২০ মে ২০১২, সোমবার, ০৩:১৪:১৪ পূর্বাহ্ন


চট্টগ্রাম সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সভা হট্টগোলে পণ্ড
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৫-২০২৪
চট্টগ্রাম সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সভা হট্টগোলে পণ্ড অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সভায় নেতৃবৃন্দ


চট্টগ্রাম সমিতি উত্তর আমেরিকার অন্যতম একটি বড় এবং পুরোনো সংগঠন। বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ড এলাকায় সংগঠনটির একটি নিজস্ব ভবন রয়েছে। এই সংগঠনটি কিছুদিন পর পর অচলাবস্থার মধ্যে পড়ে। ১৯৯৭ সালে ভবন ক্রয় করার পর থেকে এই ভবন নিয়ে মামলা। মামলা শেষ হলে ওই মামলায় দেওয়া রায় অনুযায়ী জনৈক ব্যক্তি থেকে অর্থ উদ্ধারের কোনো উদ্যোগ পরবর্তীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত (হানিফ-কামাল) কমিটি নেয়নি, তখন থেকে সংগঠনটিতে শুরু হয় নেতৃত্ব নিয়ে গণ্ডগোল। তার ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি, নির্বাচন না দেওয়া এবং সংগঠনের আয়-ব্যয়ের হিসাব না দেওয়ার একটা প্রবণতা সব সময় চলে আসছে। একপক্ষের ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা এবং অন্যপক্ষের নির্বাচনের দাবি নিয়ে ২০০৯ সালের সাধারণ সভাকে কেন্দ্র করে মারামারি, পুলিশ ডাকাডাকি, হাসপাতালে ভর্তি, শেষ পর্যন্ত মামলা। ২০১২ সালে আদালত কর্তৃক নির্ধারিত অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির তত্ত্বাবধানে নির্বাচন হলে আজম-বাদল কমিটি দায়িত্ব নেয়। এই কমিটি ২০১৪ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে গত ২০২২ সাল পর্যন্ত সংগঠনটির আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব সাধারণ সদস্যদের কাছে দিতে পারেনি। এই ৮ বছরের মধ্যে প্রায় তিন বছর ছিল আকবর-তাহের কমিটি। পরবর্তীতে নির্বাচিত হন মরহুম আবদুল হাই জিয়া-সেলিম। এই কমিটির মেয়াদ ছয় মাস যেতে না যেতেই সেলিমের নেতৃত্বে ১১ কার্যকরি সদস্য পদত্যাগ করলে মরহুম জিয়া ওই শূন্যপদে পুনর্নির্বাচন না করে সংগঠন চালাতে থাকেন। তার মৃত্যুর পর তার কমিটির কয়েকজন ২০১৭ থেকে ২০২১-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় চার বছর কোনো নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখে এবং এই চার বছরের কোনো আর্থিক হিসাব চট্টগ্রামবাসী পায়নি। এ নিয়ে একাধিক মামলা ব্রুকলিনের আদালতে এখনো চলমান বলে জানা গেছে। ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে সংগঠনের দুই বিবদমান গ্রুপ আলাদাভাবে নির্বাচন করে। এক গ্রুপ সংগঠনের ভেতরে নির্বাচন করেন অন্য গ্রুপ রেস্টুরেন্টে নির্বাচন করে স্ব স্ব কমিটি ঘোষণা করে আলাদাভাবে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল। এভাবে প্রায় ১৭ মাস চলার পর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর/অক্টোবর মাসে ভবনে থাকা (হাবিব-বিল্লাহ) কমিটির মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন নিয়ে মতানৈক্য দেখা দেয় এবং তা চরম আকার ধারণ করলে হাবিব-বিল্লাহ কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক তাদের কয়েকজন মুরব্বিসহ বাইরে থাকা মনির-সেলিম কমিটি ও তাদের কয়েকজন মুরব্বিসহ সমঝোতা করে উভয় কমিটি বিলুপ্ত করে ১৫ সদস্যবিশিষ্টি একটি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন করা হয়, যা পরবর্তীতে সাধারণ সভার মাধ্যমে ৯ মাসের জন্য প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৯ মাসের জন্য দায়িত্ব নিলেও ওই কমিটির কার্যক্রম ছিল ব্যাপক। যেমন ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত যেসব ব্যক্তি সংগঠনের আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের কাছ থেকে হিসাব নেওয়া, ভবনের সংস্কার করা, ভবনের ভাড়াটিয়াদের লিজ আপডেট, বকেয়া আদায় এবং সদস্য হালনাগাদ করে একটি নির্বাচন দিয়ে নতুন কমিটির মাধ্যমে সংগঠনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি। অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে হাবিব-বিল্লাহ কমিটি এবং মনির-সেলিম কমিটি হিসাব দিলেও আকবর-তাহের কমিটি এবং মরহুম জিয়ার সময় ও পরবর্তীতে তার কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তদের চিঠি দিয়ে হিসাব চাওয়া হলেও তারা হিসাব প্রদান করেননি। এমনকি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সঙ্গে কোনো রকম সহযোগিতাও করেনি। পরবর্তীতে তাদের হিসাব নেওয়ার বিষয়ে মধ্যস্থতা করার জন্য ছয় জন মুরব্বিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু ওনারাও কোনো সুরাহা করতে পারেননি। ফলে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি বাধ্য হয় আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করছে, যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা যায়।

সর্বশেষ নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী গত ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ সদস্য ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ছিল চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, ৩ মার্চ নির্বাচন কমিশন গঠন এবং ২৬ মে ২০২৬ নির্বাচন । কিন্তু জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি ২০২৪-এর পর অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির কোনো সভা আহ্বান করা হয়নি, দীর্ঘ চার মাস পর গত শনিবার ২৭ এপ্রিল অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সেলিমের সভাপতিত্বে কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হলেও কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই গণ্ডগোলের কারণে সভা পণ্ড হয়ে য়ায়। সভায় উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সদস্য ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিনে সরবরাহকৃত সব রিসিপ্ট বই জমা পড়েনি এবং পরবর্তীতে ওইসব বই বাতিলও করা হয়নি। এই বিষয়ে শনিবারের সভায় প্রশ্ন করলে সংশ্লিষ্টরা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি বলে জানান অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্য মাকসুদ চৌধুরী। তিনি আরো জানান, যেহেতু রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি, তাই সদস্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভোটার তালিকা প্রকাশ নির্বাচন কমিশনসহ সব ধরনের কর্মসূচি যেন পুনরায় ঘোষণা করা হয়।

সভায় এ বিষয়ে অনেক তর্কবিতর্কের পর এক পর্যায়ে কণ্ঠভোট নেওয়া হয় এবং কণ্ঠভোটে আগামী ২ জুন পর্যন্ত সদস্য সংগ্রহ এবং ১৫ জুন ২০২৪-এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য ভোট প্রদান করেন। কিন্তু মোহাম্মদ তাহের এবং মীর কাদের রাসেল তা সরাসরি বিরোধিতা করে এবং এতে সভায় একটি উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ফলে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই অনেকে সভাস্থল ত্যাগ করেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, চট্টগ্রাম সমিতি আবারও একটি সংকটে পড়তে যাচ্ছে। সংকটে যেন এই সমিতির ললাটের লিখন।

শেয়ার করুন