৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:০৯:১৪ অপরাহ্ন


জনমনে ছড়িয়ে পড়ছে ক্ষোভ-হতাশা
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-১০-২০২৪
জনমনে ছড়িয়ে পড়ছে ক্ষোভ-হতাশা


ছাত্র-জনতার মহান আত্মত্যাগে সংস্কারের ম্যান্ডেট নিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অভিধানিক অর্থে সরকারকে বৈধ বলার সুযোগ নেই। তবুও বৈষম্যবিহীন একটি সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার অনেক সোনালি স্বপ্ন নিয়ে আস্থা স্থাপন করতে চেয়েছে পোড় খাওয়া বিপর্যস্ত দেশবাসী। কিন্তু নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করুন দুই মাস পরিয়ে গেছে সমাজে এখনো নিরাপদ পরিবেশ ফিরে আসেনি। পুলিশ প্রশাসন অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। বাকস্বাধীনতা প্রশ্নসাপেক্ষ, সিভিল প্রসাধনে আস্থাহীনতা, অসহিষ্ণুতা, সিন্ডিকেটের বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সড়কে যানজট, শব্দদূষণ, সামান্য বৃষ্টি হলেই জলমগ্ন হয়ে পড়ছে নগরীর পথঘাট-যা সেই পতিত সরকারের কার্বণ কপি সর্বত্র। 

বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় যে বাজারমূল্যের অব্যাহত ধারা পতিত সরকারের চেয়েও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এর লাগাম টানার কোনো লক্ষণ নেই অন্তর্বর্তী সরকারে, মানুষ দিশেহারা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি দুই মাসের ব্যবধানে দ্বিগুণও কিছু কিছু বিষয়। বিভিন্ন অজুহাত দোকানি দিলেও মানুষের কাছে, যা গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না। উপদেষ্টারা যারা এক প্রধান উপদেষ্টা ও দুই তরুণ ছাড়া অন্যরা কার্যত অকেজো অবস্থায় বসে আছে। এদের কোনো কার্যক্রম আছে কী সাধারণ মানুষ ঠাহর করতে পারছে না। 

ফলে এ সুযোগে এখনো প্রতিপক্ষকে দমন নিষ্পেষণের সনাতন ধারা পরিবর্তন হয়নি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যেসব হত্যাকা- এবং দেশজুড়ে সাড়া জাগানো খুন, রাহাজানির বিচার শুরু হয়নি। এমনকি যাদের বিরুদ্ধে মামলা তাদেরও অজ্ঞাত কারণে অনেককে আটক করা যায়নি বা করা হচ্ছে না। বিভিন্ন হাসপাতালে জুলাই-আগস্টের আহত ছাত্র-জনতার সেবা শুশ্রূষায় অর্থাভাব দেখেছি সরেজমিনে পরিদর্শন করে। অভিযোগ আছে অনেক আহতদের খবরও কেউ নেয়নি। নিহতদের স্বজনদের আহাজারি তাদের সান্ত¦নাটুকুও কেউ দিতে যায়নি। স্বীকৃতি তো দূরে থাক। দেশে বিরাজমান জ্বালানি-বিদ্যুৎ সংকট তীব্রতর হচ্ছে। জনগণ যে আশা-প্রত্যাশা নিয়ে নোবেল লরিয়েট ড. এম ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে স্বাগত জানিয়েছিল সেই স্বপ্নধূলি মলিন হতে শুরু করেছে।

খোঁজ নিয়ে দেখেছি, অনেক স্থানেই চাঁদাবাজদের কাজকর্ম অব্যাহত। কোথাও পরিবর্তন, কোথাও আড়ালে থেকেই টেলিফোন ও বিভিন্ন উপায়ে পূর্বধারা অব্যাহত। কিশোর-যুবকরা যেভাবে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছিল তার ছিটেফোঁটা অবশিষ্ট নেই। ট্রাফিক পুলিশ ফিরেছে। কিন্তু গাছাড়া অথবা পরিকল্পিতভাবেই নিজেদের গুটিয়ে রাখা। ঢাকা ও অন্যান্য মহানগরীর সড়কে দুঃসহ যানজট। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্য। জ্বালানি-বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। অথচ নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে বাহাস করছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, স্থানীয় সরকার কোথাও পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগেনি। দেশের পুঞ্জীভূত সংকট সমাধানের সূচনাতেই করতে পারেনি বর্তমান সরকার। ঢালাওভাবে সর্বত্র সবাইকে পরিবর্তন করেই নতুন মানুষগুলো আলাদিনের চেরাগ হাতে সবকিছু রাতারাতিই পাল্টে দেবে সেই ধারণা ভুল।

ছাত্র-জনতা আন্দোলনে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু ছাত্র, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাঠে থাকা সাংবাদিক, বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক, সেবিকাদের সঙ্গে কথা বলে বিভীষিকামূলক পরিস্থিতির স্বরূপ জানা গেছে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য শক্তি বিষয়ে জনমনে ভিন্নমত আছে।

সরকারব্যবস্থায় নামিদামি ব্যক্তিদের নিয়ে কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। কবে এরা রূপরেখা তৈরি করবে। সেই রূপরেখা সর্বজন গ্রাহ্য হবে কি না। ইতিমধ্যে ধৈর্য হারাতে শুরু করেছে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো। অনেক সংস্কারকাজ নিয়েই অংশীজনদের সম্পৃক্ততার প্রয়োজন রয়েছে। সিভিল সোসাইটির একটি অংশের উন্নয়ন ধারণা বিষয়ে বিভ্রান্তি আছে।

অস্বীকার করা যাবে না দেশে দুই ধরনের রাজনৈতিক ধারা বিদ্যমান। একটি ভারতবিরোধী বিএনপি ঘরানার, অন্যটি ভারতঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ ঘরানার। যদিও বিএনপি এখন ভারতের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টারত। তবে তৃতীয় পক্ষ ইসলামি ভাবধারার দলগুলো সাম্প্রতিক পরিবর্তনে মাঝেমধ্যে ভূমিকা পালন করলেও নির্বাচনে এককভাবে জয়ী হওয়ার সামর্থ্য ওদের নেই। বামঘেঁষা দলগুলোর উপস্থিতি থাকলেও বাস্তবে তারা অন্তসার শূন্য। 

বাংলাদেশে ভারত, চীনকে উপেক্ষা করে কোনো রাজনৈতিক শক্তি তৃতীয় দেশের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষমতায় এলেও টিকে থাকতে পারবে বলে সন্দেহ আছে। ভূরাজনীতির বিশ্বধারা সামাল দিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যত দ্রুত দেশে নির্বাচন সহায়ক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে, ততই মঙ্গল। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মোট সামর্থ্য বর্তমান সরকারের আছে বলে মনে হয় না। বরং যতদিন যাবে তালগোল মিলিয়ে ফেলার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। হতাশা ছড়িয়ে পড়ছে জনমনে। সবাই অধৈর্য হচ্ছেন, যা মোটেও শুভলক্ষণ নয়।

শেয়ার করুন