০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৬:৩০:২২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


গুমোট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে নির্বাচন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০১-২০২৪
গুমোট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে নির্বাচন


গুমোট এক পরিবেশে নির্বাচনী হাওয়া বইছে বাংলাদেশে। সব আয়োজন সম্পন্ন। ৭ জানুয়ারি রোববার বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন, সে সময়সূচি ধরে রেখে প্রার্থীদের অনেকেই ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের কাছে। ৩০০ আসনের সবার চিত্র এক না। শক্ত স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় অন্তত অর্ধেকের বেশি সিটে প্রার্থীরা নির্ভার। এসব প্রার্থীর আর তেমন নির্বাচনী কর্মকাণ্ড করছেন না। তাকে আর ছুটতে হচ্ছে না একের পর এক এলাকা। কিছু আসনে অভ্যন্তরীণ অন্তঃদ্বন্দ্বের সুযোগে যেসব স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন, তাদের কাছে মূলত নাজেহাল কতিপয় আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্তরাও। তবে সেটাও শেষ পর্যন্ত হালে পানি মিলবে বলে মনে হয় না। কিছু ব্যতিক্রম হবে এটা স্বাভাবিক, নতুবা একটা এক তরফার নির্বাচন শুদ্ধ দেখানোর কোনো উপায় থাকবে না। ইতিমধ্যে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও সমমনা দলসমূহ এ নির্বাচনকে ‘আমি ও ডামি’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে। বাস্তবেও এর প্রতিফলন। 

২০১৮ সালের নির্বাচনের পর প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টির সঙ্গে যে সমঝোতা। সেখানেও ঝামেলা তৈরি হয়েছে। নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করা হলেও ওইসব এলাকায় আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দাপটে কোণঠাসা রাজপথ থেকে দূরে থেকে রাজনীতি করে যাওয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দাপটে নাজেহাল হওয়া জাতীয় পার্টির কেউ কেউ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোরও ঘোষণা দিচ্ছেন অভিমান, রাগ ও ক্ষোভে। তবে বিভিন্ন দলের যারা নৌকা প্রতীক গ্রহণ করেছেন তাদের অবস্থান তুলনামূলক ভালো। কিন্তু লাঙ্গল প্রতীকে পোস্টারে যতই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী লেখা থাক না কেন, ওসব থোড়াই কেয়ার ক্ষমতাসীন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর। এমনকি লাঙ্গলের প্রতীক নিয়ে প্রচারণাতেও মানুষ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখা গেছে। যেমনটা ঢাকা ১৮ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেরিফা কাদের। উক্ত এলাকায় তার কখনই প্রচার প্রচারণা, গণসংযোগ কিছুই ছিল না। এবার এখানে তিনি প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগ তার মনোনয়ন দেওয়া প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এখানে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী তোফাজ্জল ও খসরু দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। শেরিফা ক্রমশই আড়ালেই থেকে যাচ্ছেন। মাঠে নেমে তার প্রচারণাটাও তেমন নেই বললে চলে। এ একটা চিত্র মাত্র। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রায় সর্বত্রই দৃশ্যপট এমনই। 

একটি গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে একদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান কীভাবে সম্ভব এটা নিয়ে জনমনে চিন্তা। এজন্য খেসারত গুনতে হবে কি না সে শঙ্কায় গোটা দেশ। যে কোনো আসনের দিকেই তাকালে দেখা যাবে আওয়ামী লীগ অথবা আওয়ামী লীগের সমর্থিত বা আওয়ামী লীগের কোনো না কোনো দলীয় নেতা স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনী মাঠে অবশ্য এখন আর কোনো বিরোধীদল বা পক্ষ নেই। জাতীয় পার্টির মহাসচিবও তার পোস্টারে আওয়ামী লীগ সমার্থিত যখন লিখে দিয়েছেন, তখন বিরোধীদল আর কই। বাম ঘরানার যারা সিট খসাতে পেরেছেন, তারা নৌকা প্রতীকই নিয়েছেন, যেমনটা হাতুড়ি নিয়ে নির্বাচন করা রাশেদ খান মেনন এবং হাসানুল হক ইনু যেমন প্রতীক নিয়েছেন নৌকা। ফলে সব নিজেরা নিজেরাই বা আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগই। 

২০১৪ ও ২০১৮তেও এমনই প্রকারান্তরে। বারবার এমন পরিস্থিতি এড়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশসমূহ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছেন। ভিনদেশিদের সে প্রত্যাশা বা পরামর্শ বাতাসে উড়িয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এমন নির্বাচন। 

জনমনে সে প্রশ্ন তাহলে ভিনদেশিদের কী এমন নির্বাচন দিয়ে ম্যানেজ করা সম্ভব? তবে এ সংক্রান্ত একটা মত প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে। আর সেটা হলো ভারত। একপক্ষ মনে করছেন, অবশ্যই সম্ভব, যদি ভারত পাশে থাকে। বাংলাদেশের খুব কাছের বন্ধু ভারত। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় বাংলাদেশে অনেক কিছু ঘটে। ভারত সব ম্যানেজ করবেন বা ভারত যা চাইবে সেটার বাইরে যেয়ে বিশ্বের অন্য কোনো দেশের কোনো কিছু করার সক্ষমতা নেই, এটা এখন জনমনে ব্যাপক বিস্তার করতে শুরু করেছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশসমূহ যখন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য- অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করে লম্ফঝম্ফ করে আসছিল, ভারত তখন ছিল নিশ্চুপ। পরিশেষে ভারত যে কথাটা বলেছে সেটা হলো বাংলাদেশে যে নির্বাচন এটা তাদের অভ্যন্তরীণ। জনগণই ঠিক করবে সে দেশের নির্বাচন কেমন হবে। আপাতদৃষ্টিতে ওই কথার যৌক্তিকতা রয়েছে। কিন্তু জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন বা জনগণের প্রত্যাশার একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন কী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন ভারতের কোনো নির্বাচনের মানদণ্ডে যথার্থ ছিল, সেটা তারা কখনো বলেনি, বরং নির্বাচনকে সাপোর্ট করে গেছেন। তার অর্থ যথার্থ। মানুষের আস্থাহীনতা সেখানেই। যে নির্বাচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ সেটাও বিগত সময়ের একতরফা এক নির্বাচনের প্রেক্ষাপট। ফলে বিগত নির্বাচনগুলো যেমনটা ভারতসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা মেনে নিয়েছে, সাপোর্ট করেছে এবারও সেভাবে বহির্বিশ্বের সবাই যথাযথ মেনে নেবে কি না সেটাই প্রশ্ন। গুমোট পরিবেশটা সেখানে।

বাংলাদেশের নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষই ঠিক হবে, দেশের সংবিধান দ্বারা। সেটা যদি বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হতো চীন, রাশিয়ার বা ইউরোপীয় বা অর্থনীতিতে শক্তিশালী কোনো দেশের ন্যায়। তাহলে সেটা যথার্থ। বাংলাদেশকে যখন নির্ভর করতে হয় ওই সব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্রদের দয়া ও করুণার ওপর, তখন বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের পরামর্শটা মানা জরুরি। যদি তারা মনেপ্রাণে চায় তাহলেই। 

বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই ওইসব দেশের করুণার ওপর নির্ভরশীল এ অর্থে যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও শ্রমবাজার থেকে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের প্রধান উৎস ওইসব দেশ। ভারত থেকে শুধু আমদানিই হয়, রফতানি খুবই সামান্য। কারণ বাংলাদেশ থেকে কিছুই নেয় না তারা। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা প্রাপ্তিতে ঘাটতি হলে যেখানে ত্রাহি ত্রাহি শুরু হয় রাষ্ট্রপরিচালনায়, সেখানে বাংলাদেশকে অনেকের পরামর্শ মেনে চলায় একান্ত বাধ্যগত। এর বাইরে যাওয়ার অর্থ জনসাধারণের জন্য ক্ষতির কারণ। 

এসব বিষয়গুলো এখন তৃণমূলের সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে। চায়ের কাপে ঝড় তুলে এ আলোচনা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এক্ষেত্রে কান পাতলে প্রথমেই যে কথাটা শোনা যায়, সেটা করোনাকালীন সহায়তা। বাংলাদেশ যখন ভারত থেকে টিকা ক্রয়ের জন্য অগ্রীম অর্থ দিয়েও চুক্তি হওয়া টিকা না পেয়ে হতাশ। বন্ধ করে দিয়েছিল ভারত সে টিকা, যা অদ্যাবধিও পাওয়া যায়নি। তখন মানুষ বাঁচাতে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে থাকারা অস্থির হয়ে ওঠেন। ওই মুহূর্তে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এক এক করে ১২ কোটি টিকা তারা বিনা পয়সায় প্রদান করে। বাংলাদেশি মানুষ সে টিকা পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। যেসব শ্রমিক মৃত্যু ভয়ে বিদেশের চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরেছিলেন, তারাও টিকা গ্রহণ করে আবার বিদেশ ফিরতে পেরেছিলেন। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আবার সচল হওয়া শুরু হয়। 

মানুষ সে আলোচনাটাই করছে। করছে কক্সবাজারে আশ্রয় দেওয়া ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গার ভরণ-পোষণে কাদের অর্থপ্রাপ্তি নিয়ে রোহিঙ্গাদের ঠিকমতো রাখা যাচ্ছে। সেখানে ভারত, চীনের অবদান কতটুকু সেটাও আলোচনায় বেরিয়ে আসছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্নের উদ্রেক, বাংলাদেশের সেসব বন্ধুপ্রতিম দেশসমূহের পরামর্শ, প্রত্যাশা উড়িয়ে দেওয়া কতটা যৌক্তিক। নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর যদি ওইসব দেশ এমন নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বসে, তাহলে কী হবে অবস্থা। দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে। এগুলো ভেবেই মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে, এমন নির্বাচনের আগ ও পর নিয়ে-সেটা এখন থেকেই। 

শেয়ার করুন