আগে কুরআন পাঠ করে এর অর্থসহ বুঝতে চেষ্টা করুন। তার পরে এর সমালোচনা করুন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এমন পবিত্র গন্থটি না পাঠ করেই বিভিন্ন জনের কাজ থেকে শুনেই এর সমালোচনা করা হয়। সমাজের সর্বস্তরে মাতৃভাষায় কুরআন পাঠকে ছড়িয়ে দিতে এবং জনপ্রিয় করার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে “কুরআন পাঠ আন্দোলন” নামে একটি নতুন সংগঠন আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে এর উদ্যোক্তারা এসব কথা বলেন।
গত ৩১ আগস্ট শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইনউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এই সংগঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য সচিব মু. মোশাররফ হোসাইন, উপদেষ্টা সৈয়দ ওয়ালিউল আলম, মুরাদ বিন আমজাদ, যুগ্ম-আহবায়ক নজরুল ইসলাম, কেএম শাহরিয়ার ফরচুন, সদস্য শহিদুল্লাহ মজুমদার প্রমুখ।
সংগঠনের আহবায়ক আবু সাঈদ খান বলেন, সত্যিকার বিশ্বাসীদের কুরআন পাঠ থেকে দূরে সরে যাওয়ার সুযোগে এক শ্রেণির সুযোগসন্ধ্যানী মানুষ বহুমাত্রিক মিথ্যা প্রচারণার ফায়দা নিচ্ছে। তিনি কুরআনী কাজ করতে গিয়ে ধৈর্যধারণের কুরআনী নির্দেশ সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি আরও বলেন, কুরআন সম্পর্কে সমাজে অধিকতর সম্যক ধারণা যখন ব্যাপ্তিলাভ ঘটবে, তখন সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে সৌহার্দ্র-সম্প্রীতি-সদ্ভাব বৃদ্ধি পাবে; বৃহত্তর বন্ধন তৈরি হবে।
মানবাধিকার, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কুরআনের কঠোর বার্তা ও মূল্যবোধ তুলে ধরার পাশাপশি মানুষকে সৃষ্টি করে আল্লাহ তাদের যে বাক-স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় বিশ্বাস বা অবিশ্বাস পোষণ করার স্বাধীনতা দিয়েছেন, সেটিও তিনি কুরআন থেকে তুলে ধরেন।
সংগঠনের রূপরেখা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আহবায়ক আবু সাঈদ খান বলেন যে, সারাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্য থেকে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরাও আছেন। মাঠ পর্যায়ে কুরআন-পাঠ জনপ্রিয়করণ সংক্রান্ত বহুবিধ গুণগত কাজ করার মধ্য দিয়ে পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে একটি জাতীয় কমিটি গঠনের দিকে সংগঠনটি এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
‘কুরআন পাঠ নিয়ে কেন আন্দোলন করতে হবে’ এমন এক প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের আহবায়ক বলেন, ‘আন্দোলন’ এখানে সামাজিক আন্দোলন অর্থে ব্যবহৃত, যেখানে কুরআনের বিষয়ে অধিক সংখ্যক মানুষের মধ্যে গণসচেতনতা সৃষ্টি ও বৃদ্ধিকল্পে বহুমুখী গণমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
সদস্য সচিব মু. মোশাররফ হোসাইন সংগঠন পরিচিত তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে আমরা কুরআন সচেতনতা আমরা লক্ষ্য করছি। এইসব প্রক্রিয়াকে একটি সম্মিলিত ও সমন্বিত প্ল্যাটফর্মের অধীনে এনে কুরআন পাঠের এই চলমান ধারাকে একটি সুসংগঠিত আন্দোলনে রূপ দেয়ার মহতী লক্ষ্য নিয়ে “কুরআন পাঠ আন্দোলন”-এর সূচনা।
সংগঠনের উপদেষ্টা মুরাদ বিন আমজাদ বলেন, প্রথাগতভাবে আমরা ধর্মীয় বিভিন্ন বিধান শুনে শুনে পালন করে থাকি, তারপর জীবনের শেষলগ্নে এসে যখন জানার সুযোগ হয়, তখন দেখি এতদিন যা কিছু করেছি, তার প্রায় সবই ভুল। অথচ কুরআন আমাদের নির্দেশ দেয়, আগে জানো তারপর মানো। “কুরআন পাঠ আন্দোলন কী এবং কেন” সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কুরআন থেকে বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরেন।
সংগঠনের উপদেষ্টা মেজর (অবঃ) আলমগীর হোসেন সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করে বলেন, আমরা কেবল কুরআন পাঠে উদ্বুদ্ধকরণের অত্যন্ত মৌলিক ও প্রাথমিক কাজটি এই সংগঠনের মাধ্যমে করতে চাই; কোন ফতোয়া প্রদান বা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, জীবন-যাপনের পন্থা-পদ্ধতি বাতলে দেয়া আমাদের কাজ নয়; বরং মানুষ যখন কুরআন পাঠকে অভ্যাসে পরিণত করবে তখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজেই কুরআন থেকে তার জন্য জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সক্ষমতা অর্জন করবে।
এদিকে “কুরআন পাঠ আন্দোলন”-এর আহবায়ক কমিটিও গঠন করা হয়। এতে রযেছেন উপদেষ্টা মন্ডলীর সসদ্য সৈয়দ ওয়ালিউল আলম, মোস্তফা ওয়াহিদুজ্জমান, মুরাদ বিন আমজাদ, হারুন ইসহাক (ফেনী), সাবেক অতিঃ আইজিপি ফররুখ আহমেদ চৌধুরী, মাহবুব উল্লাাহ যশোরী, মুনির মাহদি, আমিরুল ইসলাম (কুষ্টিয়া), ড. সিরাজ ইসলাম (যুক্তরাজ্য), প্রিন্সিপাল আব্দুল মতিন (নরসিংদী), আতাউর রহমান ও আব্দুল জব্বার (সিরাজগঞ্জ)।