২১ মে ২০১২, মঙ্গলবার, ০৯:৪০:৫৯ পূর্বাহ্ন


ঐক্য পরিষদের সেমিনার
নির্বাচন মানেই সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের উৎসব
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১২-২০২৩
নির্বাচন মানেই সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের উৎসব


‘স্বাধীনতার ৫২ বছর : ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-নারী ও সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা বন্ধ করো’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সেমিনারটি গত ১৬ ডিসেম্বর জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। 

সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন মানে হলো সংখ্যালঘু নির্যাতনের উৎসব। ভোট দিলেও বিপদ, আবার না দিলেও বিপদ। যে বা যারা হারবে তাদের দাবি হলো হিন্দুরা তাকে বা তাদেরকে ভোট দেয়নি। সংখ্যালঘু হিন্দুরা ভোটাধিকার হারিয়েছে অনেক আগেই, যখন থেকে ভোটার আগে তাদের বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন প্রার্থীরা বা তাদের সমর্থকরা বলে আসতো যে ভোট বুথে না গেলে ধরে নেবো আপনার ভোট পেয়ে গেছি-এটা হলে বিএনপি, জামায়াত এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী অন্য দলগুলোর। আর আওয়ামী লীগ হারলে হিন্দুরা ভোট না দেওয়ার কারণে। বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই হিন্দু নির্যাতনের ছাড়পত্র। কোনো সরকারের আসলে এসব নির্যাতনের বিচার হয়নি বা কোনো সরকার বিচার করেনি। 

তারা আরো বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি, জামায়াত হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের বিচার করেনি এবং আওয়ামী লীগ শাহাবুদ্দিন কমিশন করে হিন্দুদের ধোঁকা দিয়েছে, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে শাহাবুদ্দিন কমিশনের রিপোর্ট ধামাচাপা দিয়ে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা সরকার এবং বিরোধী দলের আক্রোশের শিকার : নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় এবং পরে নির্যাতনের জন্য সরকার এবং বিরোধীদল দায়ী। 

তারা বলেন, সংখ্যালঘুরা স্বাধীনতার পর সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী নির্বাচন নিয়ে ভীত এবং যা ঘটেছে তা মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। এটি অপরিহার্য যে প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা কেবল এই অর্থহীন সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে জনসমক্ষে বিবৃতি দেবেন না, তবে নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় এবং পরে সরকার ও বিরোধীদলের সহিংসতার জন্য দায়ী দলীয় সদস্যদের নিন্দা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং রাষ্ট্রীয় বিচারের ব্যবস্থা করবেন। বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্র গত ৫২ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য, সহিংসতা ও নিপীড়নের শিকার হিন্দু সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।

সেমিনার থেকে বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। সুপারিশসমূহ: ১. নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় এবং পরে হিন্দু মহিলা, মেয়ে, বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং মন্দিরগুলোকে লক্ষ্য করে সহিংস জনতাকে লক্ষ্যবস্তু করা থেকে বিরত রাখতে সংখ্যালঘু এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো। ২. ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সমান অধিকার সুরক্ষার সাংবিধানিক গ্যারান্টি সমর্থন করার জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকে যথাযথভাবে মোকাবিলা করা। ৩. নির্বাচনী সহিংসতা থেকে হিন্দু সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ/হামলার একটি সম্পূর্ণ, নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন তদন্ত শুরু করা এবং এই তদন্তের ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশ করা। ৪. সমাজে বা যে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে এই হামলার সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা/হামলার শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা। 

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সুপারিশ: নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় এবং পরে সহিংসতা থেকে সংখ্যালঘুদের রক্ষার জন্য তাৎক্ষণিক এবং সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিশ্চিত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত জিওবির সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করা। ২. হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধ করতে, সহিংসতার শিকার অতীতের ভুক্তভোগীদের পুরোপুরি পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে এবং হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত জিওবিকে সমর্থন করা। 

প্যাস্টর জেমস রায়ের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের অন্যতম সভাপতি নয়ন বড়ুয়া, বোর্ড অব গভর্নরের সদস্য গীতা চক্রবর্তী, উমা চক্রবর্তী, সাংগঠনিক সম্পাদক বরুন পাল, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট ও ওম শক্তি মন্দিরের সাংস্কৃতিক সম্পাদক সুতিপা চৌধুরী, অতিথি রানা আহমেদ এবং সংগঠনের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি অশোক কে কর্মকার। সেমিনার পরিচালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক স্বপন দাস ও উমা চক্রবর্তী।

শেয়ার করুন