৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৮:১১:৪১ অপরাহ্ন


বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পার হবে ভারতের ট্রেন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৬-২০২৪
বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পার হবে ভারতের ট্রেন দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর


বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের ট্রেন তাদের পূর্ব প্রান্তে যাবার ট্রানজিট পাওয়ার বিষয় সমঝোতা হয়েছে। এ ব্যাপারে ভারতের দেয়া প্রস্তাবে বাংলাদেশের সম্মতি মিলেছে বলে খবরে প্রকাশ। এবং আগামী মাসেই এমন এক ট্রেন পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করবেও বলে জানানো হয়েছে। এর আগেও বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ভারতের ট্রেন চলেছে। তবে সেটার ধরন আর এবারেরটা এক নয়। সেটা ছিল ভারত থেকে ট্রেন এসে বাংলাদেশের সীমান্তে দাঁড়ালে বাংলাদেশের ইঞ্জিন, ভারতীয় বগিগুলো বাংলাদেশের পরিচালক দিয়ে টেনে নিয়ে আসা হতো। এবার আর সে প্রক্রিয়া নয়। এবার ভারতীয়রাই বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ট্রেন চালাকে। এ প্রস্তাবনাতে সরাসরি ভারতের ট্রেন বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্বাঞ্চলের যে সেভেন সিস্টার সেখানে চলাচল করবে। মূলত চিকেন নেক নিয়ে কিছুটা শঙ্কা ভারতের। সেটা এড়াতেই বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রেন চলাচল বা তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রিগুলো আনা-নেয়া করার নিমিত্তে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করবে। 

একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে তিস্তার পানি বণ্টন সে ব্যাপারে একটা কারিগরি টিম বাংলাদেশ ও ভারতের উভয় অংশে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করবে বলে জানানো হয়েছে। এরপর তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা হবে। যদিও এমন সিদ্ধান্তে পশ্চিমবঙ্গের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি দিল্লীর কঠোর সমালোচনা করে ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তিনিও প্রত্যাশা করেন এবং বিরাজমান সম্পর্ক অটুট রেখে পানি বণ্টন ইস্যুতে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত না দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। যে সিদ্ধান্ত হবে পশ্চিমবঙ্গের সম্পূর্ণরূপে স্বার্থের পরিপন্থি বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। 

গত ২২ জুন শনিবার ভারতের নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মোট দশটি সমঝোতা স্মারকে সই করে দুই দেশ। ওই বৈঠক শেষে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করতে যেয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা বলেছেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে ব্যবহার করে ভারতের একটা অংশ থেকে ভারতেরই আরেকটা অংশে রেলওয়ে সংযোগ চালু করতে দুই নেতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।

ট্রানজিট চালুর পর ভারতের ট্রেন বাংলাদেশের দর্শনা দিয়ে প্রবেশ করে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি সীমান্ত দিয়ে ভারত প্রবেশ করবে। পরীক্ষামূলকভাবে আগামী মাসেই বাংলাদেশ দিয়ে ভারতের রেল চলবে বলে জানিয়েছেন বিনয় কোয়াত্রা। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে দুই দেশের নেতাদের বৈঠকে মূলত বাংলাদেশের রেল ট্রানজিটের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পায়। একই সঙ্গে তিস্তা নদীর পানির সঠিক ব্যবহারে তিস্তা প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়েছে দুই সরকার প্রধানের এই বৈঠকে।

দুই প্রধানের বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, “তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কারিগরি দল শীঘ্রই বাংলাদেশ সফর করবে।’’ একইভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে অনুষ্ঠিত এই বৈঠককে ফলপ্রসূ বলে দাবি করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা রাজনীতি ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও যোগাযোগ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি”। টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দেশটিকে কোনো সরকারপ্রধানের এটাই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর।

