২৯ জুন ২০১২, শনিবার, ০৭:৫৩:১২ অপরাহ্ন


নেতৃত্ব মেরামতের পর বিএনপির নতুন আন্দোলন
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৬-২০২৪
নেতৃত্ব মেরামতের পর বিএনপির নতুন আন্দোলন


পরাশক্তিরা কে কী চাইলো সেটা পাত্তা দেয় না বাংলাদেশের মানুষ। ৯ মাসের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রমাণের পর এ নিয়ে নতুন আলোচনার প্রয়োজন নেই। প্রসঙ্গটা আসছে স্বাধীনতার ৫২ বছর পরের আলোচনাকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশের কতিপয় মানুষ বলার চেষ্টা করছেন, ‘অমুক দল ক্ষমতায় রাখতে বিদেশী পরাশক্তিরা তৎপর। তারা চায় না দেশে একটা গণতান্ত্রিক সরকার আসুক।’এসব কথা অনেকটাই ভিত্তিহীন! এটাই যদি বাস্তবতা হয়, তাহলে ৭১ এ দীর্ঘ ৯ মাসের আন্দোলন সংগ্রাম বিফলে যেত। কারণ পাকিস্তানের সঙ্গে চীন, যুক্তরাষ্ট্রের মত পরাশক্তিগুলো ছিল। বাঙালিরা সেসব তোয়াক্কা না করে কঠোর যুদ্ধ করে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা নিয়ে এসেছেন। সে দেশে বিপরীতমুখী পুরানো গাল গল্প বড্ড বেমানান। ইদানিং বিএনপিসহ বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মীদের এমন উদ্ভট যুক্তি কথা। হতেও পারে, অসম্ভব না। কিন্তু মাঠের শক্তি, জনগণের প্রত্যাশা চাওয়া তারা বুঝতে পারলেও সঠিক নেতৃত্বের অভাব ও শীর্ষ নেতৃত্বে দ্বিমুখী ভূমিকা আড়ালে ঠেলে জনগণের উপর দায় চাপানোর এটা একটা অপচেষ্টা। কারণ জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়লে আর সেটা যদি হয় ন্যায়ের আন্দোলন। গণতন্ত্রের আন্দোলন। বাংলাদেশের মানুষ দলমত নির্বিশেষে সেটার দিকে ঝুঁকবেই। 

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের অন্তত দুই বছর আগ থেকে বিএনপি নানা কৌশলে মাঠে নেমে আন্দোলন শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডার মত রাষ্ট্রসমূহ এক জোট হয়ে চলমান প্রক্রিয়া পাল্টে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান করার চেষ্টা চালায়। সাধারণ মানুষও রাষ্ট্রযন্ত্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বিএনপির বিভাগীয় সম্মেলনগুলোতে কিভাবে উপস্থিতি ঘটেছিল সেটা কেউ ভুলে যায়নি। মালামাল বহন করা ট্রলারের ফ্লোরে, পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল, সাইকেলে, নদী সাঁতরিয়ে শত বাঁধা উপেক্ষা করে বিএনপির সমাবেশে উপস্থিত হতো মানুষ দুই তিনদিন আগ থেকে। অঘোষিত যানধর্মঘট, পথে পথে নিরাপত্তার অজুহাতে আইনশৃংখলা বাহিনীর সার্চিং। আটকে দেয়া। ফেরৎ পাঠানো। মূল রাস্তা রেখে বিকল্প গ্রাম্যপথ ধরে মানুষের সমাবেশস্থলে উপস্থিতি দেখে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিস্মিত হয়েছেন একের পর এক। বলেছেনও। বাধা-বিপত্তি না থাকলে যেসব স্থানে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছিল বিএনপি বিশাল অঞ্চল জুড়েও স্থান সংকুলান হতো না বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।

ঢাকাতে যেসব মহাসমাবেশ হয়েছে সেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ তকমা পেয়েছে। এগুলো অতীত। কিন্তু বিএনপি ও তাদের সহযোগী দলগুলো এ জনপ্রিয়তা, মানুষের ওই জেগে ওঠা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হলো কেন- এটা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের অন্তত এক বছর আগেই বিএনপি দেশব্যাপী তাদের আন্দোলনের স্বপক্ষে মানুষের গণজোয়ার বুঝে যাওয়ার পরও বড় কোনো আন্দোলনে না গিয়ে কেন, মোমবাতি প্রজ্জলন, লিফলেট বিতরণ, পদভ্রমণ জাতীয় অহিংস আন্দোলন করেছে- সে নিয়েও প্রশ্ন আসছে। অহিংস আন্দোলনই গণতন্ত্রের ভাষা। যেটা অন্যলুপ নেয় অগণতান্ত্রিভাবে বাঁধাগ্রস্ত হলে। 

