জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান কমেছে এবং বেকারত্বের হার কিছুটা বেড়েছে। এই খবর প্রকাশিত হওয়া পর ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা কিছুটা স্বস্তিতে আছেন। এখন ফেডের কাছে আরো জোরালো প্রমাণ এসেছে যে, মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে তারা জিততে যাচ্ছে। ফলে চলতি মাসের শেষ দিকে মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকে নীতি সুদহার হ্রাসের বিষয়ে আরো জোরালো তর্কবিতর্ক হওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, জুন মাসের বৈঠকের সময় ফেডের কাছে যে তথ্য ছিল, তাতে দেখা গেছে, মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ের গতি কমে গেছে। ফলে চলতি বছর যদি নীতি সুদহার কমানোও হয়, তাহলে বড়জোর একবার তা কমানো হতে পারে। বিভিন্ন সূচকে দেখা গেছে, মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম এপ্রিল মাসের তুলনায় বাড়েনি। সেবা ও উৎপাদন খাতের গতি কমেছে। সেই সঙ্গে ছাঁটাইও বেড়েছে।
গত ৫ জুলাই শুক্রবারের কর্মসংস্থান-সম্পর্কিত প্রতিবেদনে অবশ্য এমন কিছু নেই যে মনে হতে পারে, দেশটির শ্রমবাজারে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে। জুন মাসে দেশটিতে অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে-নতুন করে কর্মসংস্থান হয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার মানুষের।
জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার কিছুটা বেড়ে ৪.১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সেই সঙ্গে কিছু পরিসংখ্যান সংশোধন করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, গত তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে প্রতি মাসে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পরিমাণ কমে ১ লাখ ৭৭ হাজারে নেমে এসেছে।
এটা যথেষ্ট নয়। ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর লিসা কুকের হিসাব অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে যে হারে অভিবাসন ও জনসংখ্যা বাড়ছে, তার সঙ্গে তাল মেলাতে প্রতি মাসে গড়ে ২ লাখ কর্মসংস্থান দরকার।
৫ জুলাইয়ের প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, জুন মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঘণ্টাপ্রতি মজুরি বেড়েছে ৩.৯ শতাংশ, মে মাসের তুলনায় যা ০.৩ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ গত তিন মাসে বার্ষিক হিসাবে মজুরি বৃদ্ধির হার ৩.৬ শতাংশ। ফেডের ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা, তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গতির কাছাকাছি এ গতি।
তবে চলতি মাসের বৈঠকেই যে ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমাবে, তেমনটা আশা করা হচ্ছে না। কিন্তু শ্রমবাজারের যেসব তথ্য-উপাত্ত এখন হাতে আসছে, তাতে পরের মাসে সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা আছে।
অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, এখন যে তথ্যউপাত্ত দেখা যাচ্ছে অর্থাৎ কর্মসংস্থানের গতি কমে যাওয়া বা বেকারত্ব বৃদ্ধি, তাতে চলতি বছর নীতি সুদহার হ্রাসের পক্ষে যৌক্তিকতা বাড়বে। তারা মনে করছেন, ফেডের পরবর্তী বৈঠকেই এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হতে পারে এবং আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই তা কমতে পারে, যদি তথ্যউপাত্ত অনুকূল থাকে।
এদিকে জুন মাসের বৈঠকে ফেডারেল রিজার্ভের নীতিনির্ধারকেরা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, চলতি বছর একবার নীতি সুদহার কমানো হতে পারে। সেটাও হতে পারে বছরের শেষ ভাগে ডিসেম্বরে।
ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেছিলেন, সুদহার কমানোর আগে তারা আত্মবিশ্বাসী হতে চান যে মূল্যস্ফীতি ফেডের লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশের ঘরে নেমে আসছে। তিনি আরো বলেছিলেন, শ্রমবাজার হঠাৎ করে দুর্বল হয়ে পড়লেও নীতি সুদহার কমানো হতে পারে। জুন মাসের কর্মসংস্থানের তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর এখন বাজারসংশ্লিষ্ট মানুষের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, সেপ্টেম্বর মাসেই মূল্যস্ফীতি হ্রাস করা হবে। এই আত্মবিশ্বাসের হার ৭২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।