০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:১৪:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানা যাবে কী
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৯-২০২৩
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানা যাবে কী


বাংলাদেশ এখন কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পরাশক্তিগুলোর শীতল যুদ্ধের বাস্তবতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। অনেকে স্বীকার না করলেও তুলনামূলক স্থিতিশীলতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় দেশটি এখন দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিলন মোহনায় আঞ্চলিক উন্নয়ন হাব। চুলচেরা বিশ্লেষণে বর্তমান সরকারের নানা দুর্বলতা এবং ব্যর্থতা উপস্থাপন করা যাবে। কিন্তু অনেক চ্যালেঞ্জের মুখেও দেশজুড়ে সড়ক, রেল, জলপথের যোগাযোগ ব্যবহার ব্যাপক উন্নয়ন, কৃষি বহুমুখীকরণ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কৃতিত্ব বর্তমান সরকারকে দিতেই হবে। তবে আমলানিয়ন্ত্রিত প্রশাসন পদ্ধতিতে অনিয়ন্ত্রিত দুর্নীতির লাগাম টানতে ব্যর্থতা থাকায় ব্যাপক উন্নয়নের ফসল সুষম বণ্টন হয়নি সর্বস্তরের জনসাধারণের মধ্যে। সর্ষেতে ভূত থাকায় সব পর্যায়ে গড়ে উঠেছে দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী, সুযোগসন্ধানী সামরিক- বেসামরিক আমলা এবং অসৎ রাজনীতিবিদদের মাফিয়া সিন্ডিকেট। আর তাই দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সংকট না থাকা সত্ত্বেও সিন্ডিকেট চাল, ডাল, লবণ, চিনি, পেঁয়াজ, মরিচ, ভোজ্য তেল, মাছ, ডিম, মাংসের বাজারে আগুন ধরিয়ে ফায়দা লুটছে। সরকার প্রধানের আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অনিয়ন্ত্রিত বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ফলে নুন আনতে পান্তা ফুরানো নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের জীবনে অস্বস্তি। সরকারকে জনপ্রিয়তা ধরে রেখে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে হলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আরো অনেক সক্রিয় এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। যেভাবেই হোক সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে অশুভ সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। কিন্তু এখানেও বড় প্রশ্ন, সেটা কী সম্ভব? সে সময়টুকু কী হাতে আছে? সাধারণ মানুষের এ ইস্যু নতুন নয়। করোনাকালীন সময় থেকে বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। সেটা মানুষ মেনে নিয়েছে করোনার জন্যই। এরপর ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ। সেটাও মানুষ মেনেছে। কিন্তু গোটা বিশ্বে যখন ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের সেই প্রভাব অনেক কমে এসেছে, সে মুহূর্তে বাংলাদেশে বিরাজমান নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারের পাগলা ঘোড়ার লাগাম কী কন্ট্রোল করা গেছে? নাকি সেটা ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত। সাধারণ মানুষের হাতেও এক স্মার্ট ফোন। ইন্টারনেট। এটাও বর্তমান সরকারের সাফল্যের অংশবিশেষ। কিন্তু এটাও মানতে হবে এ সুবিধা ব্যবহার করে গোটা বিশ্বের বাজার পরিস্থিতি, বিশ্লেষণ এখন গ্রামগঞ্জের ক্ষেতখামারে কাজ করা ওই মানুষটাও খবর রাখেন। কেউ মুখে বলে দিলেই সেটা সে মানবেন না। তিনি জানেন। তার কাছেও ব্যাখ্যা রয়েছে। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিটা বিভিন্ন কারণে এখন বেশ জটিল। তাই বলে বসে থাকা নয়, কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতি নিচে নামানোর কোনো বিকল্প নেই। না হয় মানুষকে কী মানতে হবে এক কেজি আলুর দাম সরকার ৩৫ টাকা বেঁধে দেওয়ার পরও কেন বাজারে সেই ৫০ টাকাই রয়ে গেল। কেন পেঁয়াজের মূল্য সেই চড়া থেকে গেল। এভাবে ফিরিস্তি দিলে শেষ হবে না। সরকার চাইলে সব পারে, সেটা সাধারণ জনগণও জানে। কিন্তু সে উদ্যোগ কই।   

