১৮ জুন ২০১২, মঙ্গলবার, ০৮:০০:৫২ অপরাহ্ন


লং আইল্যান্ড নাসাউ নাকি বাংলাদেশ
উৎসব হতে পারতো, দুর্ভাগ্য হলো না
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৬-২০২৪
উৎসব হতে পারতো, দুর্ভাগ্য হলো না খেলা দেখতে আসা বাংলাদেশিরা


বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীরা উৎসব করতে পারতেন কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের সেই উৎসব করা হলো না। উৎসব করার মতো সব আয়োজনও বলতে গেলে সম্পন্ন হয়েছিল, কিন্তু ভাগ্যের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হলো। ধরুন, লেগবাইয়ের যে ৪ রান, সেই রান পেলে কি হতো? অথবা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ছক্কাটি যদি অবিশ্বস্যভাবে ধরা না হতো তা হলে কি হতো? একেই বলে ভাগ্য। একেই বলে ললাটের লিখন। মূলত বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটস থেকেই উৎসবের শুরু। শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে উৎসবের আমেজ। শুরু হয় জার্সি ক্রয়, বাংলাদেশের পতাকা ক্রয়। সেই সঙ্গে উচ্ছাসা। ৯ জুন রাতে জ্যাকসন হাইটসে ঈদের আগের রাতের অবস্থা। নিউইয়র্কের বাঙালি পাড়ায় রাত বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থকে আনন্দ আমেজ। সকালেই নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দল মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকার। তাকে ঘিরেই যেন নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন নিউইয়র্কের টাইগার ভক্তরা। আমেরিকার ও বিভিন্ন স্টেট থেকে আসা অতিথিদের নিয়ে মাঠে যাওয়ার জন্য যেন ব্যাকুল সবাই। অনেকে আবার বাসভাড়া করে এসেছেন। হৃদয়ে ধারণ করেছেন বাংলাদেশ। নাসাউ স্টেডিয়াম যেন পরিণত হয়েছিল একখ- বাংলাদেশে।

ম্যাচ শুরু সময় সকাল সাড়ে ১০টায়। কিন্তু যানজটের কথা ভেবে ভোর থেকে স্টেডিয়ামের পথ ধরে সবাই। মাঠে বাংলাদেশিদের উপস্থিতি অবাক করে দিয়েছে মাঠের নিরাপত্তাকর্মীদের। বাংলাদেশ বাংলাদেশ স্লোগানে গোটা গ্যালারি। সঙ্গে ছিল নতুন প্রজন্ম। 

বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল মাত্র ১১৪। ৫০ রানে ৪ উইকেট হারানোর পরও বাংলাদেশের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তাওহীদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই দু’জনের ব্যাটে শেষ ৩ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২০ রানের। তখনই আম্পায়ার্স কলের শিকার হন তাওহীদ হৃদয়। এরপর জাকের আলী ও রিয়াদ ম্যাচকে নিয়ে গেলেন শেষ ওভারে। কেশব মহারাজের শেষ ওভারে ১১ রান করতে পারলো না বাংলাদেশ। তিনটি ফুল টস দেওয়া বাঁ-হাতি স্পিনারের বলে ২ উইকেট হারিয়ে করতে পারলো কেবল ৬ রান।

 প্রথম দুই বলে আসে ৪ রান। তৃতীয় বলে বেরিয়ে এসে ছক্কা মারার চেষ্টা করে লংঅনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন জাকের আলী। পরের বলে দক্ষিণ আফ্রিকার রিভিউ বাতিল হলে বেঁচে যান রিশাদ হোসেন। ওভারের পঞ্চম বলে লো ফুলটসে ছক্কা মারতে গিয়ে একেবারে বাউন্ডারিতে মাক্রামের হাতে তালুবন্দি হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শেষ বলে সুযোগ ছিল তাসকিন আহমেদের সামনে। ছক্কা মারলেই ম্যাচটি জিতে জেতো বাংলাদেশ। ফুল টসে ১ রানের বেশি তুলতে পারেননি এই পেসার। শেষ পর্যন্ত ৪ রানের হার। সঙ্গে সঙ্গে নাসাউ জুড়ে যেন নেমে আসে রাজ্যের নীরবতা, স্তব্ধ সবাই, থেমে গেল উল্লাস, নুয়ে এলো মাথা। বিফল মনে ফিরলেন বাসায়, আগামী দিনের আশায়। সাকিব, শান্তদের নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও খেলায় লড়াই করেছেন বাংলাদেশ তাতেই সন্তুষ্ট সবাই।

শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর এই ম্যাচ জিতলেই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যেতো টাইগারদের শেষ ৮। তবে এখনো আশা শেষ হয়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে নেদারল্যান্ডস ও নেপালকে হারাতে পারলেই হবে স্বপ্নপূরণ। কথা থাকে, এই ম্যাচ হারের দায়টা আসলে কার! ম্যাচটি সত্যিকার অর্থে কখন হাতছাড়া হলো? সাকিব ও শান্তর বাজে শটে আউট এরপরই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারায় টাইগাররা। নর্কিয়ার করা অষ্টম ওভারের চতুর্থ বলে নিজের উইকেট বিলিয়ে দেন সাকিব। শান্তও একই কাজ করেছেন ম্যাচের দশম ওভারের শেষ বলে। ২৩ বলে এক ছক্কায় ১৪ রান করেন শান্ত। ৪ বলে ৩ রান করে ফেরেন সাকিব। এদের বিদায়ে পঞ্চম উইকেটে তাওহীদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের লড়াই বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রাখলেও আম্পয়ারে দুটি সিদ্ধান্তে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। এর মধ্যে একটি নিশ্চিত ৪ রান পায়নি টাইগাররা। ইনিংসের ১৭তম ওভারের ঘটনা সেটি। ওভারের দ্বিতীয় বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পায়ে লেগে বল চলে যায় বাউন্ডারিতে। কিন্তু বোলারের আবেদনে আম্পায়ার আউট দেন। রিয়াদ রিভিউ নিলে রিপ্লেতে দেখা যায় বল স্টাম্প মিস করেছে। কিন্তু আম্পায়ার আউট দেওয়াতে ওই ৪ রান যোগ হয়নি বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে। শেষ পর্যন্ত হারের ব্যবধান হয়েছে সেই ৪ রানই। আর একটি তাওহীদ হৃদয়ের বেলায়। মাহমুদউল্লাহ বাঁচলেও এ যাত্রায় হৃদয়ের রক্ষা হয়নি আম্পায়ার্স কলের কারণে। আবেদন জোরাল ছিল না রাবাদার। কিন্তু আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওর্থ দেন এলবি। রিভিউতে দেখা যায় লেগ স্টাম্পের চূড়ায় শুধু ছুঁয়ে যেত বলটি। ভাগ্য সহায় না থাকায় ৩৪ বলে ৩৭ রানে ফেরেন হৃদয়। ১৯.৫তম ওভারে কেশব মহারাজের ফুল টসে ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ধরা পরেন মাহমুদউল্লাহ। ২৭ বলে ২০ রান করেন এই ব্যাটার। 

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টস হেরে প্রথমে ফিল্ডিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম ওভার করতে আসা বাংলাদেশের তানজিম হাসানের দ্বিতীয় বলে ছক্কা ও তৃতীয় বলে ৪ মারেন দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার কুইন্টন ডি কক। তবে ওভারের শেষ বলে আরেক ওপেনার রেজা হেনড্রিক্সকে খালি হাতে বিদায় দেন তানজিম। নিজের দ্বিতীয় ওভারেও উইকেট শিকারের আনন্দে মাতেন তানজিম। ১১ বলে ১৮ রান করা ডি কককে বোল্ড করেন তানজিম। ইনিংসে চতুর্থ ওভারে উইকেট শিকারের তালিকায় নাম তোলেন তাসকিন। দারুণ এক ডেলিভারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক আইডেন মার্করামক ৪ রানের সময় বোল্ড করেন তাসকিন। নিজের প্রথম দুই ওভারে উইকেট নেওয়া তানজিম তার ঝলক অব্যাহত রাখেন। তৃতীয় ওভারে সাকিব আল হাসানের ক্যাচে মিডল অর্ডার ব্যাটার ট্রিস্টান স্টাবসকে খালি হাতে সাজঘরে ফেরত পাঠান তানজিম। পঞ্চম ওভারে দলীয় ২৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই নিয়ে চতুর্থবার বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লেতে প্রতিপক্ষের ৪ উইকেট শিকার করলো বাংলাদেশ। তবে এ অবস্থায় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন হেনরিচ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার। উইকেট ধরে খেলে ১০ ওভার শেষে দলের রান ৫৭ নেন তারা। ততক্ষণে উইকেটে সেট হয়ে যান ক্লাসেন ও মিলার। ১১তম ওভারে প্রথমবারের মতো বোলিং আক্রমণে আসেন স্পিনার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। প্রথম ডেলিভারিতে মিলারকে বিদায়ের পথ তৈরি করেছিলেন রিয়াদ। কিন্ত উইকেটের পেছনে মিলারের ক্যাচ নিতে পারেননি লিটন দাস। জীবন পেয়ে ক্লাসেনকে নিয়ে ১৭তম ওভারে দলের রান ১০০ পার করেন মিলার। ডেথ ওভারে মারমুখী হবার পরিকল্পনায় ছিলেন ক্লাসেন ও মিলার। কিন্তু ১৮তম ওভারের তৃতীয় বলে ক্লাসেনের উইকেট উপড়ে ফেলেন তাসকিন। দুটি ৪ ও তিনটি ছক্কায় ৪৪ বলে দলের সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন ক্লাসেন। পরের ওভারে মিলারকে বোল্ড করেন রিশাদ। একটি করে চার-ছক্কায় ৩৮ বলে ২৯ রান করেন মিলার। পঞ্চম উইকেটে ৭৯ বলে ৭৯ রান যোগ করেন ক্লাসেন-মিলার। দলীয় ১০৬ রানের মধ্যে ক্লাসেন ও মিলার ফেরার পর ইনিংসের বাকি ১০ বলে ৭ রানের বেশি যোগ করতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১১৩ রানের সংগ্রহ পায় প্রোটিয়ারা।

৪ ওভার করে বল করে তানজিম ১৮ রানে ৩টি ও তাসকিন ১৯ রানে ২ উইকেট নেন। ৮ ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন তানজিম। আগের ম্যাচের হিরো রিশাদ ৩২ রানে নেন ১ উইকেট। এছাড়া মুস্তাফিজুর রহমান কোনো উইকেট না পেলেও ৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ১৮ রান দিয়েছেন।

যারা খেলা দেখতে গিয়েছেন তাদের আশা ছিল বাংলাদেশ জিতবে। কিন্তু সেই জেতা হলো না। যে উৎসব জ্যাকসন হাইটস থেকে শুরু হয়েছিল তা শেষ হতে পারতো জ্যাকসন হাইটসেই। কিন্তু হলো না।

শেয়ার করুন