০১ জুলাই ২০১২, সোমবার, ১১:২১:০৮ অপরাহ্ন


বাংলাদেশের বাণিজ্যিক পরিবেশের অবনমন
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৬-২০২৪
বাংলাদেশের বাণিজ্যিক পরিবেশের অবনমন


বৈষয়িক সংকট, দুর্নীতিসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে অর্থনীতিতে যখন ভঙ্গুর অবস্থা ঠিক সেই সময়ে স্থানীয় একটি সমীক্ষায় পাওয়া বিশ্লেষণমূলক তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের বাণিজ্য পরিবেশে দুই ধাপের অবনমনের কথা জানানো হয়েছে। 

নানা বৈষয়িক কারণে আর্থিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির কারণে জনগণের এখন ত্রাহি মধুসূধন অবস্থা। নুন আন্তে পান্তা ফুরোনোর দেশে সীমিত আয়ের মানুষের এখন অসহায় অবস্থা। জ্বালানি-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে শিল্পখাতে অস্থিরতা। ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পগুলো পড়েছে অস্তিত্বের সংকটে। রফতানিমুখী বৃহৎ শিল্পগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। অন্যতম প্রধান সংকট দলের সরবরাহ। রফতানি আয় কমে যাওয়া এবং একই সঙ্গে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋত সুধসহ পরিশোধের বাড়তি দায় বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। সঞ্চয়ের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গাছে। কোনো দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য নিদেনপক্ষে তিন মাসের রফতানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় থাকা অত্যাবশ্যক। অন্যথায় যে কোনো বৈষয়িক অভিঘাতের কারণে দুর্ভিক্ষজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশের সেই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু বর্তমান অবস্থা দীর্ঘদিন বজায় থাকলে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

এমনি অবস্থায় অর্থনীতিতে প্রয়োজন বৈদেশিক মুদ্রায় বিনিয়োগ, বাণিজ্যের অবাধ, সুনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ। নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরেই বিনিয়োগ পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল। বিদেশি বিনিয়োগ দূরের কথা স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাও ব্যাংক ঋত, এলসি খুলতে সংকটের কারণে বিনিয়োগে উদ্যোগহীন হয়ে পড়েছিল। ব্যবসায়ী সংগঠনসমূহের নেতারা নিয়মিত বিভিন্ন সংকট বিষয়ে সরকারের মন্ত্রী, সাংসদের সঙ্গে পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য দেনদরবার করে আসছিলেন। 

ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন অন্যতম পূর্বশর্ত। স্বীকার করতেই হবে বিগত দেড় দশকে, সড়ক রেল, বিমান, জলযান যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে। তবুও সমন্বয়ের এবং সুশাসনের অভাবে দেশব্যাপী যোগাযোগব্যবস্থা জনবান্ধব হয়নি। চাঁদাবাজি, দুর্বৃত্তদের আগ্রাসনের কারণে নানা সংকট। এমনিতেই যখন নানা সংকটে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বুনিয়াদ ভেঙে পড়ার উপক্রম তখন হোটেল করে সরকার ডলার বিনিময় হার নতুন করে সমন্বয় করলো, ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দিলো। 

দুটি কাজ দেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য, জ্বালানি-বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে চ্যালেঞ্জ আরো ঘনীভূত করেছে। বিনিয়োগ পরিস্থিতির ওপর আরো নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আবার বাজেট ঘাটতি সরকার ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋত গ্রহণ করায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ঋতপ্রাপ্তিতে নানা অসুবিধায় পড়েছে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা এসেছে।

বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ অবনমন বিষয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় উঠে আসা পরিস্থিতি নিয়ে দ্বিমত থাকার কোনো অবকাশ নেই। উন্নত দেশের কথা বাদ দিলাম, উন্নয়নশীল দেশের নিচের সারিতে থাকা অনেক দেশের চেয়েও বাংলাদেশে বিনিয়োগজনিত খরচ এখন অনেক বেশি। বিনিয়োগকারীদের সুবিদার্থে এককেন্দ্রিক সেবাব্যবস্থার কথা বলা হলেও নানা ধরনের অনুমতি, অনুমোদন পেতে বিনিয়োগকারীদের নানা ধরনের হয়রানির কথা অনেক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের কাছে শুনেছি। শুরু হয় ঢাকা অথবা অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় থেকে। পদে পদে বিড়ম্বনা শেষে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়। দুর্নীতিবাজ-ধান্ধাবাজদের মুখোমুখি হতে হয়। এমতাবস্তায় অতিষ্ঠ হয়ে বিনিয়োগ না করেই নিজ দেশে ফিরে গেছেন এমন কিছু সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীর হেনস্তা হওয়ার কাহিনি শুনেছি, দুঃখ-কষ্ট পেয়েছি। গর্বিত বাংলাদেশি হিসেবে আঘাত লেগেছে। আমি দেখলাম, ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান এমপি নিজে বাণিজ্য পরিবেশ অবনমন বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, ওপর এক সাক্ষাৎ কারে প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন দেশের দুর্নীতি এবং সুশাসনের অভাব বিষয়ে কিছু অপ্রিয় সত্য পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখতে হলে বাণিজ্য পরিবেশ অবনমন বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন পর্যায়ে বিরাজমান, অব্যবস্থাপনা দুর্নীতি কঠোর হাতে দমন করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে হবে। কাজগুলো অতি জরুরি এবং দ্রুত সমাধান অপরিহার্য।

শেয়ার করুন