বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়ী করে অবিলম্বে তাকে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। গত ২৯ জুলাই সোমবার তোপখানা রোড়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চের নেতা বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক এই দাবি জানান। একইভাবে জাতীয় সরকার গঠন করে তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীরসাহেব চরমোনাই।
তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের একটি ন্যায্য আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের পথে না যেয়ে সরকার ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ডসহ নাশকতার যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে এর সমুদয় দায়দায়িত্ব সরকার ও সরকারি দলের। আমরা সরকারকে জনগণের জানমালের এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতির দায়দায়িত্ব নিয়ে অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগ করার আহ্বান জানাই।
সাইফুল হক বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সরকার হত্যা, গ্রেফতার, নির্যাতন-নিপীড়ন, মিথ্যা প্রচারের যে পথে হাঁটছে এই পথে এই সংকটের সমাধান নেই। সংকট উত্তরণে সরকারকে রাজনৈতিক সমাধানের পথ বেছে নিতে হবে। তা না হলে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষায় সরকারকে বিদায় দেওয়া ছাড়া দেশের মানুষের নিজেদের রক্ষার আর কোনো উপায় থাকবে না।
জাতিসংঘেরর তত্ত্বাবধায়নে ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ডসহ সামগ্রিক ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তে দাবিসহ ছয় দফা দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়নের আহ্বান জানায় গণতন্ত্র মঞ্চ।
অন্যান্য দাবিসমূহ হচ্ছে, দ্রুত কারফিউ প্রত্যাহার, সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবিসহ বিশেষ বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া, ইন্টারনেট পুরোপুরি চালু, গণমাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ প্রত্যাহার, আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপরে গুলি, হত্যার পরিকল্পনাকারি, নির্দেশদাতা ও বাস্তবায়নকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, গ্রেফতারকৃত বিরোধী নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তি, গোয়েন্দা বাহিনী কর্তৃক তুলে নেওয়া আন্দোলনকারী নেতাদের মুক্তি, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু, ঢাকা সারা দেশে ব্লক রেইড বন্ধ করাসহ শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ।
সাইফুল হক বলেন, সরকার ও সরকারি দলের যাবতীয় উসকানি ও নাশকতা সৃষ্টির পায়তারা এড়িয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ ছয় দফার জনদাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণভাবে গণআন্দোলন এগিয়ে নেবে। আমরা দেশের সকল গণতন্ত্রকামী ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও শ্রেণি-পেশার সংগঠন এবং মুক্তিকামী দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ আন্দোলন এগিয়ে নিতে উদাত্ত আহ্বান জানাই। সাইফুল হক অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নজিরবিহীন নৃশংসতায় দমন করতে যেয়ে তারা (সরকার) যে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। তাকে আড়াল করতে কথিত ইন্ধন ও নাশকতার অজুহাতে এখন সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিরোধীদলকে দমনের অভিযান চলছে। সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের পথে না গিয়ে কারফিউয়ের ছত্রছায়ায় বিরোধীদল ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযানের নামে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস অব্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতি দেশকে ভয়াবহ বিপর্যয় ও গভীর অনিশ্চয়তায় নিক্ষেপ করেছে। সরকার যেভাবে কেবল বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এ গণআন্দোলন দমন করতে চেয়েছে তাতে এটা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে যে, জনগণের ভেতরে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বলতে আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। সরকার ও সরকারি দল কার্র্যত জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমরা জানি ইতিহাস বার বার প্রমাণ করেছে জাগ্রত জনতার সামনে রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগ চিরকালই পরাজিত হয়েছে শেষ পর্যন্ত জনগণের বিজয় হয়েছে। সরকার, তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনের নামে প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার, হেলিকপ্টারে গুলিবর্ষণ করে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তার বেশির ভাগই আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার-নিপীড়ন, রিমান্ডে নিয়ে গণঅধিকার পরিষেদের সভাপতি নুরুল হক নূরকে নির্মমভাবে নির্যাতন, কোটা আন্দোলনেরর পাঁচ সমন্বয়কারীকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন ও জোর করে আন্দোলন সমাপ্তি টানার ঘোষণা দেওয়াসহ সরকারের নির্মমতার নিন্দাও জানান সাইফুল হক। তিনি জানান, গত ২৮ জুলাই পর্যন্ত সাড়ে ১২ হাজার বিরোধী নেতাকর্মী-শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ১৯ জুলাই গণতন্ত্র মঞ্চের মিছিলে পুলিশি হামলার ঘটনায় মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুসহ নেতৃবৃন্দ গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনাও তুলে ধরেন সাইফুল হক।
সংবাদ সম্মেলনের রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, ইমরান ইমন, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, মোফাখখারুল ইসলাম নবাব, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, একেএম জামির, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, ভাসানী অনুসারি পরিষদের আবু ইউসুফ সেলিম, বাবুল বিশ্বাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে জাতীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে
এদিকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীরসাহেব চরমোনাই বলেছেন, কোটা সংস্কারের দাবির ছাত্র আন্দোলনে নজীরবিহীন দমনপীড়নে শিশু-কিশোর, নারীসহ এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক ছাত্র-জনতা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, যা প্রতিদিন বেড়েই চলছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এতো ব্যাপক ও এতো রক্তবহুল কোন আন্দোলন আগে কখনো হয়নি। এই কোটা সংস্কারের দাবির ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করতে গিয়ে এই সরকার পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করেছে এবং জনতার ওপরে ইসরাইলি স্টাইলে বর্বর নির্মমতা চালিয়েছে। কোন সভ্য-স্বাধীন দেশের জনতার সঙ্গে এই ধরনের নির্মমতা চালানো যায় না। অবিলম্বে গণহত্যাকা-ের দায় নিয়ে পদত্যাগ করে জাতীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।
সোমবার দুপুরে পুরানা পল্টনস্থ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র গণজাগরণ এবং তা দমনে সরকারের বর্বরতম নৃশংসতায় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মসূচি
যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব দল ও জোটসহ গণতন্ত্র মঞ্চ সারাদেশে ধারাবাহিক কর্মসূচি করবে। কোটা আন্দোলন দমনে নৃশংস হত্যাকাণ্ডসহ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চ আগামী ৩১ জুলাই বেলা ১১টায় ঢাকার পুরানা পল্টন মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে।