০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৮:২৩:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের পদত্যাগ
গণতন্ত্র প্রশ্নে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ বিএনপিতেই
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৬-২০২৪
গণতন্ত্র প্রশ্নে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ বিএনপিতেই ডোনাল্ড লু ও পিটার হাস


বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং এর পাশাপাশি এসব বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতীত এমনকি বর্তমান ভূমিকা নিয়েও এখন খোদ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মাঠের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ দলটির সাথে আন্দোলনরত সমমনা নেতাকর্মীদের মধ্যে। এখন এনিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে বিএনপি’র শীর্ষ পর্যায়েও। কথা উঠেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞার দেয়ার আওয়াজটি আসলে কী ছিল? বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশের বেলায় কেনো তেমনটা কঠোর হতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র- তা নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে মাঠের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ দলটির সাথে আন্দোলনরত সমমনা নেতাকর্মীদের মধ্যে। বিএনপিসহ দলটির সাথে আন্দোলনরত সমমনা নেতাকর্মীদের অনেকেই এখন মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয় বাংলাদেশের প্রভাবশালী প্রতিবেশীর সাথে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রশ্নে কূটনীতিতে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। আর তা না হলে নিজেদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে চুপসে গেছে, বলির পাঠা করেছে রাজনৈতিক মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ দলটির সাথে আন্দোলনরত সমমনাদের। এসব ধারণার খবর পাওয়া গেছে, সম্প্রতি গণমাধ্যমে একটি রিপোর্ট প্রকাশের পরপরই বিএনপিসহ দলটির সাথে আন্দোলনরত সমমনা নেতাকর্মীদের সাথে একান্তে কথা বলে। 

কি রিপোর্ট এসেছে গণমাধ্যম

দ্য মিরর এশিয়া নামে একটি গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে যে, বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির হঠাৎ পরিবর্তনের প্রতিবাদে স্টেট ডিপার্টমেন্টের চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস। রিপোর্টে আরো খোলাসা করে বলা হয়, পিটার হাস মূলত দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’র কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে পদত্যাগ করছেন। 

কেনো ডোনাল্ড লু’র নাম আসলো

প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার অক্ষুণ্ণ রাখার বিষয়ে আন্তরিক থাকলেও ডোনাল্ড লু এ বিষয়ে ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করেছেন। এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। এই ধীরে চলো নীতি ভারত ও ক্ষমতাসীন সরকারকে সুবিধা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতের কথা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। সাম্প্রতিক ঢাকা সফরের সময় একটি সাক্ষাৎকারে ডোলান্ড লু এটিকে কূটনীতিতে পারস্পারিক প্রভাব বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর একারণে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয় যে, পিটার হাস শুরুতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা চালালেও পরে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছেন। এটি রাষ্ট্রদূতকে ক্ষুদ্ধ ও বিব্রত করছে। এমনকি প্রকাশিত রিপোর্টে আরো বলা হয় যে, এই কারণে স্টেট ডিপার্টমেন্টের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পিটার হাস। রিপোর্টে দাবি করা হয়, রাষ্ট্রদূত হাস জুলাইয়ের শেষার্ধ্বে ঢাকা ত্যাগ করবেন। অন্যদিকে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত কংগ্রেসে শুনানির পর ঢাকা আসবেন।

কী প্রতিক্রিয়া দেখালো যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির হঠাৎ পরিবর্তনের প্রতিবাদে স্টেট ডিপার্টমেন্টের চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস- এমন খবরে তোলপাড় বহে যায় রাজনৈতিক অঙ্গন জুড়ে। তবে প্রকাশিত খবরে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বসে থাকেনি। প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ নয় প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে গত সপ্তাহের বুধবার সন্ধ্যায় ই-মেইলে পাঠানো এক প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, পিটার হাস বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে এখনো বহাল রয়েছেন। বাংলাদেশে পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত হয়েছেন ডেভিড স্টেটন মেল। দূতাবাসে প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবাদ না জানিয়ে বরং আরো বলা হয় এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত তথ্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয় ওই ই-মেইল বার্তায়। এতে বলা হয়, আমরা অনুরোধ করছি হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটি রাষ্ট্রদূত মনোনয়ন নিশ্চিত করে।

