হঠাৎ করে জাতীয় পার্টি (জাপা) নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কয়েকটা দিন ঝড় বহে গেলো। তবে এই ধরনের ঝড়ের নেপথ্য নিয়ে নানান কানা-ঘুষায় বাতাস ভারি হচ্ছে।
মূল ঘটনা কি
রাজধানীর কাকরাইলে সম্প্রতি জাতীয় পার্টি (জাপা) ও গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গণমাধ্যমের খবরে দেখা যায় যে, জাপার কার্যালয়ের সামনে দিয়ে গণ অধিকার পরিষদের একটি মিছিল যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিপেটায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এব্যাপারে গণঅধিকার পরিষদ নেতারা গণমাধ্যমে বলেছের, তারা মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় জাপার নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালান। তবে জাপা বলেছে, মিছিল নিয়ে এসে জাপার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালান গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা। এরপর বলা হয় যে, জাপার হামলার প্রতিবাদে রাত সাড়ে ৯টার দিকে গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ের সামনে সভাপতি নুরুল হক নুরসহ নেতা-কর্মীরা সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এতে সভাপতি নুরুল হক নূরসহ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। নুরুল হক নূর গুরুতর আহত হয়েছেন। নুরসহ ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রতিক্রিয়া কি
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বতীকালীন সরকার। এর পাশাপাশি নুরুল হক নুরের ওপর হামলা এবং গুরুতর আঘাতের ঘটনা তদন্তের জন্য তদন্ত কমিশন গঠন করেছে সরকার। এদিকে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একইসঙ্গে নুরের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে সরকারের কাছে ঘটনার আইনসম্মত তদন্তেরও দাবি জানান তিনি। অন্যদিকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
আসলে কি
নুরুল হক নুরের ওপর নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অনেকই। তবে তার ওপর হামলা আসলে কারা কারা করেছে তা অস্পস্ট। পুরো বিষয়টি নিয়ে এখন রাজনৈতিক মহলে নানান ধরনের কথা শোনা যায়। কেউ কেউ বলছেন, একটি ইসলামী দল অনেক দেন-দরবার করে বিএনপি’র হাইকমান্ডের কাছ থেকে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো ধরনের কূলকিনারা করতে পারেনি। বিএনপি’র কাছে ওই ইসলামী দলটি সংসদে তাদেরকে প্রধান বিরোধী দল হতে আসন ভাগাভাগির ব্যাপারে সমঝোতা করতে চায়। কিন্তু বিএনপি’র একটি শীর্ষ নেতা মনে করেন এভাবে বিএনপি কোনো দলকে আসন ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে রাজনৈতিক সমঝোতায় গেলে ইমেজ সঙ্কটে পড়তে হতে পারে। অন্যদিকে অনেক ক্ষেত্রে বিতর্কিত ওই ইসলামী দলটিকে এখন বিএনপি আস্থায়ও নিতে পারছে না। বিএনপি’র শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগে ব্যর্থ হয়ে তারা একটি একটি পরামর্শ নেয়। তাহলো ওই ইসলামী দলটি যেনো জাতীয় পার্টির সাথে আসন ভাগাভাগি করে সমঝোতায় যায়। বিএনপি’র এক শীর্ষ নেতারা পরামর্শ ছিল ওই ইসলামী দলটি কোনোভাবেই জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসলে বসতে পারবে না। সেক্ষেত্রে তারা জাপা’র সাথে সমঝোতা করে একটি সুরাহা করে নিতে পারে। অন্যদিকে এমন খবর চলে যায় নুরুল হক নুরসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ইমেজে গড়ে উঠা জাতীয় নাগরিক পার্টির কারণে। কারণ ধারণা করা হচ্ছে বিএনপি’র সাথে এসব দলের সাথে একধরনের সমঝোতা হয়ে বলে শোনা যায়। তাই সেক্ষেত্রে ওই ইসলামী দলটি একেবারে একা একা হয়ে পড়ে যাচ্ছে। এদিকে সেই ইসলামী দলটির সাথে যদিও অন্য কয়েকটি ইসলামী দলের ঐক্য হওয়ার কথা রয়েছে তবে তাও আপাতত খুব জোড়ালো হচ্ছে না।
এদিক থেকে ওই ইসলামী দলটি যদি জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসতেও না পারে তাহলে তাদের রাজনীতি ধুলায় মিশে যাবে বলে তারা মনে করেন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে জাপার সাথে সেই ইসলামী দলটির যেনো কোনো ধরনের ঐক্য বা নির্বাচনী সমঝোতা না হতে পারে তা ক্ষেত্র তৈরিতে জাপা’র প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালানো হয় বলে তারো সন্দেহ। অবশ্য একটি প্রশ্ন ঘুরাপাক খাচ্ছে সর্বত্র। তাহলো কেনো শুধুমাত্র গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের ব্যানারে কেনো এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে কিংবা কি কারণে সেখানে তারাই উপস্থিত হলো তা রহস্যাবৃত। তবে ওই দিনে এমন ঘটনা সারা দেশে একটি থমথমে পরিস্থিতির ক্ষেত্র তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল তা ঠিক।
শেষ কথা
কারো কারো কারো হিসাবে জাপার কার্যালয়ে হামলার ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষ পাল্টা সংঘর্ষই নয় এর পেছেনে আছে অনেক কিছু। কারো কারো মতে, ওপরে ওপরে সংঘর্ষ পাল্টা সংঘর্ষ কিংবা দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবির পেছনেও আছে রাজনৈতিক খেলা। কারো কারো মতে, আসলেই কি দলটিকে নিষিদ্ধের দাবিতে কেউ মাঠে নেমেছিল না কৌশলে তাদের বরণ করে ভবিষ্যতে নতুন খেলার একটি বড়ো ক্ষেত্র তৈরি করতে চাইছে কেউ-এমনটাই মনে করেন অনেকে।