ভারত আগ থেকেই ট্রেন ট্রানজিট চেয়ে আসছে

বৈঠকের অনেক আগ থেকেই দুই প্রধানের মধ্যে কী কী আলোচনা ও সমঝোতা হতে পারে তা নিয়ে অনেক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়া গত ১৫ জুন এক প্রতিবেদনে জানায়, “উত্তর পূর্বভারতের সঙ্গে গোটা ভারতের সংযোগ গড়ে তুলতে এবার নয়া বিকল্প রুটের ভাবনা চিন্তা করছে রেল দফতর। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে একটা নতুন রেলপথ আনার কথা ভাবছে রেল দফতর। শিলিগুড়িতে যে রেলপথ রয়েছে সেটার উপর চাপ কমিয়ে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে রেল নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে উত্তর পূর্বভারতের সঙ্গে ভারতের রেল যোগাযোগ আরও নিবিড় হতে পারে। এই নয়া রুটের ভাবনার অন্যতম কারণ হল চিকেন নেককে বাইপাস করে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে রেললাইনকে নিয়ে যাওয়া। সেই সঙ্গেই ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যিক যে চুক্তি ছিল সেই মোতাবেক এই নতুন লাইনকে আরও দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়িত করার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।

পত্রিকাটি তাদের অনলাইনে আরো জানায় 

‘এদিকে ২০১৭ সালে যখন ডোকালাম সমস্যা হয়েছিল তখন সবথেকে চিন্তার বিষয় হয়েছিল যে এই ‘চিকেন নেক।’ সেখানে রেললাইনের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীকে পৌঁছে দেওয়া একটা সমস্যার কারণ হতে পারে। একই লাইনে সিভিলিয়ান ও মিলিটারি যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হলে আখেরে সমস্যা হতে পারে। সে কারণেই একটি পৃথক লাইন বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে করার ব্যাপারে চেষ্টা করা হচ্ছে । কারণ চিকেন অত্যন্ত সংবেদনশীল এলাকা। সেক্ষেত্রে সেই চিকেন নেককে এড়িয়ে রেললাইন করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। মূলত ২২ কি:মি: এলাকা জুড়ে এই চিকেন নেক রয়েছে।’ 

টাইমস অব ইন্ডিয়া তাদের ওই প্রতিবেদনে আরো জানায়, ‘বাংলাদেশকে ছুঁয়ে অন্তত ১৪টি নতুন রুট খোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে ৮৬১ কিমি এলাকা জুড়ে এটা বিস্তৃত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এটাই হবে উত্তরপূর্বের সঙ্গে সংযোগকারী বিকল্প রুট। বর্তমানে যে রেললাইন রয়েছে সেটাকে আরও উন্নত করা। সেই সঙ্গেই বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে নতুন করে রেললাইন পাতার ব্যবস্থা করা হবে। তবে এই বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে রুট তৈরি করা সম্ভব হলে উত্তরপূর্ব ভারতের সঙ্গে কলকাতার দূরত্ব আরও কমে যেতে পারে। এই নতুন রুটে বাংলাদেশে সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি হতে পারে। এর মাধ্যমে পর্যটন ও ব্যবসারও উন্নতি হতে পারে। সেই সঙ্গেই চিকেন নেক এলাকা জাতীয় সুরক্ষার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই এলাকাকে এড়িয়ে গিয়ে রেললাইনের নতুন রুট করার চিন্তাভাবনা চলছে। এর জেরে উত্তরপূর্ব ভারতের সঙ্গেও কলকাতার যোগাযোগ আরও নিবিড় হবে। সেই সঙ্গেই বিকল্প একটা রুটও তৈরি করা সম্ভব হবে।’ 

ভারতের পরীক্ষামূলক ট্রেন আগামী মাসেই

বিবিসি বাংলা জানায়, বর্তমানে পাঁচটি রুটে বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে তিনটি যাত্রীবাহী ইন্টারচেঞ্জ, বাকি দুটি পণ্যবাহী। বর্তমান পদ্ধতিতে ভারতীয় ট্রেন সীমান্তে আসার পর বাংলাদেশি ইঞ্জিনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসে। বাংলাদেশি চালক তা চালিয়ে আনেন। ফেরার সময়েও একই রকম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কিন্তু পরীক্ষামূলক যাত্রার জন্য ভারতের সাম্প্রতিক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে দেশটির এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ট্রেন নিতে চায়। তবে ভারতের নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী ট্রেনটি হলদিবাড়ী থেকে যাবে ভুটান সীমান্তবর্তী ডালগাঁও স্টেশন পর্যন্ত।

