গাজায় চলমান ইসরায়েলের গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে একটি আন্তঃধর্মীয় প্রার্থনা সভা (মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে অনুষ্ঠান) আয়োজন বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা গত ১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ফেডারেল কোর্টে মামলা দায়ের করেছে। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইনের পক্ষ থেকে আমেরিকার বৃহত্তম মুসলিম নাগরিক অধিকার ও সমর্থনকারী সংগঠন, কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় তারা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনিভার্সিটি সিস্টেম অব মেরিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৭ অক্টোবরের জন্য নির্ধারিত একটি ভিজিল বাতিল করার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছে।
এই প্রার্থনা সভার উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলের চলমান গাজায় গণহত্যার শিকারদের স্মরণে একটি আন্তঃধর্মীয় শোক অনুষ্ঠান আয়োজন করা। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রথমে আয়োজনের অনুমতি প্রদান করেছিল, যা ৩১ জুলাই মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইনের রিজার্ভেশনের ভিত্তিতে অনুমোদিত হয়েছিল। অনুষ্ঠানটি ম্যাকেল্ডিন মলে আয়োজন করার কথা ছিল এবং এটি জুইশ ভয়েস ফর পিস সংগঠন সহ-স্পন্সরশিপে আয়োজন করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমে অনুষ্ঠানের আয়োজনের অনুমতি দেওয়ার পরও তারা ‘অ্যান্টি-প্যালেস্টাইনিয়ান’ গ্রুপগুলোর ব্যাপক চাপের কারণে এ অনুষ্ঠান বাতিল করে। বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করে যে, সেদিন শুধু বিশ্ববিদ্যালয়-স্পন্সরিত ‘প্রকাশ্য ইভেন্ট’ ক্যাম্পাসে আয়োজন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত প্রথম সংশোধনীর অধিকার লঙ্ঘন করেছে, যা অবৈধ মতামত ও বিষয়বস্তু ভিত্তিক বৈষম্যকে নিষিদ্ধ করে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে যে, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-প্যালেস্টাইন এবং গণহত্যাবিরোধী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে হয়রানি ও শাস্তির ধারাবাহিকতার অংশ।
শিক্ষার্থীরা জানান, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নীতিমালা মেনে অনুষ্ঠানের জন্য রিজার্ভেশন করেছেন এবং এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বৈধতার নিশ্চয়তা দিয়েছিল। কিন্তু পরে বিভিন্ন অনলাইন পিটিশন এবং চাপের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৭ অক্টোবর শুধু ‘বিশ্ববিদ্যালয়-স্পন্সরিত চিন্তাশীল অনুষ্ঠান’ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং শিক্ষার্থীদের রিজার্ভেশন বাতিল করে।
মামলায় শিক্ষার্থীরা একটি আদেশ চেয়েছে যা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুষ্ঠান বাতিল করা থেকে বিরত রাখবে এবং পূর্বের অনুমোদিত পরিকল্পনা অনুযায়ী অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেবে। তারা আদালতের কাছে দাবি করেছে যে, প্রার্থনা সভা বাতিল করা তাদের মতপ্রকাশের অধিকারকে লঙ্ঘন করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে সুরক্ষিত।
মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আদালতের কাছে আবেদন করেছে যাতে তাদের মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষা করা হয় এবং পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ৭ অক্টোবর প্রার্থনা সভা আয়োজন করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার উদ্বেগের কথা বললেও শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্তকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।
প্যালেস্টাইন লিগ্যালের স্টাফ অ্যাটর্নি টরি পোরেল বলেন, ‘ইতিহাস জুড়ে, শিক্ষার্থীরা নাগরিক অধিকার এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্যালেস্টাইন পর্যন্ত বর্ণবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধানকে উপেক্ষা করে প্যালেস্টাইন এবং ইহুদি শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব করতে পারে না, শুধু অ্যান্টি-প্যালেস্টাইন গ্রুপগুলোর অভিযোগের কারণে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হলো গুরুতর সামাজিক বিষয়গুলো নিয়ে শক্তিশালী বিতর্ককে উৎসাহিত করা, তাকে সেন্সর করা নয়।’
কেয়ারের জাতীয় ডেপুটি লিটিগেশন ডিরেক্টর গাদির আব্বাস বলেন, প্রথম সংশোধনী সরকারকে ৭ অক্টোবর বা অন্য কোনো দিনকে মুক্ত মতপ্রকাশের জন্য ‘ব্ল্যাক-আউট’ করার অনুমতি দেয় না। সংবিধান লঙ্ঘনের এই স্পষ্টতা যদি বজায় থাকে, তবে এটি আদালতে সংঘর্ষ সৃষ্টি করবে। ‘কেয়ার গত আগস্টে তার ‘আনহোস্টাইল ক্যাম্পাস ক্যাম্পেইন’ চালু করেছে, যার উদ্দেশ্য হলো এমন একটি ক্যাম্পাস পরিবেশ তৈরি করা যেখানে প্যালেস্টাইন, মুসলিম, আরব, ইহুদি এবং অন্যান্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীরা গাজায় প্যালেস্টাইনের জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিরোধিতা করতে মুক্তভাবে মতপ্রকাশ এবং একাডেমিক স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারেন এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সরকারি শক্তি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলায় পড়তে না হয়।