০১ জুলাই ২০১২, সোমবার, ১১:২০:৪৫ অপরাহ্ন


ঈদের ছুটিতেও গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৬-২০২৪
ঈদের ছুটিতেও গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট


কোরবানির ঈদ উপলক্ষে লম্বা ছুটিতে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ পালনের জন্য ঢাকা ছেড়েছে বিশাল জনগোষ্ঠী। কলকারখানা, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ হওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই বিদ্যুৎ চাহিদা অনেক কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু তারপরও এ সময় বনানী আবাসিক এলাকায় দিনে অন্তত চারবার বিদ্যুৎ লোডশেডিং হয়েছে। বেশ অনুভব করতে পেরেছি দেশ জুড়ে সাধারণ জনসাধারণ কতটা অস্বস্তিতে আছে। বর্তমান পরিস্থিতির কারণ সরকারের গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের ব্যর্থতা ও দুর্বল পরিকল্পনা। অনুসন্ধান করে জেনেছি স্থানীয় কোম্পানি সামিট গ্রুপ মালিকানাধীন সাগরে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালটি মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুর চলে যাওয়ায় জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ অন্তত ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট কমে গেছে। 

ফলশ্রুতিতে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক প্রবাভসহ সব গ্যাস ব্যবহারকারী সংকটে পড়েছে। ভাসমান এলএনজি টার্মিনালটি কয়েক মাস আগেই সিঙ্গাপুর থেকে রক্ষণাবেক্ষণ শেষে ফিরে এসেছিল। ৩ জুন ঝড়ের সময় নৌবাহিনীর একটি জলযান ছুটে এসে টার্মিনালটির ক্ষতিসাধন করে। আপদকালীন সময়ে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য একটি স্থাপনায় কীভাবে নৌবাহিনীর জলযান আঘাত হানলো দেশবাসী জানার অধিকার রাখে। জেনেছি কাল জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ ৩ হাজার এমএমসিএফডি থেকে কমে ২৬২২.৫০ এমএমসিএফডি হয়েছে। প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ সব গ্যাস গ্রাহকদের ওপর। সৌভাগ্য ঈদের ছুটি থাকায় গ্যাসবিদ্যুৎ সংকট তীব্র হয়নি। টার্মিনালটি মেরামত শেষে ফিরে আসতে ৬-৮ সপ্তাহ লাগতে পারে। ঈদের ছুটির পর সবকিছু স্বাভাবিক হলে সংকটের গভীরতা অনুভব করা যাবে।

উন্নয়নের মিছিলে থাকা বাংলাদেশে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট অব্যাহত থাকার জন্য দায়ী সরকারের উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিবদের অযোগ্যতা, অদক্ষতা। কেন দেশের গ্যাস নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা এতো নাজুক থাকবে? কেন সঠিক সময়ে গ্যাস অনুসন্ধান, আহরণ করা হয়নি? কেন আজ মূল্যবান কয়লাসম্পদ মাটির নিচে? অপরিকল্পিভাবে আমদানিকৃত জ্বালানিনির্ভর অসংখ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করে সরকার ঘনিষ্ঠ কিছু মহলকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার করে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই, কাতার, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায় সম্পদের পাহাড় গড়েছে কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা ও ব্যাবসায়ী। সংকটে আছে দেশের মানুষ। হয়তো শুনবেন ঈদের পর গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা আসবে, কি অসহায় দেশের মানুষ?

জানা গেছে, আমলাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অধিকাংশ গ্যাস কোম্পানি আছে তীব্র আর্থিক সংকটে। দীর্ঘদিন কর্মকর্তা কর্মচারিদের পদোন্নতি ঝুলে আছে। কয়েকদিন আগে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর গ্যাস চুরি নিয়েও বিশদ আলোচনা হয়েছে। গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক দুর্বৃত্তদের আগ্রাসনে নাজুক হয়ে পড়েছে। আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেও গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে অনতে হাঁসফাঁস করছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। কোম্পানিগুলোর পরিচালনা বোর্ডে থাকা আমলারা কি তাদের কাজগুলো সঠিকভাবে করছেন? কেন গ্যাস কোম্পানিগুলোর পরিচালকম-লীতে অবসরপ্রাপ্ত খ্যাতিমান পেশাদারদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না? প্রধানমন্ত্রী গ্যাস-বিদ্যুৎ সেক্টরের বর্তমান অস্বস্তিকর অবস্থা নিয়ে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? জ্বালানি উপদেষ্টা, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী কি করছেন? তাদের কি কোনো দায়-দায়িত্ব নেই? এভাবে একটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতে সংকট দীর্ঘদিন বজায় থাকতে পারে না।

শেয়ার করুন