০১ জুলাই ২০১২, সোমবার, ১০:৪৮:৪৬ অপরাহ্ন


দেশকে অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম
আমরা বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৬-২০২৪
আমরা বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম


রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেছেন, আমরা বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন। সরকারি দল, দলকে নিয়ন্ত্রণকারী মাফিয়াচক্র এবং তাদের কতিপয় উচ্ছিষ্ট ভোগী লুটেরা-পাচারকারী ছাড়া বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ বিপর্যস্ত। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুমের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ 

দেশ : কি ভাবছেন সামনের দিনগুলিতে আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে? এইভাবে আন্দোলন করে কি সরকারকে চাপে রাখতে পারবেন? দাবি আদায় করতে পারবেন?

অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম : আমরা বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন। সরকারি দল, দলকে নিয়ন্ত্রণকারী মাফিয়াচক্র এবং তাদের কতিপয় উচ্ছিষ্ট ভোগী লুটেরা-পাচারকারী ছাড়া বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ বিপর্যস্থ। মানুষ দেশের ভবিষ্যত নিয়ে হতাশ, সামর্থ্য আছে এমন সবাই সন্তানদের দেশের বাইরে পাঠায়ে দিতে উদগ্রীব। শিক্ষিত তরুণদের বড় অংশের ভবিষ্যত অনিশ্চিত, অনেকেই নেশাগ্রস্ত, আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে আশংকাজনকভাবে। অদূর ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অবস্থার গুণগত পরিবর্তন না হলে এ সরকারের অধীনে দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হবে এটা খোদ আওয়ামী লীগাররাও বিশ্বাস করছে না। রিজার্ভ ক্রমশ বিপজ্জনক মাত্রায় নিচে নামছে। মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, বিনিয়োগহীনতা, কর্মসংস্থানের অভাব, ব্যাংকের আমানতকারীদের সম্পদ নজীরবিহীনভাবে প্রভাবশালীদের হাতে তুলে দেয়া, খেলাপী ঋণ মাত্রতিরিক্তভাবে অপলোপন, বিদেশী ঋণের কিস্তি এবং সুদ পরিশোধের চাপ ইত্যাদিসহ অর্থনীতির সকল সূচকই জনগণের জন্য দুসংবাদ বয়ে আনছে। এমন একটা নাজুক পরিস্থিতিতেও আমরা জনগণকে আন্দোলন সংগ্রামে তেমনভাবে সক্রিয় করতে পারছি না। আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের উপর সরকারের দমন, পীড়ন, গুম, খুন, মামলা, হামলা, ব্যবসা বাণিজ্য ধ্বংস, পরিবারের অরাজনৈতিক সদস্যদের উপর চাপ প্রয়োগ ইত্যাদি যেমন মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আবার অন্যদিকে বিরোধী রাজনীতির প্রধান দলগুলির নেতাকর্মীদের কাছ থেকে ভবিষ্যতে যে বর্তমানের চেয়ে উন্নত বা গুণগতভাবে পৃথক কোন রাজনীতি পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে তারা নিশ্চয়ত হতে পারছে না। এ পরিস্থিতিটার পরিবর্তন না করতে পারলে, গণবিরোধী এ সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা যাবে বলে আমাদের মনে হয় না। তবে সরকার তার শাসনকালের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন চাপের মুখে পড়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এই চাপ যে আরো তীব্র হতে যাচ্ছে, এটুকু বোঝার জন্য কোন বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। এ পরিস্থিতিতে যদি বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি তাদের অতীত কার্যকলাপ এবং ভুলভ্রাান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে বাস্তবানুগ এবং সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারে তাহলে এবার সরকার আর টিকতে পারবে না।

দেশ : আপনারা কি বিএনপির সাথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন মানে যুগপৎ আন্দোলনে আর নেই?

অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম : আমরা মনে করি, যে বাস্তবতায় যুগপৎ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিলো, সে পরিস্থিতির মৌলিক কোন পরিবির্তন হয়নি। ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের পরে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। মাফিয়াদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ খেয়োখেয়ির কারণে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন সাবেক পুলিশ প্রধান, সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান, এমনকি সাবেক প্রধান বিচারপতি, কিংবা চিকিৎসার নামে পাশের দেশে ভ্রমণরত অবস্থায় একজন সংসদ সদসস্যের মৃত্যুর পরে তার যেসব কর্মকাণ্ডের বিবরণ জনসমক্ষে আসছে তাতে এটা অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, সরকার যতক্ষণ ক্ষমতায় থাকবে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতেই থাকবে, আর এরা যেহেতু জনগণের উপর ভরসা করে দেশ শাসন করছে না, এদের যেহেতু কোন দেশ প্রেম নেই, রাজনীতি নেই, এরা যেহেতু রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদধারী মাফিয়াদের সিন্ডিকেটকে ব্যবহার করে ক্ষমতা ধরে রেখেছে, তাই এদের অপসারণের জন্য জনগণের ব্যাপক ঐক্য গড়ে তোলা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হলে, যুগপৎ ধারায় যত বেশি গণতান্ত্রিক শক্তিকে নামানো সম্ভব আন্দোলনে সফলতার সম্ভাবনা তত বৃদ্ধি পাবে, মানুষের ভীতি কাটবে, সাহস ফেরত আসবে। তাই আমরা যুগপৎ আন্দোলনের পক্ষে। তবে যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে আবার মাঠে নামার আগে, বিগত সময়ের ভুল-ভ্রান্তি এবং সীমাবদ্ধতাগুলি চিহ্নিত করতে হবে, পর্যালোচনা করতে হবে। সেই পর্যালোচনার কাজটি এখনো চলমান আছে। যুগপৎ আন্দোলনের শরীকদের মধ্যে বোঝাপড়াও বাড়ছে।

দেশ : আপনি কি মনে করেন সরকারের কৌশলের কাছে আপনারা হেরে গেছেন?

অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম : না আমাদের তা মনে হয় না। সরকারের কৌশল বলতে তো মানুষ একটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে বুঝে। বর্তমানে যারা নিজেদের সরকার হিসাবে দাবি করছে , তারা তো কোনো রাজনৈতিক দল বা শক্তি নয়, তাই এরা কোনো রাজনৈতিক সরকারও নয়। আমি আগেই বলেছি এরা রাষ্ট্রক্ষমতা জবর দখলকারী মাফিয়া গোষ্ঠীর অনুগত একটি চক্র। এরা জনগণের সম্মতি কিংবা মতামতের ভিত্তিতে ক্ষমতায় আসেনি। এরা জনগণের মতামত প্রকাশের যে সর্বজনস্বীকৃত মাধ্যম সেই নির্বাচন ব্যবস্থা এবং জনগণের ভোটাধিকারকে নস্যাৎ করে, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষপদ দখলকারীদের সাথে অনৈতিক আঁতাতের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে রেখেছে এবং দখল বজায় রাখার জন্য তারা দেশের স্বার্থ, জনগণের স্বার্থ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, নীতি-নৈতিকতা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি সমস্ত কিছু জলাঞ্জলি দিয়ে দিয়েছে। এইসব অপকর্ম কোন রাজনৈতিক দল বা সরকারের আচরণের মধ্যে পড়ে না। তাই তাদের কৌশলের কাছে নয় জনগণ, সরকারি দল এবং সরকারের আয়ত্বে থাকা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের শীর্ষপদধারী কতিপয় চরম দুর্নীতিবাজ এবং তাদের উচ্ছিষ্টভোগীদের একটি চক্রের বর্বরোচিত ক্ষমতা প্রয়োগ, লুটপাটকৃত বেশুমার সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যমে কিছু মিডিয়াবাজ এবং দালালদের ছড়ানো ভয় এবং বিভ্রান্তির কাছে সাময়িক পরাস্ত হয়েছে কিন্তু হেরে যায়নি।

দেশ : জনগণের প্রতি আপনাদের মেসেজ কি?

অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম : আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। আমরা মনে করি, আমাদের দেশ, অনেকাংশে দেশের সার্বভৌমত্ব, দেশের ভবিষ্যত, প্রাণ-প্রকৃতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, নীতি-নৈতিকতা, অর্থনৈতিক ভিত্তি, সম্ভাবনা, কোনোকিছুই আজ আর নিরাপদ নয়। বর্তমান সরকার তাদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার লোভে শুধু দেশের বর্তমান নয়, ভবিষ্যত প্রজন্মকেও বন্ধক দিয়ে দিচ্ছে। যার জন্য সামর্থ্যবান তরুণদের মধ্যে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার হিড়িক পড়েছে। কিন্তু আমরা জানি, আমাদের সকল তরুণ দেশ ছেড়ে যেতে চায় না, সকল মানুষ যেতে পারবেও না। বরং মানুষ একটু রুখে দাঁড়ালে আজিজ-বেনজীর-আনাররা পালিয়ে যাবে। আমাদের দেশ এবং দেশের ভবিষ্যত রক্ষা করতে হলে, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন লক্ষ্য, নতুন রাজনীতি, নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। এ কাজ করতে আমরা যত বিলম্ব করবো আমাদের ক্ষয়ক্ষতি তার তুলনায় দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাবে। সেজন্যে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে এসে সোচ্চার হতে হবে।

শেয়ার করুন