বিশ্বখ্যাত ক্বারীদের অসাধারণ তেলাওয়াত আর দ্বীনি আলোচনার মধ্য দিয়ে নিউ ইয়র্কে উদযাপিত হয়েছে সিরাহ্ কনফারেন্স ২০২৩ ।
আইটিভি ইউএসএ’র আয়োজনে শুক্রবার সন্ধ্যায় লাগোর্ডিয়া প্লাজা হোটেলে ওই আয়োজনে উপস্থিত থেকে কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন বিশ্বখ্যাত ক্বারী শাইখ আহমেদ বিন ইউসুফ আল আজহারি, মিশরের বিখ্যাত ক্বারী শেখ হাসান সালেহ, ইন্দোনেশিয়ার ইমাম শামসি আলী, মিশরের শাইখ ওয়ালিদ আলবাট্রাউইশ, ইমাম ড. জাকির আহমেদ, ক্বারী নজরুল ইসলাম, ক্বারী ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ইকবাল হুসেইন জীবন ও ক্বারী আব্দুল্লাহ রাদনসিস।
আইটিভি ইউএসএ’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ইমাম ড. শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নেতা, নেতৃত্ব, বিশ্বাস ও অবিশ্বাস প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার, স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ। তিনি বলেন, যে দেশটি যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছি সেই দেশটির ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। ৫৩ বছর ধরে মুসলমানদের ওপর যে জুলুম চলে আসছে তা বর্ণনাতীত। ৯০ ভাগ মুসলমানের ওপর নিষ্পেষণ এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছে, আজ আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা নতুন বছর বাংলাদেশে শান্তির বাতাস প্রবাহিত হবে ইনশাল্লাহ। এটি আল্লাহই করবেন। সব পরিকল্পনার মালিক তিনি।
স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ তার বক্তব্যে একজন নেতা কেমন হওয়া দরকার সে বিষয় তুলে ধরে বলেন, ইমান আকিদার ভিত্তিতেই একজন প্রকৃত নেতা তৈরি হতে পারেন এবং সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারেন। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র কোরআন হাদিস পড়া ও শেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, এর জন্য সমসাময়িক জ্ঞান বিজ্ঞান ও ধী শক্তির প্রয়োগ অপরিহার্য। আমাদের দায়িত্ব যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকা।
আবু জাফর মাহমুদ তার বক্তব্যে আরো জানান, এই আয়োজনগুলো আমাদের ইমান আক্কিদা, দেশপ্রেম ও বিশ্বাস সুরক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের সমাজে বহুদিন ধরেই রাজনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে নাস্তিকতার অনুশীলন চলে আসছে। শুধু অনুশীলন নয়, রীতিমত নাস্তিকতা কায়েমের অভিযান। এই অভিযান চালাতে গিয়ে মানুষের এথিকস ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর পর্যায়ক্রমে আঘাত করে সমাজটাকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। নাস্তিকের সংখ্যা বাড়ানোই ওই চক্রের বড় উদ্দেশ্য। এই নাস্তিকতা আমাদের দেশের কমিউনিস্টদের ওপর ভর করেছে। সেক্যুলারিস্টদের ওপর ভর করেছে। সব সেক্যুলারিস্ট কমিউনিস্ট নয়। পাশাপাশি ওরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ৯০ ভাগ মুসলমানকে রাজনৈতিকভাবে ধংস করার তৎপরতায় লিপ্ত। এরা নাস্তিকতার ভেতর দিয়ে একটি নেতৃত্ব সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। এতে অনেকটা সফলও হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সমাজের শান্তি নষ্ট হয়েছে। শেকড়ের সঙ্গে উপরিভাগের দূরত্ব বেড়েছে।
তিনি বলেন, সমুদ্রসীমা ছাড়াও ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে শান্তি স্থিতিশীলতার জন্য আমাদের করণীয় নির্ধারণের সময় এখন। আমরা মনে করি দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম। তারা ইসলাম ধর্ম ও সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী। এর বাইরে রয়েছে হিন্দু সংস্কৃতি, বৌদ্ধ সংস্কৃতি, খৃষ্টান সংস্কৃতি। ওখানে ৯০ ভাগ মুসলমানের ওপরে সামান্য কিছু মানুষ ও আদিবাসীর প্রভাব বিস্তারের বল প্রয়োগ করে চলেছে ক্রমাগত।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, ১৯৪৭ এ ভারত বিভক্ত হয়েছে ধর্মবিশ্বাসের ওপর ভর করে। এই অঞ্চলটা মুসলমান অধ্যুষিত। চিহ্নিত রাজনীতিক অপশক্তি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানতদরে ওপর জুলুম করে চলেছে। আলেমদের হত্যা করেছে। মাদ্রাসাগুলোকে ধংস করার জন্য কাজ করেছে। ঐতিহ্যবাহী সামাজিক মূল্যবোধ ধংস করে চলেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ইসলাম ধর্ম শিক্ষাকে সরিয়ে দিয়েছে। মুসলমানদেরকে যেকোনো অজুহাতে সন্ত্রাসী হসেবে দুনিয়াব্যাপী প্রচার করেছে। এত চাপের মুখে থেকেও মুসলমানরা আত্মসমর্পন করেনি। সন্ত্রাসের মধ্যে যায়নি। ইসলাম সন্ত্রাসবিরোধী ও শান্তির ধর্ম। ইসলাম শব্দটির অর্থও শান্তি।
তিনি বলেন, ইসলাম বিস্তার হয়েছে মুসলমানদের ভালো ব্যবহার, আন্তরিক আচরণ ও ইমানী শক্তির মধ্য দিয়ে। বহুভাবে মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী পরিণত করার করার চেষ্টা করা হয়েছে। নাস্তিকতা পন্থীদের এই তৎপরতা একদিনের জন্যও সফল হয়নি। ওরা শুধু সামাজিক সন্ত্রাস করেছে তা নয়। রাজনীতি ও রাষ্ট্রযন্ত্র দখলে নিয়ে বিশ্বময় বিষবাষ্প ছড়িয়ে চলেছে।
এই অবস্থায় কেমন নেতৃত্ব দরকার। কেমন রাজনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা দরকার, তার পথ বের হতে হবে। এক্ষেত্রে আমার বিশ্বাস সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে সন্তুষ্ট রাখার দরকার। তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষা করতে গিয়ে তাদের শান্তির কথা আগে ভাবতে হবে। তাদেরকে নিরাপদে রেখে, একই সঙ্গে অন্যদেরকেও নিরাপদে রেখে রাজনীতিচর্চা চালু করা দরকার। এর জন্য যাদের জ্ঞানভান্ডার গভীর তেমন নেতৃত্ব সামনে আসা দরকার। যে নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন মহানবী (সা.)। রাষ্ট্রযন্ত্রে রাসুল (সা.) এর আদর্শের প্রকৃত অনুসারি নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা দরকার।
সিরাহ কনফারেন্সে অনেকের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ড. ওয়াহিদুর রহমান, আব্দুল আজিজ, শিশু অধিকার কর্মী ফাতিহা আয়াত প্রমুখ।
সিরাহ কনফারেন্স উপলক্ষে লাগোর্ডিয়া প্লাজায় ছিল ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীর আয়োজন। অনুষ্ঠানের অতিথিবৃন্দ ওই প্রদর্শনী ঘুরে ঘুরে দেখেন।