০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:২৯:১২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


দেশকে ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মুক্তবুদ্ধি চর্চার সুযোগ নেই
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৪-২০২৪
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মুক্তবুদ্ধি চর্চার সুযোগ নেই ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এককালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। কিন্তু এখন আর সেই জৌলুস নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সবাই জানতেন মুক্তবুদ্ধির চর্চাকেন্দ্র হিসেবে। কিন্তু এখন এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তবুদ্ধির চর্চার কোনো সুযোগ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হতো। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে শিক্ষকদের নৈতিক স্খলন হলে শাস্তি হতো। কিন্তু এখন শিক্ষকের দলীয় পরিচয়ের উপর নির্ভর করে শাস্তি হবে কিনা।

আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম এর পাশাপাশি ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)’র প্রেসিডেন্ট এবং জিয়া পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি’র ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য। 

দেশ: দেশের শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে আপনার অভিমত কি?

ড. ওবায়দুল ইসলাম: ধন্যবাদ আপনাকে। বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ পরিস্থিতি এক কথায় চরম ভয়াবহ। সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের এমন কোনো অপকর্ম নেই যা শিক্ষাঙ্গনে ঘটছে না। শিক্ষার কোনো পরিবেশ কোথাও নেই। শিক্ষাঙ্গন এখন ধর্ষণের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময় ছাত্রলীগের সোনার ছেলে ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে সগর্বে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়িয়েছে। পরবর্তীতে সেই সেঞ্চুরি মানিক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অফিসার পদে নিয়োগ পায়। সম্প্রতি সেই একই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার ধর্ষণের ঘটনা ঘটলো। তবে ভিন্ন স্টাইলে। বাইরে থেকে লোক এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে এক গৃহবধু ধর্ষণের শিকার হন। অতি সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন। যেখানে সহপাঠীরা হবে সবচেয়ে নিরাপদ সেখানে সহপাঠীর জন্যই জীবন দিতে হলো। তার চেয়েও কলঙ্ক হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নিজেও এই অপকর্মের সাথে জড়িত। প্রক্টর সাহেব তো ঐ একই দলের সদস্য। ক’দিন আগে ভিকারুন্নেসা নূন স্কুলের এক শিক্ষক ধরা পড়ল একই ধরনের অপরাধে। 

বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। শিক্ষার নিরাপদ কোনো পরিবেশ নেই। একটি অপরাধের বিচার না হলে আরো অপরাধ সংগঠিত হতে থাকে। বিচার করবে কার? ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের বিচার করা তো দূরে থাক, অপরাধীরা বরং পুরস্কৃত হয়। ধর্ষণ, ইভটিজিং ছাড়াও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এগুলো তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠনেই ভিন্ন মতের শিক্ষার্থীদের স্থান নেই। একচ্ছত্র আধিপত্য শুধু তাদের সোনার ছেলেদের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে কোনো নিয়োগ, পদোন্নতি, যেকোনো উন্নয়নমূলক কাজে তাদের তদবির আছে। এক কথায় শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশের পরিবর্তে সন্ত্রাসের অভয়ারন্য হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন পরিচিতি পেয়েছে। 

দেশ: কেনো এমন হচ্ছে?

ড. ওবায়দুল ইসলাম : এর কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের একদলীয় শাসনব্যবস্থা। জনগণ ভোট দিয়ে যদি সরকার বা নেতা নির্বাচন করতে পারতো তাহলে জনগণের প্রতি সরকারের জবাবদিহিতা থাকতো, স্বচ্ছতা থাকতো, কিন্তু ক্ষমতায় বসার জন্য যখন জনগণের ভোটের প্রয়োজন হয় না, তখন স্বৈরাচারী বলেন, স্বেচ্ছাচারীতা বলেন, জুলুম বলেন সবকিছু সম্ভব আর ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা যখন দেখে লেখাপড়ার চেয়ে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা য়ায়, বিনা পরিশ্রমে বিত্ত বৈভবের মালিক হওয়া যায়, তখন তারা আর লেখাপড়া করবে কেন? তারা তো মাস্তানী করেই ভালো থাকতে পারে। 

দেশ: আপনি কি মনে করেন রাজনৈতিক প্রভাব আছে শিক্ষাঙ্গনের সাম্প্রতিক পরিবেশ পরিস্থিতির উপর?

ড. ওবায়দুল ইসলাম : শুধু আমি কেনো? এ দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ মনে করেন যে শিক্ষাঙ্গনের বর্তমান অবস্থা শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে। রাজনীতি বলতে বুঝায় দেশ ও জনগণের সেবা করা। কিন্তু এখন এসব কথার কোনো মূল্য কি আছে? এখন শুধুই নিজের সেবা, নিজের উন্নয়ন। যেখানে ভিন্নমতের, ভিন্ন মতাদর্শের মানুষের কোনো স্থান নেই যেখানে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে একদলীয় শাসন সেখানে শিক্ষাঙ্গন তো বাদ থাকতে পারে না। বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের আধিপত্য, ম্যানেজিং কমিটিতে আওয়ামীলীগের আধিপত্য, নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয়করণ, যেখানে মেধা ও যোগ্যতা তুচ্ছ, দলীয় আনুগত্যই যেখানে মূখ্য সেখানে ভালো কিছু আশা করার কোনো সুযোগ তো থাকতে পারে না। 

দেশ: বলা হয় শিক্ষাঙ্গনের এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য আগের সরকারই দায়ী। মানে বিএনপির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়। কি বলেন আপনি? 