যুগ পাল্টেছে, হিংসাত্মক আন্দোলন মানুষ এখন আর পছন্দ করেন না এটা বিএনপির সুশীল ও নীতিনির্ধারকদের উপলব্ধি। তাহলে অহিংস আরো কঠিন আন্দোলনের ধারা বের করা উচিৎ ছিল, যার মাধ্যমে সরকার বাধ্য হতো দাবি মেনে নিতে। সেটা হয়নি। 

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন এককভাবে আওয়ামী লীগ সরকার ‘ডামি’ প্রার্থী দাড় করিয়ে করে ফেলে আর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এসি রুমে বসে সে দৃশ্য উপভোগ করেছেন। তৃণমূল কর্মীরা উদভ্রান্তের মত ছুটেছে দিকবিদিক। আশাহত হয়েছেন। অনিশ্চয়তার কালো মেঘ তাদের আবারও ছেয়ে ফেলেছে। কারণ ১৬ ১৭ বছর ধরে আদালতের বারান্দায় যাদের বছর কাটে। ঘর সংসার, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া, ব্যবসা বাণিজ্য যাদের বিনষ্ট হয়ে লাইফ যাদের অতিষ্ট, তারা মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছিল। বলেছিলেন বাড়িতে থাকলেও জেল জুলুম কারাগার, রাস্তায়ও একই। তাহলে রাস্তায় থেকে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে হটানোর চেষ্টা করি। কিন্তু বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যখন জনগণ ফুসে উঠবেন কর্মীদের নিয়ে, ঠিক তখন পথ দেখাতে ব্যর্থ হন, চুপ ছিলেন অজ্ঞাত কারণে ওই সব নেতৃত্ব। এ কথা এখন উঠছে। 

২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের পর ৬-৭ ডজন কেন্দ্রীয় নেতাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বিএনপির শীর্ষস্থানীয় বা কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা তো ছয়শতাধিক। বাকিরা গা ঢাকা দেন। কেন তারা ফ্রন্টফুটে আসেননি সেটাও বিশাল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বিদেশে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগ থেকেই সাংগঠনিক ঘোষণা দেন যে এক নেতার অনুপুস্থিতিতে পরের জন সে স্থানের নেতৃত্বভার অটো গ্রহণ করবে। তাহলে ২৮ অক্টোবরে কেন্দ্রীয় ৬০ থেকে ৭০ জন নেতা কারান্তরীণ হলো বিএনপির আন্দোলন মুখ থুবড়ে কেনো পড়েছিল। অন্যসব নেতারা কোথায় লুকিয়েছিলেন- সে প্রশ্নের উত্তর এখনও দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের নেতাকর্মীরা খুঁজে বেড়াচ্ছেন। 

উপায়ান্ত না দেখে সে সময় লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করলেও ওই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ সব। নির্বিঘ্নে সুন্দর একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করে চতুর্থবারের মত ক্ষমতার মসনদে আরোহন করে আওয়ামী লীগ। বিএনপি নেতারা এসব দৃশ্য চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করেনি। আওয়ামী লীগ বড় একটা বাধা সহজে পার পেয়ে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে। অপরদিকে বিএনপি ক্ষমতা তো দূরে থাক, নেতৃত্ব বা আন্দোলনে যে শক্তি সঞ্চার করেছিল, তা এখন তাসের ঘরের মত উড়ে গেছে। চরম আস্থাহীনতা যার রেজাল্ট উপজেলা নির্বাচনে কেন্দ্রের আজীবন বহিস্কারের হুমকি পাওয়া সত্ত্বেও দুই শতাধিক নেতার উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ। 

দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় অনেক বর্ষীয়ান নেতাও আস্থাহীনতায়। যারা দীর্ঘদিন নির্বাচনে না যাওয়ায় এখন নিজেকে তার নিজ এলাকার যোগ্যপ্রার্থী হিসেবে ভাবতেও ভয় পাচ্ছে। কারণ আন্দোলন সংগ্রাম করার ক্যারিয়ার ইতি টানতে শুরু করেছে। তারাও দিচ্ছে পিছুটান। এমন নানা দ্বন্দ্ব, সন্দেহসহ ঝামেলায় যুক্ত এখন বিএনপি। যদিও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে স্বচ্ছ নেতৃত্ব তৈরির। কিন্তু নতুনরা কতটা আস্থা অর্জনে সক্ষম হবেন ওই সব এলাকার সেটাও আলোচনার বিষয়। 

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে কারাগারে যারা ছিলেন বিএনপির নেতাকর্মী তাদেরকে মুক্তি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। এবং মেক্সিমামদের ছেড়েও দেয়। 

এরপরই মূলত দল গঠনে মনযোগী নীতিনির্ধারকরা। এবার বিএনপির নেতৃত্বে পরিবর্তন ও কাটাছেড়া তথা নেতৃত্বে মেরামতের কর্মসূচি বিদ্যমান। এ কার্যক্রম সবে শুরু। বিভিন্নস্তরের কমিটিতে এ প্রক্রিয়া চলবে বলে জানা গেছে। চলবে আরো বেশ কিছুদিন। কিন্তু এমন নেতৃত্ব মেরামত করে বিএনপি একটা সঠিক দলে দাড় হবে, কিন্তু সেটা কী ক্ষমতায় যাবার বা বিএনপির ভাষায় দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে মিশন সেটাতে সফল হওয়া যাবে? এ প্রশ্ন এখন তৃণমূলে। দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির নেতৃত্বে উদ্দেশ্যহীন যাত্রাতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অবিশ্বাসের দোলাচালে দগ্ধ তারা। 

কোনো দলের আন্দোলনের কোনো স্থির লক্ষ্যমাত্রা ও যুগোপযোগি আন্দোলন যদি না হয়, তাহলে তা সফলতায় রূপ নেয় না এটা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভালই জানেন। শত শত দিন হরতাল ধর্মঘট অসহযোগ আন্দোলন করে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগকে মোমবাতি প্রজ্জলন, পদযাত্রা, লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি দিয়ে কিছুই করা যাবে না এটা সবারই অজানা নয়। তবু তারা করছে। যার সুফল পাওয়া যায়নি। এ যাত্রায় নতুন কোনো আন্দোলন সূচি যোগ হবে কি না কে জানে! 

শুধু দেশেই বা কেন বিএনপি ফরেন পলিসিতেও প্রচন্ডরকম দুর্বলতা দেখিয়েছে। পরাশক্তিদের সঙ্গে দেন দরবারেও দলটি যথার্থ ভূমিকা রাখতে পারেনি। যেখানে দারুণ চাতুরতার স্বাক্ষর রেখেছে আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনটা একতরফাভাবে করে ফেলা এবং এরপর বিশ্ব নেতৃবৃন্দদের যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, অতীতে কোনো নির্বাচনের পর এমন প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়নি। এটা দলটির সুকৌশলের অংশবিশেষ। বিএনপি যেখানে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। 

সম্প্রতি বিএনপির নেতৃত্বে মেরামত করার পাশাপাশি আবারও সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। যে পর্যায়ে দেশের ডান-বাম ঘরানার সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

গত বুধবার (১২ জুন) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান বক্তা মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘আলোচনা করে সবাই একমত হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (একাংশ) সভাপতি সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণ অধিকার পরিষদের ভিপি নুরুল হক নুর।

সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ জেগে উঠেছে। আমরা দেখেছি ৭ জানুয়ারির আগে সারাদেশের মানুষ কিভাবে এই সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠে। হয়তো আমরা তাদের এই জেগে ওঠাকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে হঠাতে পারিনি। কিন্তু ইতিহাস বলে কোনো আন্দোলনই একবারে সফল হয় না। দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই আমরা আমাদের প্রধান শত্রু এই সরকারকে হঠিয়ে দিব। গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবো।’

