ফাইল ছবি
বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মূল এবং প্রধান দায়িত্ব নিরপেক্ষতা বজায় রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান। কিন্তু সরকার প্রধানসহ কিছু উপদেষ্টার বক্তব্য, আচরণ এবং কার্যক্রমে সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা দেশে এবং বিদেশে দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন এমনকি অসংবিধানিক একটি সরকার কোনোভাবেই কয়েকটি রাজনৈতিক দলের স্বার্থে আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষের কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার নৈতিক বা আইনগত অধিকার রাখে না। অসাংবিধানিক একটি সরকার কোনোভাবেই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো মৌলিক সংস্কার জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। বর্তমান সরকার একটি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল হলেও বিদ্যমান সংবিধানের আওতায় অস্বচ্ছ এবং বিতর্কিত উচ্চ আদালতের অনুশাসনের ভিত্তিতে গঠিত। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী ধরা হলেও সরকার ইতিমধ্যেই বৈধতা হারিয়েছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মুক্তির একমাত্র পথ বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে যথাসম্ভব নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনী সরকারের মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান। সরকার তথাকথিত জুলাই সনদ প্রণয়নয়ের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় অর্থ অপচয় করে পরিস্থিতি জটিল করেছে। সরকারের সুস্পষ্ট পক্ষপাত প্রতিভাত হয়েছে বিতর্কিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় উদ্দেশমূলকভাবে অপসারিত আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান এবং মন্ত্রী সাংসদদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া অনুষ্ঠান। আওয়ামী সরকারের শেষ সময়ে ঘটে যাওয়া ধ্বংসযজ্ঞ হত্যাকাণ্ডে তৎকালীন সরকার ছাড়াও নানাপক্ষের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে। জুলাই-আগস্ট ঘটনাবলির পর দেশে অনেক নির্মম হত্যাযজ্ঞ, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বসহ মব সন্ত্রাস হয়েছে। সরকার অনেক অঘটন বিষয়ে নিস্পৃহ থেকেছে। অশুভ শক্তি স্বাধীনতার স্মারক ধ্বংস, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করেও নীরব থেকেছে। কোথাও কোন দৃশ্যমান সংস্কার হয় নি।
সরকারের একপেশে নীতির ফলে এমনকি মূল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য রাজনৈতিক সংঘাত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ জুলাই সনদের অধিকাংশ বিষয়ে অনভিজ্ঞ। কিন্তু চতুর সরকার নিজেদের নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিত করার স্বার্থে নির্বাচন এবং গণভোটকে সমার্থক করে ফেলেছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় কয়েকটি দল নির্বাচনকালে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার জন্য মাঠপর্যায়ে প্রশাসনকে সাজানোর চেষ্টায় লিপ্ত। কিছু বিতর্কিত ব্যক্তি ভারত এবং আওয়ামী লীগ জুজুর ভয় দেখিয়ে মিডিয়ায় সরব। কেন্দ্রে এবং মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন এখনো দুর্বল। সেনাবাহিনীর একটি অংশকে তুলে নেওয়া .হয়েছে। বিপুল পরিমাণ মামলাজটে বিপর্যস্ত বিচার বিভাগ। সরকার কোনো বড় দুর্নীতি অথবা সাড়া জাগানো হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ করতে পারেনি। উপরন্তু কিছু উপদেষ্টা এবং সরকার ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তির দুর্নীতি প্রকাশিত হয়েছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত আহত ব্যক্তিদের নানা অভিযোগ আমলে নেয়া হয়নি।
এমনি যখন পরিস্থিতি তখন তড়িঘড়ি করে শেখ হাসিনা এবং কয়রকজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের কথিত অভিযোগের ভিত্তিতে ডক্টর রায় আগুনে ঘি ঢেলে দিবে সন্দেহ নেই।
আমি তবুও আশাবাদী সরকারের শেষ মুহূর্তে শুভবুদ্ধির উদয় হবে। নিজেদের যথাসম্ভব নিরপেক্ষ রেখে নির্বাচন কমিশনে রেজিস্টার্ড সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন সম্পাদন করবে। জনগণ নির্ধারণ করবে কোন দল দেশ পরিচালনায় জনস্বার্থে নিবেদিত থাকবে। অতি ডান বা অতি বাম রাজনৈতিক গোষ্ঠীর আচরণ বিষয়ে জনগণ অবহিত। বিশেষত তরুণ সমাজ বিগত সময়ের অপশাসন দুর্নীতি বিষয়ে অবগত। আশা করি সরকারের মধ্যে লুকিয়ে থাকা দুরভিসন্ধির অধিকারী ব্যক্তিবর্গ এবং কিছু কৌশলের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে দেশবাসী ভোটের মাধ্যমে বিপ্লব ঘটাবে। সৎ, নিবেদিত সত্যিকার জনবান্ধব ব্যক্তিদের নির্বাচিত করবে।