দ্বিতীয় কাজটি হলো জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকটকে সহনীয় পর্যায়ে রাখা। বিশ্ববাজারে কিন্তু প্রাথমিক জ্বালানির মূল্য আবারও বাড়ছে। উত্তর গোলার্ধে শীত যতই জেঁকে বসবে জ্বালানি তেল, কয়লা, গ্যাস/এলএনজি মূল্য ততই চড়া হবে। ক্রমাগত আমদানিকৃত জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ খাত কিন্তু সংকটে পড়তে পারে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও দেশব্যাপী বিদ্যুৎ সংকট হলে সেটি কিন্তু সরকারের জন্য শুভ হবে না। বৈশ্বিক অর্থনীতির টানাপড়েনের কারণে সৃষ্ট ডলার সংকটের সময়ে জ্বালানি আমদানির জন্য ডলার সংস্থান কিন্তু সহজ হবে না। নিশ্চিত করতে হোম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যেন কয়লা সংকটে না পড়ে। এলএনজি আমদানি যেন ব্যাহত না হয়। একই সঙ্গে জ্বালানি বিদ্যুৎ ব্যবহারে কৃচ্ছ নিশ্চিত করণে মনিটরিং নিবিড় করতে হবে। শিল্পখাতে বিশেষত রফতানিমুখী বিদ্যুৎ খাতে জ্বালানি বিদ্যুৎ সরবরাহে আরো আন্তরিক হতে হবে, জ্বালানি বিদ্যুৎ ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করে জ্বালানি সাশ্রয় করতে হবে। 

কৃষক প্রতিটি ফসলের বাম্পার উৎপাদন করছে। যাতায়াত ব্যবস্থার বৈপ্লবিক উন্নয়ন হওয়ায় উৎপাদনকেন্দ্রসমূহ থেকে দ্রুত সব দ্রব্যাদি সবখানে পৌঁছে যাচ্ছে। এখন কোনো যৌক্তিক কারণ নেই ক্ষণে ক্ষণে কোনো না কোনো কিছুর অস্থির বাজারমূল্যের। 

জনগণ জানেন, সরকারের কিছু সুস্পষ্ট ভ্রান্তনীতির কারণে জ্বালানিনিরাপত্তা ব্যাপক হুমকির মুখে। জ্বালানি বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে কিছু দুর্নীতিবাজ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পেট্রোবাংলার কিছু কোম্পানিকে দুর্নীতির অভয়ারণ্য বানিয়েছে। সরকার প্রধান হয়তো অনুধাবন করছেন কিছু অসৎ পরামর্শকের উপদেশে জ্বালানি-বিদ্যুৎ সেক্টরের পরিচালনায় সঠিক পেশাদারদের পরিবর্তে সুবিধাবাদী আমলাদের প্রাধান্য দেওয়া উচিত হয়নি। এখনো কিন্তু সুযোগ আছে গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতের কিছু চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে উপমাধর্মী ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনগণের আস্থা অর্জন। মিডিয়ায় বিভিন্ন সময়ে গ্যাস সেক্টরের বেশকিছু দুর্নীতিবাজদের ব্যাপক দুর্নীতির তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বড় দুর্নীতিবাজরা কালো অর্থের বিনিময়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ দুর্নীতি দমন সংস্থাকেও ম্যানেজ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সরকারের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি সুস্পষ্ট করার জন্য প্রমাণিত দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

দেশের অধিকাংশ মানুষ, কিন্তু সরকারপ্রধানকে এখনো আস্থার কেন্দ্রবিন্দু মনে করে। কিন্তু সরকারের অনেক মন্ত্রী, সাংসদ, আমলাদের বিষয়ে জনমনে অনেক ক্ষোভ আছে। নিঃসন্দেহে সরকারপ্রধান বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তৃণমূলের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার আঁচ পাচ্ছেন। নির্বাচনের আগেই জনগণ জনঘনিষ্ঠ বিষয়গুলোর সমাধান আশা করে। সরকারের জন্য কিন্তু তৃণমূলে সম্পৃক্ততাবিহীন বিরোধীদল কোনো সমস্যা না। সমস্যা হলো নিজেদের দল এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কিছু নেতা-নেত্রীর জনবিচ্ছিন্নতা। সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই কিছু জনঘনিষ্ঠ কার্যক্রম দৃশ্যমান হওয়া  জরুরি।

শেয়ার করুন