এনটিভির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী বলেছেন, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে এখন সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে ড. ইউনূস সরকারের জনকল্যাণমূলক কাজে সহায়তা করতে সব মহলের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। আসলে আমার মতো লোকদের জন্য পালিয়ে থাকা কঠিন কাজ।
গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রোববার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি পার্টি হলে এনটিভি পরিবারের আয়োজনে নিউইয়র্কে কর্মরত ও জাতিসংঘ অধিবেশন কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সাংবাদিক ফরিদ আলমের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় মোসাদ্দেক আলী, ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বাদল ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। মতবিনিময়ে বিগত সরকারের সময় তারা কীভাবে বিদেশে পালিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছেন, সেসব কথা তুলে ধরেন।
মোসাদ্দেক আলী বলেন, প্রায় সাড়ে সাত বছর পর মুক্তভাবে কথা বলতে পারছি, এটার যে কী আনন্দ তা আপনাদের বোঝাতে পারবো না। তিনি বলেন, এনটিভি আসলে আমরা একটি পরিবার। আরটিভিও আমার ছিল, আশা করি আগামী অক্টোবরের ২/৩ তারিখের মধ্যে আবার দায়িত্ব গ্রহণ করবো। আজকে আপনাদের সঙ্গে বসে মনে হচ্ছে, আমি আমার পরিবারের সঙ্গে বসে আসি। তিনি বলেন, সাংবাদিকতা আসলে কঠিন কাজ। কারণ সংবাদ পরিবেশ করে কাউকে খুশি করা ভীষণ কঠিন। তিনি বনেল, ১/১১-এর সময় আমাকে গ্রেফতার করা হয়। সেই সময় প্রয়াত সাংবাদিক রাহাত খান জেলে গিয়েছিলেন আমার সঙ্গে কথা বলতে। কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, আপনার মতো লোককেও জেলে আসতে হলো? প্রশ্ন করেছিলেন তিনি কোনো তদবির করবেন কি না। উত্তরে আমি বলেছিলাম, কোনো দরকার নেই। কারণ আমি জানি আমি কোনো অন্যায় করিনি। তিনি বলেন, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন-এটা আমাদের জন্য গর্বের। তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এটা আমাদের জন্য বিশাল ব্যাপার। আমাদের সবার উচিত ওনাকে সহযোগিতা করা, সময় দেওয়া। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন-এটা আমাদের প্রত্যাশা। তিনি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহিদ, আহতদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। এছাড়াও তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান জানান। মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, আমি প্রায় সাড়ে ৭ বছর দেশের বাইরে ছিলাম। দেখা হলে মানুষ নানা প্রশ্ন করতো, আবার বিদেশে কোনো মার্কেটের সামনে দাঁড়ালে একশ্রেণির মিডিয়া সুন্দর একটি ছবি ছাপিয়ে বলতো-ওই বিল্ডিংয়ে আমার অনেক অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। যখন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হলো তখন আমারও সুবিধা হলো। মানুষ বুঝতে পারলো এগুলো রাজনৈতিক মামলা। সত্যি কথা বলতে কী, আমার মতো মানুষের বিদেশে পালিয়ে থাকা কঠিন কাজ।
সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী বলেন, আজকে আমরা মুক্ত। দেশেও মুক্তভাবে কথা বলা যাচ্ছে। আর এই সুযোগ যারা সৃষ্টি করেছেন, সেসব ছাত্র-জনতার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি আরো বলেন, আসলে কোনো সরকারেরই উচিত নয়, মিডিয়ার ওপর হস্তক্ষেপ করা। মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু বিগত সরকার বাংলাদেশের অনেক মিডিয়া বন্ধ করে দেয়। সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। সাগর-রুনিকে হত্যা করা হয়েছে। আজও সেই হত্যার বিচার হয়নি। অনেক সাংবাদিক দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আমরা এ অবস্থা চাই না। একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে, তিনি বলেন, যেসব সাংবাদিক অন্যায় করেছে, তাদের বিচার হওয়া উচিত।
ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বাদল তাকে কীভাবে ব্যাংকের পরিচালক থেকে বাদ দেওয়া হলো, মোহামেডান ক্লাবসহ তার নিজস্ব ক্লাব থেকে সালমান এফ রহমান গংরা কীভাবে অন্যায়ভাবে বাদ দিয়েছেন তা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলার বিষয়টি উল্লেখ করেন। জানালেন, বাবার জানাজাতেও যেতে পারেননি।
মতবিনিময় সভায় নিউইয়র্ক ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বহু সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। এর আগে এনটিভির বর্তমান ও সাবেক সহকর্মীরা মোসাদ্দেক আলীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকেও তার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেওয়া হয়।