বিশ্বের সব আগ্রাসন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কবিদের প্রতিবাদী শব্দাবলি উচ্চারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। সব মানবিক বিপর্যয় রুখে সত্যের পক্ষেই এগোতে হবে মানুষকে। নিউইয়র্কে কবিতা পাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠানে এমন কথাই উচ্চারিত হয় কবি ও আলোচকদের মুখে।
উত্তর আমেরিকার বাংলাদেশি কবি ও লেখকদের আয়োজনে গত ২২ অক্টোবর রবিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্লাজার মামা’স পার্টি হলে এই আয়োজনে স্মরণ করা হয় সদ্য প্রয়াত কবি আসাদ চৌধুরী ও জীবনানন্দ দাশকে।
কবি কামরুজ্জামান বাচ্চুর উপস্থাপনায় মঞ্চে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পজন ও অভিনেতা আহমেদ শরীফ, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক ড. মহসিন আলী, কবি ফকির ইলিয়াস ও কবি কাজী আতীক।
শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মামুনুর রশীদ মামুন। আলোচনায় অংশ নিয়ে ‘সাহিত্য একাডেমি’ নিউইয়র্কের পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, একজন কবি কিংবা লেখকের সব লেখাই কিন্তু আমরা পড়ি না। পড়ার সুযোগও হয় না। কিছু লেখা আছে, যা ওই লেখককে কালে কালান্তরে বাঁচিয়ে রাখে। কবি আসাদ চৌধুরী কিংবা কবি জীবনান্দ দাশ তাদের কালজয়ী কবিতার মধ্যেই বেঁচে থাকবেন। তিনি বলেন, একজন লেখককে পথ তৈরি করে যেতে হয়। মানুষকে এগিয়ে নিতে লেখকের দায়িত্ব অপরিসীম।
অনুষ্ঠানে কবি আসাদ চৌধুরীর কবিতা আবৃত্তি করেন আহমেদ শরীফ ও সেলিম ইব্রাহিম। ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারবিশের কবিতা ‘পরিচয়পত্র’ আবৃত্তি করেন কবি ফারহানা ইলিয়াস তুলি।
অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ড. মহসিন আলী, সমাজসেবক মিয়া জাকির, সাইদুর রহমান, কাজী রবিউজ্জামান, শফিউল আজম, শিল্পী মেহেরুন আহমেদ, হাকিকুল ইসলাম খোকন প্রমুখ। কবিতা পাঠে অংশ নেন আবু তাহের চৌধুরী, সুধাংশু মণ্ডল ও মাহবুবুর রহমান।
আলোচনা ও কবিতা পাঠ করেন কবি কাজী আতীক। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে যে গণহত্যা চলছে এর প্রতিবাদ করা সবার দায়িত্ব। আমরা যদি খামোশ থাকি তাহলে সময়ের কাছে দায়ী থেকে যাবো।
সর্বশেষ বক্তা হিসেবে কথা বলেন কবি ফকির ইলিয়াস। তিনি বলেন, আমরা একটি চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। গাজায় একটি হাসপাতালে বোমা হামলা করা হয়েছে। মিশরের সীমান্তে ত্রাণবাহী ট্রাক পৌঁছতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি গাজায় চরম আগ্রাসন দেখিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। এটা সুস্পষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধ। সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। আমাদের এর প্রতিবাদ অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি আসাদ চৌধুরীর ‘বারবারা বিডলারকে’ কবিতাটি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ভিয়েতনামে মার্কিনি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফ্লোরিডার একজন কিশোরী স্কুলছাত্রী ১৯৬৭ সালে একটি কবিতা লিখেন। একটি চার্চের ম্যাগাজিনে কবিতাটি ছাপা হওয়ার পর, মার্কিন প্রশাসন কবিতা ও ম্যাগাজিনটি নিষিদ্ধ করে। বারবারার ওই কবিতাটি পড়ে ভিয়েতনামের বিখ্যাত কবি হুই কান ভিয়েতনামি ভাষায় আরেকটি কবিতা লিখেন। কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষ্যমতে কবি আসাদ চৌধুরীর ‘বারবারা বিডলারকে’ কবিতাটি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে লিখিত। এটি ওই সময়ে আবদুল গাফফার চৌধুরী সম্পাদিত মুক্তিযুদ্ধের মুখপত্র ‘জয় বাংলা’তে ছাপা হয়। ১৯৮৩ সালে আসাদ চৌধুরী তার ‘যে পারে পারুক’ কাব্যগ্রন্থে কবিতাটি সংকলিত করেন। কবি ফকির ইলিয়াস বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এটি একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ আগ্রাসনবিরোধী কবিতা। তিনি বলেন, যার যার অবস্থান থেকে আমরা প্রতিবাদ করবোÑএটাই হোক আমাদের প্রত্যয়।
অনুষ্ঠানে জীবনানন্দ দাশ ও আসাদ চৌধুরীর কবিতা আবৃত্তি করেন কবি কামরুজ্জামান বাচ্চু।
অনুষ্ঠানের শেষে সমবেত কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন মেহেরুন আহমেদ ও জয়গুন নেসা। আয়োজন উপলক্ষে কবি কামরুজ্জামান বাচ্চুর সম্পাদনায় ‘অক্ষর’ নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়।