মির্জা ফখরুল একজন সজ্জন মানুষ। সত্যটাই বলে ফেলবেন এটাই স্বাভাবিক। নেতাদের ভেঙ্গে পড়তে নেই। তার কথায় সেটারও প্রমাণ। তিনি বলেছেন, “আমরা দেখেছি ৭ জানুয়ারির আগে সারাদেশের মানুষ কিভাবে এই সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠে। হয়তো আমরা তাদের এই জেগে ওঠাকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে হঠাতে পারিনি।”

পরক্ষণে আবার বলেছেন,“ ইতিহাস বলে কোনো আন্দোলনই একবারে সফল হয় না। দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই আমরা আমাদের প্রধান শত্রু এই সরকারকে হঠিয়ে দিব। গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবো।” 

দুটো কথাই বাস্তব। প্রথমটিতে স্পষ্ট ব্যার্থতা সেটা যে নেতৃত্বের সেটার বহিঃপ্রকাশ। সে সূত্র ধরেই নেতৃত্বের মেরামতে বিএনপি। 

বেগম খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রী থাকার শেষ লগ্নেও তার আশপাশে থাকা শীর্ষ নেতাদের ডুয়াল ভূমিকা মুখরোচক গল্প ছিল বিভিন্ন মহলে। কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে নীতি নির্ধারকদের নিয়ে মিটিং করলেও তা মুহূর্তে ফাঁস হয়ে যেত। এমন কথাও শোনা গেছে যে মিটিংয়ে কী হতো তা সরাসরি সম্প্রচারিত করতেন কেউ কেউ মোবাইল অন কলে। এটা জানাজানি হওয়ার পর নেতাদের মোবাইল জমা রেখে মিটিং শুরুর উদ্যোগও নেয়া হতো বলে শোনা যেত। যদিও এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। তবুও প্রবাদ রয়েছে ‘যা রটে তা কিছু না কিছু বটে।’ 

বেগম খালেদা জিয়া শাস্তির খড়গ মাথায় নিয়ে গৃহে অন্তরীণ। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুদূর লন্ডনে। 

খালেদা জিয়ার সময়ের সেসব নেতৃত্ব এখনও বহাল অনেকেই। ফলে ২৮ অক্টোবরের পর ছয় শতাধিক নেতৃত্বের কেন্দ্রীয় কমিটির ৬০-৭০ জনকে কারাগারে নেয়ার পরও যারা ছিলেন তারা নিশ্চুপ হয়ে যাওয়া বা গা ঢাকা দেয়া যে তাদের স্বভাবসূলভ কর্মকাণ্ড নয় তারই বা গ্যারান্টি কী। 

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্দেশনা দেন বটে। কিন্তু সংগঠনের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করে বাস্তবতার নিরিখে। তাকে জোট বেঁধে সাত-পাঁচ বোঝালে তার কিছু করার নেই। কারণ মাঠের নেতা তারা তো দেশেই। তাদের মতিগতি বুঝেই আন্দোলনের রোডম্যাপ তৈরি হয় এটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। 

ফলে ভবিষ্যতে যে আন্দোলনের স্বপ্ন দেখছে বিএনপি। সেটা কেমন কী হবে সেটা নিয়ে এক্ষুণি প্রশ্ন উঠেছে। তবে বাস্তবতার নিরিখে আন্দোলন না হলে বা আন্দোলনে নেতৃত্বের আন্তরিকতা না থাকলে সেখানে তৃণমূলের সংযুক্ত হবার চান্স কম। তাছাড়া উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরেও রয়েছে বড় একটা বিভক্তি। এসব নেতারা যারা নির্বাচন করেছেন কেন্দ্রের নির্দেশনা অমান্য করে এরা কী নিজের বুদ্ধি বিবেচনাতেই এসব করেছেন। এদের কী কোনো মুরব্বী নেই। তারা কী তাদের বলেনি যে তোরা নির্বাচন কর, যা হবে দেখবো? ফলে এ অভ্যন্তরীণ গৃহবিবাদ মেটানোটাই ভীষণ চ্যালেঞ্জের। 

কারণ প্রতিটা আন্দোলনে আইনশৃংখলা বাহিনীর মুখোমুখী কারাগারে যাওয়া সেটা তো তৃণমূলের কর্মীদেরই করতে হয়। লক্ষ্যহীন আন্দোলন, গাছাড়া আন্দোলন, লোক দেখানো আন্দোলন হলে তাতে তারা কেন যুক্ত হবেন এটাও এখন মনে রাখা উচিৎ হবে।

শেয়ার করুন