০৯ নভেম্বর ২০১২, শনিবার, ০১:২৫:৫৭ অপরাহ্ন


নাম দিয়ে যায় চেনা!
হাবিব রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১০-২০২৪
নাম দিয়ে যায় চেনা!


নাম দিয়ে কি সব সময় মানুষ বা প্রতিষ্ঠান চেনা যায়? একদম না! একসময় ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে অনেক জুতার দোকানের কাব্যিক নাম ছিল। তার একটি ছিল সাগর থেকে ফেরা। ঝিনুকের দোকান হলে নামটা মানাতো কিন্তু বেশ। কিন্তু এটা ছিল জুতার দোকান। শাটার গেট বন্ধ থাকলে একজন অপরিচিত কেউ কি ঠাহর করতে পারবেন ওটার ভেতরে কি বিক্রয় হয়। 

নিউইয়র্কে কমিউনিটির পরিচিত একজনের সন্তানের নাম গল্প এবং কাব্য। নামটা আধুনিক সন্দেহ নেই। তবে অপরিচিত কেউ নাম দিয়ে কি বের করতে পারবেন ছেলে বা মেয়ে কোন জন? জ্যাকসন হাইটসে একটা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম মাছবাজার। এখানে শুধু মাছ নয়, সব ধরনের গ্রোসারি সামগ্রীর সঙ্গে তাদের নিজস্ব ফ্যাক্টরির তৈরি নানা ধরনের মিষ্টান্নও পাওয়া যায়। বক্সের লেভেলে মাছবাজার কথাটিই বড় করে লেখা থাকে। 

নিউইয়র্কে নবাগত আসা কাউকে মিষ্টি কেনার জন্য মাছবাজারে পাঠাতে চাইলে তিনি যে চমকে উঠবেন না তার কোনো গ্যারান্টি আছে?

জ্যামাইকার হিলসাইড অ্যাভিনিউয়ে একটি দোকানের নাম ‘কয়লা’। মূল পরিচয় এটি একটি পিজা এবং গ্রিলের দোকান। কিন্তু কয়লা নামটা শুনলে কি দোকানের পরিচয়টা সহজে ফুটে ওঠে? নিউইয়র্কে বাঙালিরা এক নামেই চেনেন খলিল বিরিয়ানি হাউসকে। তিনটি শাখা নিয়ে নিউইয়র্কে খলিলের জমজমাট ব্যবসা। ব্রঙ্কসের শাখাটি বিশাল রকম। ওখানে গেলে দেখবেন কেউ হয়তো ফোনে বন্ধুকে বলছে, আমি এখন খলিলে। চলে আয় তাড়াতাড়ি। ব্যক্তির নামটা ও কেমন করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড নাম হয়ে যায় এটা তার বড় প্রমাণ। 

ছোট একটা গল্প বলে শেষ করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী একবার লাইব্রেরির ফ্রন্ট ডেস্কে গিয়ে কর্মরত ক্লার্কের সামনে দাঁড়িয়ে বলছে, ‘আমার বইটা নিতে এসেছি’। কর্মচারী ওই সময় মাথা টেবিলের দিকে নিচু করে কোনো কাজে ব্যস্ত ছিলেন। মাথা না তুলেই তিনি বললেন, নাম কী? মেয়েটি বললো, ‘শামীম চোধুরী’। দায়িত্বরত কর্মচারীর নতুন প্রশ্ন, ‘ছেলে না মেয়ে?’ ‘কণ্ঠ শুনে কি মনে হয়?’ মেয়েটির বুদ্ধিদীপ্ত তির্যক উত্তর। ‘বুঝতে তো পারছি না’, বললেন লাইব্রেরির কর্মচারী। ‘মুখ তুলে চেয়ে দেখুন’, শেষ সওয়ালের শেষ জওয়াব দিলো শামীম। 

তাই বলছিলাম, এমন নাম রাখুন যেন ছেলে না মেয়ে নাম শুনে চেনা যায়। দোকানের অমন নাম রাখুন শাটার বন্ধ থাকলেও যেন দোকানের চরিত্র জানা যায়। 

