০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০২:১৩:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


সরকারকে মানুষের জীবনের মূল্য দিতে শিখতে হবে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৩-২০২৪
সরকারকে মানুষের জীবনের মূল্য দিতে শিখতে হবে সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ


বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আগে দেশের সরকারকে সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য দিতে শিখতে হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবীদ সমিতি (বেলা) এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)’র যৌথ উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হল, ঢাকায় “ভবন বিপজ্জনকতায় আচ্ছন্ন নগরী : প্রেক্ষিতে করণীয়” শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সম্প্রতি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি ভবনে অগ্নিদুর্ঘটনার মতো নিষ্ঠুর দৃষ্টির প্রত্যক্ষ যেন আর প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে না হয় সেই জন্য তার (প্রধানমন্ত্রীর) নিকট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। কার দোষে এধরনের মৃত্যু এড়ানো গেলোনা তা খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানান। শুধু সংশ্লিষ্ট সংস্থ্যাগুলোর সদস্যদের নিয়ে যেন ট্রাস্কফোর্স না করে বরং এতে স্থপতি, নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবিদদের সমন্বয়ে করা হয় তার দবি জানান। কাদের স্বার্থে বিল্ডিং কোর্ড অমান্য করা হয় তাদেরকে চিহ্নিত করার দাবি জানান।

বাপা’র সভাপতি, অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপা’র সহ-সভাপতি, স্থপতি ইকবাল হাবিব। অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য রাখেন বাপা’র সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভণর ড. আতিউর রহমান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)’র সভাপতি, পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান, বিআইপি এর সাবেক সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন, সাধারণ সম্পাদক, পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক, অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, বেলার আইনবীদ এড. হাসানুল হক মান্না প্রমুখ। এতে উপস্থিত ছিলেন বাপা’র সহ-সভাপতি মহিদুল হক খান, যুগ্ম সম্পাদক, হুমায়ুন কবির সুমন, নির্বাহী সদস্য জাভেদ জাহান, জাতীয় কমিটির সদস্য হাজী শেখ আনসার আলী, তিতলি নাজনিন, শাকিল কবির, আরিফুর রহমানসহ বাপা’র অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। 

মূল প্রবন্ধে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে বাংলাদেশে নগরায়ণের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ (এসডিজি)-১১ অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, অভিঘাতসহনশীল এবং টেকসই নগর ও জনবসতি গড়ে তোলার কথা বলেছে। কিন্তু এখনো আমরা একটি নিরাপদ এবং অভিঘাত সহনশীল নগরী গড়ে তুলতে পারিনি। নগরে ঘটিত অগ্নি দুর্যোগ আজ বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে। একটি রেস্তোরাঁ স্থাপনে ১০টি সংস্থার প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনাপত্তিপত্র, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেস্তোরাঁ লাইসেন্স, সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের লাইসেন্স নিবন্ধন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দোকান লাইসেন্স, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ই-ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ফায়ার লাইসেন্স, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্র।

অধ্যাপক নুরমোহাম্মদ তালুকদার বলেন, এধরনের প্রতিটি অগ্নি দুর্ঘটনায় হতাহতের পিছনে রয়েছে মুনাখোরদের অতি লোভ। তারা যেন কোটি পতি হওয়ার দৌঁড়ে নেমেছে। এতে কে মরলো? তা যেন তাদের দেখার বিষয় না। এই লোভেপিষ্ঠ হয়ে মৃত্যুবরণ করছে সাধারণ মানুষ, আর আসামী করা হচ্ছে সাধারণ কর্মচারিদের, এতে করে প্রকৃত দোষীরা অধোরাই রয়ে যাচ্ছে। তিনি সকলকে সম্মিলিতভাবে এই মৃত্যুপথ থেকে উত্তরণে কাজ করার আহ্বান জানান। 

ড. আতিউর রহমান বলেন, ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। নিরাপত্তার জন্য ডিজিটাল ডাটা বেজ তৈরি করে সকল ভবনের সুবিধা-অসুবিধাগুলো রেটিং করা ও হট লাইন সেবা দ্রুত চালু করার দাবি জানান তিনি।

পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সরকারের সংস্থাগুলোর অবহেলার কারণে দেশের সাধারণ জনগণকে পুড়ে মরতে হচ্ছে। অবহেলাজনিত ও কাঠামোগত হত্যাকান্ড ঘটানো হচ্ছে। আর এর দায়ে আটক করা হচ্ছে খেটে খাওয়া কর্মচারিদের। যা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি সকল কর্মচারিদের মুক্তি দিয়ে প্রকৃত দোষিদের শাস্তির দাবি করেন।

অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, দিনের পর দিন আগুনে এতোগুলো মানুষকে বার-বি-কিউ করে মারা হচ্ছে অথচ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো উদাসিন। এই ভবনে ছিলনা কোন ফায়ার এলাম। যার জন্য আগুন লাগার পরেও অনেকে বুঝতেই পারেনি। তিনি ঢাকার সকল ভবনগুলো জরিপ করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সাইনবোর্ড লাগানোর দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলন থেকে অবহেলাজনিত কারণে ঘটা ভবন অগ্নিকান্ড ও এর হতাহতের বিপরীতে ভবন নির্মাণ, অকুপেন্সি সার্টিফিকেট এবং ব্যবসায়িক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য অনুমোদন প্রদানকারী ১০টি সংস্থাকে দায়ী করে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ এবং ভবন মালিককে “অবহেলাজনিত হত্যাকান্ডের” আসামী হিসেবে গণ্য করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।

শেয়ার করুন