২০ মে ২০১২, সোমবার, ০৫:৩১:১১ পূর্বাহ্ন


বাস্তবতায় নিরিখে শেখ হাসিনার বিকল্প কে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৫-২০২৪
বাস্তবতায় নিরিখে শেখ হাসিনার বিকল্প কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল একটি দেশে দুর্নীতি, অপশাসন, দখলদারিত্ব থাকবেই। এমনটা হয়ে আসছে। গণতন্ত্র দেশগুলোতে নানাভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ, আইনের শাসন নিয়ন্ত্রিত। অনেকের সঙ্গে মতের মিল থাকবে না। এমন প্রেক্ষাপটে যদি বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসে, তাহলে নানা প্রশ্ন উঠবে। কেউ বলবে শেখ হাসিনার বিকল্প কেউ নেই এ মুহূর্তে। কেউ বলবে কারো জন্য কোনো কিছু থেমে থাকে না। শেখ হাসিনা না থাকলে সে স্থান পূরণ হয়ে যাবে। আবার কেউ বলবেন অবশ্যই শেখ হাসিনার বিকল্প থাকবে না কেন। অবশ্যই কেউ না কেউ থাকবে। কারণ দায়িত্ব পেলে অনেকেই এমন কারিশমা দেখাতে পারবেন। কেউ রেফারেন্স টানবেন ফখরুদ্দীনের। কোথায় ছিলেন, কীভাবে এসে বাংলাদেশে যে রেফারেন্স তৈরি করে গেছেন সেটা আজও সবার মনে। তাহলে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই এটা বলা বোধহয় ঠিক না। 

তবুও একটি উন্নয়নশীল দেশে বিশেষ করে বাংলাদেশের যে প্রেক্ষাপট বিশেষ করে ভূ-রাজনীতি থেকে শুরু করে নানা জটিলতার সম্মুখীন হওয়া বাংলাদেশের বিদ্যমান সার্বিক বাস্তবতায় দেশ চালনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই-এটা শেখ হাসিনার শত্রুপক্ষও স্পষ্টভাবে বলবেন! স্বাধীনতার মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি এই মুহূর্তে বিরোধী দলগুলো দূরের কথা খোদ শাসক দলেই শেখ হাসিনার বিকল্প কেউ কোথাও নেই। বলছি না দেশে সমস্যা, সংকট নেই। মূল্য স্ফীতি, আর্থিক সংকট, জ্বালানি-বিদ্যুৎ সংকট অক্টোপাসের মতো বেঁধে ফেলেছে সামাজিক জীবন। ব্যাংক, বীমা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় তারল্য সংকট। বিপুল পরিমাণ সম্পদ দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলো বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার করার প্রতিযোগিতায় মেতেছে। বিকাশমান অর্থনীতির এই দেশে ভারত, চীন, রাশিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম ইউরোপের ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো পাশাপাশি উপস্থিত। 

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ভারসাম্য নীতি নিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে টিকে আছে। যদিও একক বিদেশি শক্তি হিসাবে ভারতের প্রভাব সুস্পষ্ট। এর অন্যতম কারণ সীমান্তের তিন দিক পরিবেষ্টিত প্রতিবেশী। এটাও শেখ হাসিনা হয়তো কৌশলগতভাবে মেনে নিয়েছেন। তবে শেখ হাসিনা সবার সঙ্গেই সৎভাব বজায় রেখে উতরে যাচ্ছেন। 