সন্দেহের তীর ডোনান্ড লু’র দিকে

এদিকে অনেকে মনে করেন বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে দৃশ্যত এধরনের মানসিক চাপে রাখতে দেশের ভেতরে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস’কে তৎপর দেখা গেছে। কিন্তু ততটা দেখা যায়নি মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারি সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’র বেলায়। এমনটা মনে করে মাঠের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ দলটির সাথে আন্দোলনরত সমমনাদের সমর্থকরা। তারা মনে করে এখানে অবশ্যই একটা বড়ো ধরনের প্রশ্নবোধক আছে,যা এখন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস সংক্রান্ত খবরে বের হয়ে আসছে। একারণে মাঠের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ দলটির সাথে আন্দোলনরত সমমনাদের আরোও সন্দেহের তীর এখন ডোনাল্ড লু’র দিকে। কেননা সম্প্রতি ঢাকায় এসে বিরোধী দলের সঙ্গে দেখা করেননি ডোনাল্ড লু। এনিয়েও কথা উঠে রাজনৈতিক অঙ্গনে। যদিও ভয়েস অব আমেরিকায় এক সাক্ষাৎকারে এর উত্তর দেন তিনি। বিরোধী দলের সঙ্গে দেখা না করার প্রসঙ্গে ডোনাল্ড লু বলেন, এটা প্রাক-নির্বাচনের সময় নয়, তাই এবারের সফরে আমি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দেখা করিনি। বলেন, এটা প্রাক-নির্বাচনের সময় নয়, তাই এবারের সফরে আমি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দেখা করিনি।

শেষ কথা

যদিও বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধীদলীয় কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও নির্বাচনের দিনে অনিয়মের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে বাংলাদেশের এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাজ্য। কিন্তু মাঠের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ দলটির সাথে আন্দোলনরত সমমনারা মনে করে যুক্তরাষ্ট্র আসলে সত্যিই প্রভাবশালী প্রতিবেশি দেশের কারণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। আর সামনের দিনে তা চলমান থাকবে কি-না বা রাখতে পারবে কি-না তেমন প্রশ্নও ঘুরে ফিরে ঘুরপাক খাচ্ছে, সে-ই ডোনাল্ড লু’র সাম্প্রতিক ভয়েস অব আমেরিকায় দেয়া ঐ সাক্ষাৎকারটির কারণে। এতে দেখা গেলো, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’রা এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে মিলে সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করে যাবো।’ প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন এবং এর পাশাপাশি এসব বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতীতের ভূমিকা’ কি বর্তমান চলমান থাকবে? যেখানে বহুবার বাংলাদেশের জনগণ শুনেছিল যে, গণতন্ত্র এগিয়ে নেওয়াই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শীর্ষ অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে একটি। কেননা বিভিন্ন এনিয়ে কথা বলতে গিয়ে মন্তব্য করেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। এমনকি ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পরেও মার্চে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার জোর দিয়ে বলেছিলেলেন, বাংলাদেশে অবাধ, পূর্ণ ও মুক্ত গণতন্ত্রের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। তাহলে ডোনাল্ড লু’ কেনো বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের চ্যাপ্টার বাদ দিয়ে বললেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে মিলে সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করে যাবো।’ প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশেএকটি অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের ইস্যুটি মৃত। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আগে কি এখন এসব নিয়ে দেশটির কথাগুলি কি ছিল কথার কথা? নাকি মাঠের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ দলটির সাথে আন্দোলনরত সমমনা নেতাকর্মীদের মধে নিজেরা ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ আদায় করে সটকে পড়েছে। বলির পাঠা করেছে বিএনপিসহ দলটির সাথে আন্দোলনরত সমমনাদের? এমন প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। 

শেয়ার করুন