০১ জুলাই ২০১২, সোমবার, ১০:৪২:৩১ অপরাহ্ন


রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে কিসের ইঙ্গিত
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৫-২০২৪
রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে কিসের ইঙ্গিত বক্তব্য রাখছেন রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন


‘দেশে স্বাধীনতাবিরোধীরা নির্মূল হবে, তাদের পদচিহ্নও থাকবে না’- রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এমন বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানান আলোচনার ঝড়। দেখা দিয়েছে বিভিন্ন প্রশ্ন। বলা হচ্ছে তার এমন বক্তব্য আসলে কিসের ইঙ্গিত। ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতাকারী মৌলবাদি সাম্প্রদায়িক সংগঠন জামায়াতের ওপরে কি নেমে আসছে আরো বড়ো ধরনের খড়গ? নেয়া হচ্ছে কঠোর পদক্ষেপ? 

কি বললেন রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গত ১৮ মে শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ৮ম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় কিছু ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা সুযোগ পেলেই ছোবল মারতে চায়। কিন্তু এ দেশে স্বাধীনতাবিরোধীরা নির্মূল হবে, তাদের পদচিহ্নও থাকবে না। সেই অপশক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতে যে প্রয়াস আমাদের প্রয়োজন, তা-ই করতে হবে। তিনি আরো বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে। কিন্তু আজকাল বহির্বিশ্বে থেকে যারা বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার করছে, তারা মূলত এই দেশটার অগ্রগতি থামিয়ে দিতে চায়। এর পাশাপাশি তিনি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে বেড়ে উঠতে পারে সে লক্ষ্যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথাও বলেন। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘এই লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তির ইস্পাত কঠিন ঐক্যের বিকল্প নেই। ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশ ও জনগণের স্বার্থে সবাইকে কাজ করতে হবে।’ রাষ্ট্রপতি সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর দর্শন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতার বোধকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ারও তাগিদ দেন।

কি বোঝাতে চাইলেন রাষ্ট্রপতি?

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতাকারী মৌলবাদি সাম্প্রদায়িক সংগঠন জামায়াত সরকারের সাথে গোপন আঁতাতে কাজ করে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে জানা গেছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক মহলে এমন প্রচারণা রয়েছে জামায়াত তার সংগঠনটিকে বাঁচিয়ে রাখতেই দ্যুতিয়ালি করে যাচ্ছে। এরা মূলত উপরে বিএনপি’র সাথে ঐক্যের চেষ্টা করছে বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। আর অন্যদিকে জামায়াতকে চাপ বা কোনঠাসার চেষ্টা করলে বিএনপি’র সাথে ঐক্যের ভয় দেখিয়ে পাল্টা সরকারের থেকে সুবিধা আদায়ের কৌশল নিয়েছে। আবার একিই ধরনের কৌশল ভিন্ন কায়দায় বিএনপি’র ওপরও প্রয়োগ করা হচ্ছে। বিএনপি’র সাথে যুগপৎ আন্দোলন করছে কিন্তু গোপনে জামায়াত থেকে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক ও বৈষয়িক সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে এমন বেশ কয়েকটি দল ব্যক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে। বলা হচ্ছে বিএনপি’ যেনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতাকারী মৌলবাদি সাম্প্রদায়িক সংগঠন জামায়াতের সাথে এক মঞ্চে চলে আসে। বোঝানো হচ্ছে এতে বিএনপি আবার ক্ষমতায় যেতে পারবে। প্রশ্ন হচ্ছে রাষ্ট্রপতি কি এসব জেনেই ওই বক্তব্যটি দিয়েছেন? 