কিন্তু এ কথাও স্বীকার করতে করতে হবে, দেশে দায়িত্বশীল বিরোধী শক্তি নেই। ক্ষমতাসীন দলের দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে তাদের কৌশলে পরাস্ত, সঙ্গে প্রধান বিরোধীদল বিএনপির রাজনীতিতে বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধও। দলটি যে ১০-২০ জনের ওপর নির্ভরশীল তা তো নয়। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে রয়েছে কমবেশি আড়াই শতাধিক নেতা। ফলে দশ, বিশ বা কুড়ি, পঞ্চাশও যদি সরকারের রোষানলে পড়ে জেলজুলুমের শিকারও হয়, এরপরও বাকি থাকে বিশালাকার এক নেতৃত্ব। তাহলে ওনারা কোথায়? কেন সঠিক নেতৃত্ব তারা যথাসময়ে দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। একটা দল দুই-তিন জনের ওপর নির্ভরশীল, সেটা বলা যায় না। খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান না হলে বিএনপি চলবে না, এটা তো দলটির গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। যদি কোনো কারণে এ দু’জন না থাকেন, তাহলে বিএনপি কি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে? মোটেও না। অবশ্যই দলটি গণতন্ত্র চর্চা করে আসছে আমি যতদূর জানি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে দলের শীর্ষ সারির অনেকেই আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন। এতে দলটির সার্বিক শীর্ষ নেতৃত্ব গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে তৃণমূলে। একই সঙ্গে সরকারি দলের কৌশল বা নানাভাবে সরকারের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ক্রমশ। আরেকটি বড় কারণ নির্বাচনে অংশ না নেওয়া। একটা দল তৃণমূলে টিকে থাকে নির্বাচনের শোরগোলে। বছরের পর বছর, কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ না নিলে তৃণমূলের নেতৃত্বের মূলত কোনো কাজ থাকে না। জনবিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য। কারণ প্রতিপক্ষ নির্বাচনী ডামাডোল নিয়ে তুলকালাম। সেখানে বিএনপির মতো অন্যতম জনপ্রিয় দল পর্যায়ক্রমে চুপ! সাধারণ মানুষ এটা পছন্দ করে না। সার্বিকভাবে তাদের কাছে দলটির নেতৃত্বের অভাব বা দুর্বলতাগুলোই ভেসে ওঠে। তারা ওই দলের প্রতি আস্থা হারাতে থাকেন। আর সে স্থানে তারা অন্য কাউকে স্থান দিয়ে ফেলেন। বিএনপি এভাবেই জনপ্রিয়তাও হারাচ্ছে। 

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অতি বাম, অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে সচেষ্ট। এতে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক শক্তি বিচ্ছিন্নভাবে সরকার উৎখাতের হুংকার দিচ্ছে। বিদ্যমান বাস্তবতায় জনবিচ্ছিন্ন বিরোধীদলগুলোর সরকার উৎখাতের শক্তি-সামর্থ্য নেই এটা বলে দেওয়া যায়। সার্বিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেছেন, তাকে উৎখাত করে, কাকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানো হবে? 

এটা ঠিক, শেখ হাসিনার অবর্তমানে শাসক দলেও কেউ নেই, যারা সব বিদেশি শক্তিকে সামাল দিয়ে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে পারবে। কেননা সরকারি দলের শীর্ষনেতৃত্বও গ্রহণযোগ্যতা নেই। নানা কারণে দ্বন্দ্ব নিজেদের মধ্যেই। বারবার শেখ হাসিনা এসব দ্বন্দ্ব নিরসনে কঠোর নির্দেশনা দিলেও সেগুলো খুব বেশি কাজে আসছে না। যা স্পষ্ট হয়ে গেছে গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও চলমান উপজেলা নির্বাচনে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে স্বার্থের জন্য দ্বন্দ্ব বাড়ে। কিন্তু সেটাকে সামাল দিতে মুন্সিয়ানার ছাপ রাখা উচিত। এসবে ক্ষমতাসীন দলও বড্ড পিছিয়ে। 

বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ কিন্তু নানা কারণে সংকট পথে। অনেক জাতীয় সমস্যা বিদ্যমান। এমনি মুহূর্তে অনেকেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। সরকার যদি কোনোক্রমে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তাহলে সরকার উৎখাত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখি না। ব্যতিক্রম সংকট! তবে দেশ এবং জাতির স্বার্থে শেখ হাসিনা নিজেই নিজের বিকল্প সৃষ্টি করাও জরুরি এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

শেয়ার করুন