০১ জুন ২০১২, শনিবার, ০৬:২৫:৩২ অপরাহ্ন


আইএইপিএমপি ২০২৩ উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১২-২০২৩
আইএইপিএমপি ২০২৩ উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা


জাপানি ব্যবস্থাপত্রে প্রণীত পিএসএমপি ২০১০ এবং পিএসএমপি ২০১৬ ব্যর্থ হয়েছে। সেই জাপানি সংস্থার ব্যবস্থাপত্রে প্রণীত ২০৫০ নাগাদ বাস্তবায়ন করার জন্য সুপারিশকৃত আইএইপিএমপি ২০২৩ অতি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। মনে হয় না এটি প্রস্তুতকালে কেন একই সংস্থার প্রণীত দুটি মহাপরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। কেন ক্রমাগত আমদানিকৃত প্রাথমিক জ্বালানিনির্ভর জ্বালানি খাত নিদারুণ জ্বালানি সংকটে সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তির বিশ্বায়নের যুগে এতো দীর্ঘকালীন মহাপরিকল্পনার পরিবর্তে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা করে নির্দিষ্ট বিরতিতে পর্যালোচনা করা যুক্তিযুক্ত।

প্রণীত পরিকল্পনায় ২০৫০ বিদ্যুৎ চাহিদা প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৭১ হাজার ৫১২ মেগাওয়াট এবং এর বিপরীতে উৎপাদন ক্ষমতার সুপারিশ করা হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার মেগাওয়াট, যা চাহিদার তুলনায় ৫৫ শতাংশের বেশি। দুনিয়ার খুব কম দেশেই ২০-২৫ শতাংশের বেশি রিজার্ভ মার্জিন থাকে। বর্তমানে ২০২৩ সর্বোচ্চ চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করেনি। ২৭ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশ ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদানের সংকটে আছে। জ্বালানি সংকট আর সঞ্চালন বিতরণ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। ৫০ শতাংশ আমদানিনির্ভর প্রাথমিক জ্বালানি যোগান দিতেই তীব্র সংকটে ভুগছে জ্বালানি খাত। জানি না কোন ভিত্তিতে ২০৫০ সাল নাগাদ ৭১ হাজার ৫১২ মেগাওয়াট চাহিদা এবং ১ লাখ ১১ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা অর্জনের সুপারিশ করা হয়েছে। উচ্চাভিলাষী এবং বাস্তবায়ন অযোগ্য এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবতার নিরিখেই পরিবর্তন করতেই হবে।

ভুল পরিকল্পনা এবং ভ্রান্ত বাস্তবায়ন কৌশলের কারণেই বিদ্যুৎ উৎপাদন দেশীয় জ্বালানিকে অবজ্ঞা করে আমদানির দিকে ঝুঁকেছে। বিশ্বজ্বালানি বাজার নানা কারণেই অস্থির হয়ে পড়ে। জ্বালানি সাপ্লাই চেন ব্যাহত হয়। বাংলাদেশের মোট উন্নয়নশীল দেশ কখনোই জ্বালানির বিশ্ববাজারের উচ্চমূল্যের চাপ সইতে পারবে না। ভৌগোলিক বাস্তবতার কারণেও বাংলাদেশের পক্ষে জ্বালানি আমদানি অবকাঠামো গড়ে তোলা চ্যালেঞ্জিং এবং ব্যয়সাপেক্ষ। যতটুকু আমদানিকৃত কয়লা এবং এলএনজি অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে সেখান থেকেই এটা সত্য প্রমাণিত। 

মহাপরিকল্পনায় ২০৫০ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতার ১১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট হবে কয়লার (১০ শতাংশ), ৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট জ্বালানি তেলের (৬ শতাংশ), ২৯ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট গ্যাস ও এলএনজির (২৭ শতাংশ), ৪ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (৪ শতাংশ), ২০ হাজার মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎ (১৮ শতাংশ), ৬ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ (৬ শতাংশ), ১১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট হাইড্রোজেন (১০ শতাংশ), ৫ হাজার মেগাওয়াট অ্যামোনিয়াভিত্তিক (৫ শতাংশ), ১ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ (১ শতাংশ) এবং ১৫ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট ভারত থেকে আমদানি (১৪ শতাংশ) করা হবে। 

হাইড্রোজেন এবং অ্যামোনিয়া নিয়ে উন্নত বিশ্বে এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। এখনো বাণিজ্যিকভাবে এগুলো সুলভ জ্বালানি হিসেবে গৃহীত হয়নি। বাংলাদেশের সৌরবিদ্যুৎ থেকে বিশেষত রুফ টপ সোলার, সৌর সেচ ব্যবস্থা, ফ্লোটিং সোলার এবং গ্রিড সংযুক্ত ব্যাটারি সংযোজিত সোলার থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবদান লাভের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পরিকল্পনায় জোর দেওয়া হয়নি। গ্যাস, এলএনজি নির্ভরতার ক্ষেত্রেও আমদানিকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশকে অবশ্যই নিজস্ব জ্বালানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে আমদানিকৃত জ্বালানি নির্ভরতা কমাতে হবে। প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করে সর্বোচ্চ ২০-২৫ শতাংশ রিজার্ভ মার্জিন রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদান সীমিত করতে হবে। 

আশা করি নতুন সরকার মহাপরিকল্পনাটি নিয়ে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে বাস্তবায়নযোগ্য সঠিক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করবে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে না। বাংলাদেশ উন্নত অর্থনীতির দেশ হতে পারবে না।

শেয়ার করুন