-সামির ঘটনা তারই উদাহরণ। তিনি আরো বলেন, এই ঘটনা মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখানোর নজির হতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী স্বৈরতান্ত্রিক শাসকরাও এখন দাবি করবে, তারা আমেরিকার উদাহরণ অনুসরণ করছে।

প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, হামদি বৈধ ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। পরে ইসরায়েলপন্থী চরমপন্থীদের উসকানিতে সরকার গোপনে তার ভিসা বাতিল করে এবং তাকে যুক্তরাজ্যে ফিরে যাওয়ার সুযোগও দেয়নি। তার বিরুদ্ধে যে ‘ভিসা ওভারস্টে’ অভিযোগ আনা হয়, তা মূলত সরকারের গোপন ভিসা বাতিল সিদ্ধান্তের ফল। এর বিরুদ্ধে কেয়ার ক্যালিফোর্নিয়া, এইচএমএ ল-ফার্ম ও মুসলিম লিগ্যাল ফান্ড অব আমেরিকা হেবিয়াস কর্পাস আবেদন করে আদালতে চ্যালেঞ্জ করে। যেখানে প্রথম সংশোধনী অধিকার, অর্থাৎ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ন্যায্য প্রক্রিয়া লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়। আদালত এক পর্যায়ে রায় দেন, হামদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার বাইরে সরানো যাবে না এবং তার আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ নিশ্চিত করতে হবে। আইনজীবীরা বলেন, সরকারের আনা অভিযোগের কোথাও কোনো অপরাধ, নিরাপত্তা হুমকি বা সহিংসতার ইঙ্গিত নেই। তবুও সরকারি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে হামদির বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য পোস্ট করা হয়, যা নাগরিক অধিকারের জন্য উদ্বেগজনক এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের দৃষ্টান্ত।

উল্লেখ্য, জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প প্রশাসন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নজরদারি, ভিসা বাতিল এবং প্যালেস্টাইনের পক্ষে মত প্রকাশকারীদের বহিষ্কারের ওপর ব্যাপক কঠোরতা দেখিয়ে আসছে। কিছু ক্ষেত্রে ছাত্র ভিসাধারী ও স্থায়ী বাসিন্দাদেরও দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। কেয়ার যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম মুসলিম নাগরিক অধিকার ও অ্যাডভোকেসি সংগঠন, যার লক্ষ্য ইসলামের প্রতি জন-বোঝাপড়া বাড়ানো, নাগরিক অধিকার সুরক্ষা এবং আমেরিকান মুসলিমদের ক্ষমতায়ন। তাদের মতে, সামি হামদির ঘটনা মার্কিন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং অভিবাসন নীতির মানবিকতার ওপর বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছে।

শেয়ার করুন