০৬ জুলাই ২০১২, শনিবার, ৬:৩৮:৫১ অপরাহ্ন


প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে নজর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের
সরকার চায় বিএনপি রাজপথে ভারত বিরোধী ইস্যুতে ব্যস্ত থাকুক
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৭-২০২৪
সরকার চায় বিএনপি রাজপথে ভারত বিরোধী ইস্যুতে ব্যস্ত থাকুক চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ফাইল ছবি


ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চায় বিএনপি শুধু ভারত বিরোধী ইস্যু নিয়ে রাজপথে ব্যস্ত থাকুক। ব্যস্ততার কারণে সরকারের ভেতরে রাঘব-বোয়ালদের দুর্নীতি নিয়ে যেনো কথা না বলে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সীমান্তনদী-বিদ্যুৎখাতে ১০ সমঝোতা স্মারক সই হয়। ‘চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর যাতে ভারতের উত্তর-পূর্ব, বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলের জন্য ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে তাদের আগ্রহ ও আমাদের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’ ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রাজনৈতিক সংহতি ও সহযোগিতার নবক্ষেত্র উন্মোচন এবং দুই দেশের সম্পর্ক যে নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে তাকে আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।


আর এসব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুই প্রতিবেশী দেশের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সম্পর্কের সম্পূর্ণ বিষয় যার মধ্যে অভিন্ন নদীর পানিবন্টন, নিরাপত্তা ও বাণিজ্যের বিষয়টি উল্লেখযোগ্যভাবে আলোচনায় এসেছে। বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উভয় দেশের স্বার্থে একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে ডিজিটাল এবং সবুজ অংশীদারিত্বের জন্য যৌথ দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্মত হয়েছেন বলে তিনি জানান। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। 


১০ সমঝোতা স্মারক নিয়ে হৈ চৈ

প্রধানমন্ত্রীর নয়াদিল্লি সফরে ভারতের সঙ্গে যে ১০টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এগুলি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়ে গেছে তোলপাড়। প্রধানমন্ত্রীর নয়াদিল্লি সফরে ভারতের সঙ্গে যে ১০টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, সেগুলো ‘গোলামির নবতর সংস্করণ’মাত্র বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, কানেকটিভিটির নামে ভেতরে ভারতের এক অংশ থেকে আরেক অংশে রেল যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ‘করিডর’ দেওয়া হয়েছে। এতে দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জটিলতার মধ্যে পড়বে বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, জাতীয় স্বার্থবিরোধী এসব চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না।

সরকারের বাকিরা কি বললো

বিএনপি পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য বিবৃতিকে বিভিন্নভাবে কটাক্ষ্য করে মন্তব্য করে সরকারের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সফরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি নয়, সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, ‘এইবার কিন্তু কোনো চুক্তি হয়নি। মির্জা ফখরুল, সমঝোতা স্মারক আর চুক্তি, এই দুইটা কি এক? পড়াশোনা করেন না? ডিপ্লোমেসির ভাষা জানেন না?’ আবার বিএনপির ঘুম হারাম হয়ে গেছে বলে মন্তব্যও করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপি ভারতের দাসত্ব চেয়েছিল মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মনে আছে, নরেন্দ্র মোদি যখন ক্ষমতায় আসে প্রথম দিন সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে বিএনপি নেতারা ভারতের হাইকমিশনের সামনে হাজির। হাইকমিশন বন্ধ, মিষ্টি আর ফুল নিয়ে হাজির। এই হলো বিএনপি।’ ‘তারা ভারতের বিরোধিতা করে কিন্তু ওয়াশিংটনের ইচ্ছায় ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির অঙ্গীকার করে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে।’ এদিকে ভারতের সঙ্গে সই করা বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারকের সব ধারা না পড়ে এবং না বুঝেই বিএনপি অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। তিনি বলেন, বিএনপি সমঝোতা স্মারকের ধারাগুলো খন্ডিতভাবে তুলে ধরে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।

আওয়ামী লীগ যেভাবে লাভবান হচ্ছে

আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের হাই কমান্ড বিএনপি’র ভারত বিরোধী বক্তৃতাগুলি বেশ উপভোগ করছে। তারা মনে করেন, বিএনপি এগুলো নিয়ে থাকুক। ভারতের সঙ্গে যে ১০টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে এর বিরুদ্ধেই রাজপথ কাঁপিয়ে তুলুক। এতে বিভিন্নমুখী লাভ আছে সরকারের। লাভ হচ্ছে সরকার দেশে-বিদেশে বলতে পারবে বিএনপি’র মত রাজপথে প্রধান বিরোধী দল প্রকাশ্যেই কথা বলছে। আওয়ামী লীগ মনে করে বিএনপি কোন ইস্যুতে কথা বলছে বা মাঠ গরম করতে তা তো পশ্চিমারা দেখবে বিএনপি কথা বলতে পারছে এবং তাদের বলতে দেয়া যাবে। এছাড়া বিএনপি’কে একটি ইস্যুতে ব্যস্ত রাখা হলো। বিএনপি যে একটি ভারত বিরোধী কট্টর দল তা প্রমাণ করিয়ে দেশটিকে দেখানো যে, প্রতিবেশী দেশ কাকে পছন্দের তালিকায় রাখবে। অন্যদিকে সরকারের চীনমুখী যাত্রার পরিবর্তে বিএনপি’র ভারত বিরোধী মাঠ গরম বক্তৃতার নেতিবাচক বার্তাই ভারতের কাছে চলে যাবে বলেও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড মনে করেন। উল্লেখ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুলাইয়ে রাষ্ট্রীয় সফরে চীন যাচ্ছেন। বেইজিংয়ে প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বাংলাদেশের বাজেট-ঘাটতি পূরণে আর্থিক সহায়তা এবং নতুন প্রকল্পে অর্থায়নের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। আবার প্রধানমন্ত্রীর সফরের ঠিক আগে চীনের ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও ঢাকা সফর করে গেছেন। সফরের আগে এক দফা প্রস্তুতিমূলক আলোচনা হয়েছে ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত কড়া নজর রাখছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরও বেরিয়েছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই চীন সফরের দিকে নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্রও। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজপথে বিএনপি’র ভারত বিরোধী বক্তব্য-বিবৃতির ফল কে ঘরে তুলে নেবে তা সময় বলে দেবে। 

শেয়ার করুন