০১ জুলাই ২০১২, সোমবার, ১০:২৬:৪৯ অপরাহ্ন


খালেদা জিয়ার মুক্তিতে কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৬-২০২৪
খালেদা জিয়ার মুক্তিতে কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর


খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি। এতদিন অন্যান্য দাবির সঙ্গে ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তি। এবার প্রধান্য দেয়া হচ্ছে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি। এভারকেয়ারে চিকিৎসারত খালেদা জিয়া। তার শারীরিক অবস্থা খুবই নাজুক। এমনি পরিস্থিতিতে তার বিদেশে চিকিৎসা অনিবার্য। কিন্তু এতে বাধা। ফলে বিএনপি এখন খালেদা জিয়ার মুক্তিতে কর্মসূচি দেবে এবং আন্দোলন করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ২৫ জুন মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই জানান দেন তিনি। 

‘খালেদার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি হবে”

গত ২৪ জুন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবণতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা হয়েছে যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও সংবিধান বিরোধী। অবৈধ সরকার তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে দেশনেত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছে। দলের স্থায়ী কমিটির সভায় অনতিবিলম্বে দেশনেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয় একই সঙ্গে তার মুক্তির আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়।

হৃদপিন্ডে ‘পেস মেকার’ বসার পরে খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘স্থিতিশীল’ বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে বিএনপি চেয়ারপারসনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানাতে গিয়ে একথা জানান। তিনি বলেন, সকাল পর্যন্ত আমি যতটুকু জানি, গতকালকে তাকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে, তা করার কথা না। তিনি সিসিইউতে ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা এডজাস্ট করতে পারেন না যেকারণে সিসিইউ‘র ফ্যাসিলিটিজগুলো কেবিনে নিয়ে তাকে শিফট করা হয়েছে।

সেখানে তিনি এখন পর্যন্ত স্ট্যাবেল আছেন

রোববার এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার জন্য অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তার হৃদপিন্ডে ‘পেস মেকার’ বসানো হয়। খালেদা জিয়ার হৃদরোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। হার্টে তিনটি ব্লক থাকায় আগে একটা রিং পরানো হয়েছিল। পরে বিদেশি চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে পেস মেকার বসানো হয়। গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।

খালেদা জিয়া ওপরে নির্মমতা

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়া। সেই কারণেই তাকে একেবারে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে, যদিও এতে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাকে সাজা দিয়ে এবং পরবর্তিকালে হাইকোর্টে আরও বেশি সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে। আপনারা জানেন, দুই বছর একটা পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে ছিলেন সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বার বার চেষ্টা করার পরেও সেখানে ভালো চিকিৎসক পাঠানো হয়নি। বহু চেষ্টার পর যখন তাকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো সেখানেও তিনি সুষ্ঠু চিকিৎসা পাননি।

তিনি বলেন, এরপর যখন তাকে বাসা (গুলসানের ফিরোজা) নিয়ে আসা হলো সেটাও আবার শর্ত সাপেক্ষে, তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না, দেশেই চিকিৎসা নিতে হবে। তখনই তার ধরা পড়লো লিভার সিরোসিস, এটা ছোটখাটো রোগ নয়, সিরোসিস-ইটস এ মেজর ডিজিজ। তখন ডাক্তাররা আমাদেরকে বলেছিলেন যে, লিভার ট্রান্সপারেন্টেশন ছাড়া তার কোনো পথ নেই। এটা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। ফখরুল বলেন, আপনারা জানেন, আমরা কম চেষ্টা করিনি। সরকারের এখানে কোনো কৃতিত্ব নেই। আমরা এখন পর্যন্ত যেটুকু করেছি সেটুকু হচ্ছে তার পরিবার এবং দলের চেষ্টাতেই সেটা হয়েছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিংস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তারদের নিয়ে এসেছি। তারা যে প্রসিজিউর করেছেন সেই প্রসিজিউরে তিনি এখন পর্যন্ত টিকে আছেন। এটা কোনো সমাধান নয়। একমাত্র সমাধান হচ্ছে তার লিভার ট্রান্সপারেন্ট করা। তার যে অনেকগুলো অসুখ আছে সেই অসুখের জন্য তাকে এমন চিকিৎসা সেন্টারে পাঠাতে হবে সেখানে তার সঠিক চিকিৎসা করতে হবে অন্যান্য অসুখগুলো কনট্রোল করে, এটাই আমরা বার বার করে বলছি।

প্রধানমন্ত্রীর কারণে খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত

মির্জা ফখরুল বলেন, অভিজ্ঞতার থেকে বলছি, তাকে (খালেদা জিয়া) বাইরে পাঠানোর জন্য সব ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিলো প্রায় তার পরিবারেরা আবেদন করে। ফাইনালি যখন এটা (আবেদন) প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেছে প্রধানমন্ত্রী এটা রিজেক্ট করেছেন। শুধু এটা নয়, আমরা বিভিন্ন মিশনগুলোর কাছেও চিঠি দিয়েছিলাম। তারা চেষ্টা করেছেন, তারা বার বার চেষ্টা করেছেন, ফেরত এসেছেন। তারা বলেছেন যে, সরি ভাই, উনি শুনলেন না- সি ইজ ভেরি ভিনডেক্টিভ, এই উচ্চারণটা করেছেন।

এর উদ্দেশ্যটা কি প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘উদ্দেশ্যটা হচ্ছে, রাজনীতি থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখা। দেখেন ২০১৮ সালের নির্বাচনের ঠিক আগে আগে তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হলো এবং তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হলো। এই যে বিষয়টা-তারপর থেকে তিনি যাতে কোনো মতেই মুক্তি না পায় তা চলছে এখন পর্যন্ত।

শেয়ার করুন