ড. ওবায়দুল ইসলাম: এমন কথায় অবাক হবার কিছু নেই। এ দেশে যা কিছু খারাপ ঘটনা ঘটে তার দোষ বিএনপির উপর চাপিয়ে দেয়া আওয়ামী লীগাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। সব কিছুতে বিএনপির হাত আছে এসব তারা বলে বেশ তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। আপনার নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা যে, বিগত বিএনপি আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে দল-মত নির্বিশেষে ক্রিয়াশীল সকল ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান ছিল। প্রতিটি ছাত্রসংগঠন নির্বিবাদে হলে অবস্থান করেছে, ক্যাম্পাসে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম অবাধে চালিয়েছে। কিন্তু এখন ভিন্নমতের কোনো বৈধ ছাত্রও হলে অবস্থান করতে পারছে না। কখনো কাউকে হলে পাওয়া গেলে নির্যাতন করে হল থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা মিডিয়ার সুবাদে নিশ্চয়ই আপনারা শুনেছেন। 

দেশ: কেমন আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিস্থিতি?

ড. ওবায়দুল ইসলাম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এককালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। কিন্তু এখন আর সেই জৌলুস নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সবাই জানতেন মুক্তবুদ্ধির চর্চাকেন্দ্র হিসেবে। কিন্তু এখন এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তবুদ্ধির চর্চার কোনো সুযোগ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হতো। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে শিক্ষকদের নৈতিক স্খলন হলে শাস্তি হতো। কিন্তু এখন শিক্ষকের দলীয় পরিচয়ের উপর নির্ভর করে শাস্তি হবে কিনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ দিন দিন নিম্নগামী হচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগে মেধা ও যোগ্যতার চেয়ে দলীয় আনুগত্যকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারী দল ব্যতীত ভিন্ন মতের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কথা বলার কোনো অধিকার নেই। ভিন্ন মত প্রকাশের কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের চাকরি হারানোর উদাহরণও আছে। ভিন্ন মতাবলম্বী শিক্ষার্থীর কোনো স্থান এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভিন্ন মতাবলম্বী শিক্ষার্থীর পরিচয় পেলে তার উপর নেমে আসে নির্যাতনসহ ক্যাম্পাস ত্যাগ। ক্যাম্পাসে তাদের আনাগেনো দেখলেও পিটিয়ে তাদেরকে থানায় সোপর্দ করা হয়। আর হলে হলে গেস্টরুম কালচার নামে টর্চার সেল তো আছেই। খোদ প্রশাসনের নজরে থেকেই এই সব অপকর্ম করে যাচ্ছে ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা। 

দেশ: এ ধরনের পরিস্থিতির বিরুদ্ধে আপনারা প্রতিবাদ করেন না কেন?

ড. ওবায়দুল ইসলাম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় জোরালো প্রতিবাদ করলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। রাষ্ট্রযন্ত্র যেমন ভিন্ন মতের জনগণের উপর অত্যাচার, নির্যাতন নিপীড়ন চালাচ্ছে, বিশ^বিদ্যালয় তো অখণ্ড কোনো দ্বীপ না যে সেখানে নিরপেক্ষ কোনো মহামানব এসে প্রশাসন চালাবে। রাষ্ট্রযন্ত্রের মতো এখানেও ভিন্নমতের শিক্ষকদের উপর বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে ফলে চাকরি রক্ষার্থে অনেকেই প্রতিবাদের জোরালো অবস্থান নিতে পারছেন না। 

দেশ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক যারা জাতীয়তাবাদী রাজনীতি করেন বলে দাবি করেন তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়ে চুপচাপ থাকে। বলা যায় হাত মেলায় ক্ষমতাসীনদের সাথে। তাই এসব জাতীয়তাবাদী শিক্ষকরা প্রতিবাদ করেন না। বিষয়টি কি এরকম?

ড. ওবায়দুল ইসলাম: বিষয়টি অবশ্যই এরকম না। দেখুন, সুবিধাবাদী চরিত্রের মানুষ যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে এমনটি নয়। সুবিধাবাদী চরিত্রের মানুষ সর্বত্র বিরাজমান। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে গত ১৭ বছরে যেসব শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন তাদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চাপে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারছেন না। অন্যদিকে অবসর গ্রহণের কারণে সাদা দলের শিক্ষক সংখ্যা দিন দিন কমছে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকবৃন্দ প্রশাসনের চাপে এবং ভয়ভীতির কারণে ইচ্ছা থাকলেও সাদা দলে আসতে পারছেন না, ফলে সাদা দলের শক্তিও আগের অবস্থানে নেই। এর সাথে যুক্ত হচ্ছে সাদা দলের শিক্ষকদের হয়রানি, পদোন্নতিবঞ্চিত-দীর্ঘসূত্রিতাসহ বিভিন্ন মানসিক নির্যাতন। এসবের কারণে প্রতিবাদের মাধ্যমে দাবি আদায় করা কঠিন হচ্ছে। 

শেয়ার করুন