শনিবার দুই দেশের সরকার প্রধানের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা বলেছেন, রেলওয়ে ট্রানজিট ইস্যুটা দুই দেশের নেতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণভাবে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, “এই ট্রানজিট চালু হলে নিজ দেশের মধ্যে রেলপথে দূরত্ব অনেকখানি কমবে ভারতের। ভারত আগে থেকেই এটা চেয়েছিল। এটা কিভাবে বাস্তবায়ন হবে তারও একটি পরিকল্পনা এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে”। এর ফলে গেদে-দর্শনা সীমান্ত থেকে থেকে হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রুটকে সংযুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব কোয়াত্রা বলেছেন, এই ট্রানজিট চালু হলে এটা উভয় দেশের মানুষ ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। একই দিন অর্থাৎ শনিবার বাংলাদেশের রাজশাহী থেকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা রুটে ট্রেন চালু করতে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারকও সই হয়।

তিস্তা প্রকল্প কে করবে ভারত না চীন?

তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘসূত্রতার কারণে চীন এগিয়ে এসেছে একটি সমাধান নিয়ে। সে অনুযায়ী এমন অবস্থায় তিস্তা নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা করে বাংলাদেশ। যেটি তিস্তা মহাপরিকল্পনা হিসেবেই পরিচিত। বন্যা প্রশমন, ভাঙন হ্রাস ও ভূমি উদ্ধারে তিস্তা মহাপরিকল্পনা করে বাংলাদেশ। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের উজানে একটি বহুমুখী ব্যারেজ নির্মাণেরও চিন্তা রয়েছে বাংলাদেশের। দীর্ঘদিন তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় বাংলাদেশ এই মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। যেটি নিয়ে একটি রূপরেখাও তৈরি করা হয়েছে।

এতে বাংলাদেশ ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু সেখানে চীনের এক কর্মকাণ্ডকে ভারত সন্দেহের চোখে দেখা শুরু করে এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করতে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হঠাৎ বাংলাদেশের তিস্তায় যে প্রকল্প চীন করে দিতে চাচ্ছে সেটা এখন ভারত করে দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছে। এ বৈঠকে সে আগ্রহের কথাই তারা জানান দেয়। এতে করে এ মহা পরিকল্পনার প্রকল্পের ভবিষ্যত কী এটা নিয়ে নতুন শঙ্কার সৃষ্টি হলো। চীনের আগ্রহের পর ভারতের আগ্রহ হলে বন্ধুত্বের নিরিখে কে পাবে কাজ নাকি আদৌ এ প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে না সেটাই এখন প্রশ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। 

বৈঠক শেষ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব কোয়াত্রা বলেছেন, “তিস্তা রেস্টোরেশন প্রকল্পে যুক্ত হবে ভারত। এ নিয়ে দুই দেশের নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে”। তবে এটি কি বাংলাদেশের প্রস্তাবিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা কি-না সেটি স্পষ্ট করেননি বিনয় কোয়াত্রা। তিনি বলেন, “তিস্তার পানিকে সঠিকভাবে ম্যানেজ করা যায় তাহলে শুষ্ক মৌসুমে অনেক সুবিধা পাবে দুই দেশ। তাই এই প্রকল্পে ভারত যুক্ত হতে চায়।” বৈঠক শেষে এই জট কাটাতে ভারতের পক্ষ থেকে উদ্যোগের কথাও জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, “তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে একটি কারিগরি দল বাংলাদেশে যাবে শিগগিরই”।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর ১৪ বছরেও এই সংকটের সমাধান হয় নি। এখনো এটি রয়ে গেছে আলোচনার স্তরে। 

বাংলাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া 

বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতের ট্রেন এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে চলে যাবে এতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল তাদের শঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন। বিবৃতিতে তারা বলছেন ভারতের এটা সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা। তাদের ট্রেন তাদের সম্পদ। কোনো কারণে নিরাপত্তার হুমকি মনে করলে ভারত তাদের সম্পদের নিরাপত্তার জন্য তাদের দেয়া গার্ড মোতায়েনও করতে পারে। এতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। তাছাড়া ভারত কেন পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে মরিয়া সেটা কারোরই অনুধাবনের বাকি নেই। যে কারণে চিকেন নেক শঙ্কা সেটা চীন ছাড়া আর কিছু না। একই কারণে সেভেন সিস্টারের নিরাপত্তা বলায় ঠিক রাখতে বহুমুখী পথ তৈরি চাইছে তারা বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে। এটাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বা বাংলাদেশের নিরপেক্ষতা বজায় রাখাই কষ্টসাধ্য হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া বাংলাদেশ দীর্ঘদিন থেকে চিকেন নেক ব্যবহার করে নেপালের সঙ্গে বাণিজ্যের সুযোগ লাভ করতে পারেনি। ভারত সেটা দেয়নি। সেখানে ভারত এত বিশাল সুযোগ নিয়ে নিচ্ছে তাহলে বাংলাদেশকে কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে যদি দুই দেশ দুই দেশের প্রকৃত বন্ধুই হয়। অনেকেই বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রঅ নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে আত্মসমর্পন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পরেও মোদী সরকারের মন গলাতে পারেননি শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়েও তিস্তা প্রকল্পে ব্যর্থ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগকে বিতর্কিতভাবে ক্ষমতায় রেখে স্বার্থ হাসিল করলো ভারত সরকার। এসব বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্নজনের বিবৃতি বক্তব্য প্রধান্য পাচ্ছে। 

দিল্লি-ঢাকা স্বাক্ষরিত চুক্তিসমূহ 

দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক আরো সুসংহত করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে ঢাকা ও নয়াদিল্লি ১০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। এসব সমঝোতা স্মারকের মধ্যে সাতটি নতুন ও তিনটি নবায়ন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফনকালে এখানকার হায়দ্রাবাদ হাউসে দুই দেশের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনার পর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। বাসস জানায়, আলোচনায় মূলত সংযোগ, জ্বালানি, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, সমুদ্র সম্পদ, বাণিজ্য, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন অংশীদারিত্বের প্রাধান্য পায়।

প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকের পর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সমুদ্র অর্থনীতি ও সামুদ্রিক সহযোগিতা, রেলওয়ে, সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, একাডেমিক সহযোগিতা, মৎস্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক বিনিময় প্রত্যক্ষ করেন। বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের সাতটি নতুন সমঝোতা স্মারকের মধ্যে, বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলে সমুদ্র অর্থনীতি ও সমুদ্র সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

ভারত মহাসাগরে সমুদ্রবিজ্ঞান ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যৌথ গবেষণার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ওশেনোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিওআরআই) এবং ভারতের কাউন্সিল অব সাইন্টিফিক এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর)-এর মধ্যে আরেকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। ডিজিটাল পার্টনারশিপের দুটি পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি ও একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ভারত- বাংলাদেশ সবুজ অংশীদারিত্বের অভিন্ন ভিশন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে রেল সংযোগের একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছে।

একটি যৌথ ক্ষুদ্র উপগ্রহ প্রকল্পে সহযোগিতার লক্ষ্যে ভারতের জাতীয় মহাকাশ প্রচার ও অনুমোদন কেন্দ্র (ইন-স্পেস) ও মহাকাশ বিভাগ, ভারত প্রজাতন্ত্রের সরকার, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আরেকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ (ডিএসসিসি), ওয়েলিংটন ও ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) মিরপুরের মধ্যে কৌশলগত ও অপারেশনাল স্টাডিজ’র ক্ষেত্রে সামরিক শিক্ষা সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়। তিনটি নবায়নকৃত সমঝোতা স্মারক হল, মৎস্য সহযোগিতা স্মারক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা স্মারক এবং স্বাস্থ্য ও ওষুধের সহযোগিতার ক্ষেত্র বিষয়ক সমঝোতা স্মারক।

শেয়ার করুন