জামায়াত জানে বিএনপি কি করবে

এদিকে একটি সূত্র জানায় দেশের বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জামায়াতের সাথে বিএনপি যে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত হবে না তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতাকারী সংগঠনটি ভালোভাবে জানে। জামায়াতও জানে বিএনপি’র তাদের সাথে একাট্টা হয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন নামুক তা আওয়ামী লীগও চায়। কারণ এতে করে আওয়ামী লীগ যে দেশে-বিদেশে আবার প্রচার-প্রচারণার সুযোগ পাবে এই বলে যে বিএনপি জঙ্গী-মৌলবাদি সাম্প্রদায়িক সংগঠনের সাথে তাদের সর্ম্পক জোরদার করেছে। 

কিন্তু রাষ্ট্রপতির মুখে কেনো এমন কথা

কেউ কেউ মনে করে থাকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতাকারী মৌলবাদি সাম্প্রদায়িক সংগঠনটির বর্তমান কৌশলটি বেশ ভালোভাবেই জানেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এ-ও বোঝেন কেনো তারই ক্ষমতাসীন সরকার পুরোপুরি জামায়াতের বিরুদ্ধে বড়ো ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারছে না। খোদ আওয়ামী লীগ ও তার বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের পাশাপাশি প্রশাসনে জামায়াত কৌশলে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে দলের হাই কমান্ড বিশেষ করে সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনাসহ হাতে গোনা কয়েকজন জামায়াতের বিরুদ্ধে কঠোর হতে আন্তরিক। অন্যদিকে বাংলাদেশের একটি প্রতিবেশী দেশও আওয়ামী লীগকে জামায়াতের বিভিন্ন কর্মকান্ড সর্ম্পকে সর্তক করে দেয়। কিন্তু এমন সর্তকতার পরেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতাকারী মৌলবাদি সাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসাবে দেশে- বিদেশে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা করা কথা শোনা যায়। 

কিন্তু এটা প্রকাশ পেয়ে গেলে এর ওই প্রতিবেশী দেশটি না বলে দেয়। কোনো ভাবেই, কোনো ফরমেটে জমায়াতের সাথে আঁতাতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী এবং এমনকি মাঠের বিরোধী দলের জন্য যে ক্ষতিকর হবে এমন সর্তক বার্তা দিয়েছিল দেশটি। কিন্তু তা না শুনে বিএনপি’কে ঠেকানোর নামে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শান্ত রাখতে গিয়ে জামায়াতকে রাজনৈতিক স্পেস দেয় ক্ষমতাসীনরা। এতে প্রতিবেশী দেশটি যে কি-না বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে সে দেশটি বিগড়ে যায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমন কার্যকলাপে। তারা সাফ জানিয়ে দেয় যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে বিএনপি’ ঠেকাতে গিয়ে এখানে কট্টর মৌলবাদি দলটিকেই কাছে টেনে প্রশয় দিচ্ছে, যা খোদ বাংলাদেশ নয় পুরো উপমহাদেশেই একসময়ে শান্তি বিনষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ জামায়াতের সাথে পাকিস্তান এবং চীনের ভালো দহরম-মহরম আছে যা ভারতীয়রা ভালোই বোঝে। 

এমন পরিস্থিতিতে জামায়াত চুপ করে বসে থাকে না। বিভিন্ন ধরনের লবিস্ট নিয়োগ করে আমেরিকাকে রাজি করিয়ে ফেলে। সম্প্রতি ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে একটি মানবাধিকার রিপোর্টে আমেরিকার জামায়াতের প্রতি তাদের দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে যায়। জানা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি মনে করেন জামায়াত আবার ফাঁক-ফোকর বের করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভাগ বসাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি ঘাড়ে বন্দুক রেখে। আর এজন্যই রাষ্ট্রপতি কঠোর হয়েছেন। জানা গেছে, রাষ্ট্রপতিকে ধারণা দেয়া হয়েছে যে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কিভাবে জামায়াত ঢুকে পড়েছে। একারণেই তিনি কঠোর হতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে জামায়াত যেটুকু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ পাচ্ছে তা হয়তো আরও সীমিত এমনকি একেবারে বন্ধ করে দেয়ার মতো পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। কেননা তিনি নিশ্চিত যে, মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শীর্ষ নেতাদের সাজা, প্রকাশ্য রাজনীতিতে দীর্ঘ অনুপস্থিতি, নিবন্ধন বাতিল এবং সরকারের নানামুখী চাপে থাকার পরেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিজের একটা অবস্থান করে ফেলেছে। তাই তার বিরুদ্ধে কঠোর হতে তিনি হয়তোবা নিজেই প্রভাব রাখবেন। তারই নমুনা এমন ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।

শেয়ার করুন