প্রবাস রাজনীতিতে শিষ্টাচার

প্রবাসের রাজনীতি কি নেতাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে? প্রসঙ্গটা এলো বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের দাবিতে নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিক্ষোভ সমবাবেশ দেখে। গত ২২ অক্টোবর জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ড. সিদ্দিকুর রহমান, ডা. মাসুদুল হাসানের মতো সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিতে নেতাকর্মীরা যখন ড. মোহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিকে অশালীন এবং রুচিহীন ভাষায় গালিগালাজ করেন আর তারা চুপ করে থাকেন, তখন এতে যে তাদের সমর্থন আছে, তাই প্রতীয়মান হয়। একটি গণতান্ত্রিক দেশে বহু দল থাকবে, মত থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, ঝগড়া থাকবে, তর্ক থাকবে, আদর্শের ভিন্নতা থাকবে, আদর্শিক লড়াই থাকবে। কিন্তু যুদ্ধের যেমন কিছু নিয়ম আছে, রাজনীতিরও কিছু প্রথা আছে। যেমন সংসদের ভাষা আর পল্টন ময়দানের ভাষা এক হবে না। সংসদে কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগও আনা যায় না, বলতে হয় তিনি ‘অসত্য?’ বলেছেন। সংসদে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া কোনো কথা বলা যায় না। মাঠের রাজনীতি হয়তো সংসদের মতো অতটা পিউরিটান নয়। কিন্তু তা-ও অলিখিত একটা সীমা আছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে আপনি অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বলবেন, যুক্তি দিয়ে তাকে কাবু করবেন। কিন্তু অশ্লীল, অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করবেন তা কখনো মানা যায় না। রাজনীতিতে ভিন্নমত, ভিন্ন দল, বিরোধিতা সব সময়ই ছিল, পাশাপাশি সৌহার্দ্যও ছিল। স্বাধীনতার পর ছাত্রলীগের ভাঙন থেকে সৃষ্টি হয় দেশের প্রথম বিরোধীদল জাসদ। সেই জাসদ নানা রকমের নাশকতা চালিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের পথে বারবার বাধার সৃষ্টি করেছে। জাসদের সঙ্গে সরকারের নানা সময় লড়াই হয়েছে। জাসদ নেতাকর্মীরা তখনকার আওয়ামী লীগ সরকারের দমনপীড়নের শিকার হয়েছেন। কিন্তু সেই জাসদের আদর্শিক গুরু সিরাজুল আলম খানের গায়ে কখনো টোকাটিও লাগেনি। এমনকি জাসদ বানিয়ে আওয়ামী লীগের ঘুম হারাম করলেও বঙ্গবন্ধু কখনো সিরাজুল আলম খানের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেননি। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের পক্ষ হয়ে নানা যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার দায়ে স্বাধীনতার পর অনেক রাজনৈতিক নেতাকে আটক করা হয়। আটক নেতাদের মধ্যে এমন অনেকে ছিলেন, যারা স্বাধীনতার আগে রাজনীতির মাঠে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে হেঁটেছেন, পক্ষে হোক বা বিপক্ষে। আইনের দৃষ্টিতে তাদের গ্রেফতার করা হলেও বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিগতভাবে তাদের পরিবারের খবর রেখেছেন বলে শুনেছি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ৮ দল, বিএনপির নেতৃত্বে ৭ দল এবং বামদের ৫ দলীয় জোট রাজপথে যুগপত আন্দোলন করেছে। তখনো তাদের মধ্যে সৌহার্দ্য ছিল। এমনকি স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের পরের অন্তত দুটি সংসদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ানদের একাডেমিক বিতর্ক আমরা দেখেছি। তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীদের প্রাণবন্ত বিতর্কে সরগরম থাকতো সংসদ। কিন্তু সংসদের বাইরে তাদের বন্ধুত্বের খবর কারো অজানা নয়। স্বাধীনতার পর তখন বিরোধীদলে থাকা মতিয়া চৌধুরী, আ স ম আব্দুর রবরা কট্টর ভাষায় বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তারপরও তাদের রাজনীতি করতে কোনো অসুবিধা হয়নি। 

কিন্তু দিন যত যাচ্ছে, রাজনীতি থেকে সৌহার্দ্য বিষয়টি হারিয়ে যাচ্ছে। তার জায়গা নিচ্ছে তীব্র ঘৃণা, অসহিষ্ণুতা, অশ্লীল গালাগাল আর কুরুচি। দেশ এবং প্রবাসের রাজনীতিকরা যদি নিজেদের স্বার্থেই রাজনীতিকে নিয়মের মধ্যে আনেন, যদি সব অশ্লীলতা দূর করেন; তবে সবার জন্যই তা মঙ্গলজনক হবে বলে আমরা মনে করি। রাজনীতি মানে কিন্তু রাজা হওয়ার নীতি নয়, নীতির রাজা। এই নীতির রাজা যারা ধারণ করবেন; সেই রাজনীতিবিদরা যেন থাকেন স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন। তাদের দেখে যেন আমরা সবাই শিখতে পারি, তাদের নেতৃত্ব যেন আমাদের লজ্জিত না করে আমরা তাই আশা করবো। 

আপনার সন্তানের জন্য সতর্কবার্তা

নিউইয়র্কের কাগজে একটা খবর বেরিয়েছে, ১৮ বছর বা তার কমবয়সী তরুণদের অপরাধের মাত্রা গত বছরের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অপরাধের মধ্যে আছে হত্যা, ডাকাতি, অ্যাসল্ট ইত্যাদির মতো ঘটনা। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের এ বয়সের সন্তানরা কি করছে, কাদের সঙ্গে মিশছে, কোনো অপরাধ কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে কি না, তার খোঁজখবর রাখা খুবই জরুরি বলে আমরা মনে করি। গুণীজনেরা বলেন, টিনএজারদের বিপথে যাওয়ার নিয়ামক হিসেবে কাজ করে পারিবারিক সমস্যা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক নানান দ্বন্দ্ব- সংঘাত, স্কুলে অতিরিক্ত চাপ, কখনো বাবা-মায়ের প্রত্যাশার বাড়তি চাপও তাদের বিপথগামী করে। তরুণ বয়সের ছেলেমেয়েরা এসব চাপ সহ্য করতে না পেরে নতুন কিছুর সন্ধান করতে থাকে। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, উচ্চবিত্তের অনেক তরুণ না চাইতে অনেক কিছুই পেয়ে যায়। কখনো কখনো জীবন তাদের কাছে পানসে হয়ে যায়। তখন নতুন হেরোইজমে তারা আকৃষ্ট হয়। 

এ প্রসঙ্গে আমাদের কমিউনিটির ছোট দুটি ঘটনা উল্লেখ করছি। 

আমাদের অনেকেরই হয়তো মনে আছে, কয়েক বছর আগে জেএফকে এয়ারপোর্ট থেকে পারভেজ আহমেদ (২২) নামে এক বাংলাদেশি যুবককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র ‘আইএস’-এ যোগ দিতে সৌদি আরব থেকে সিরিয়া যাওয়ার পথে পারভেজকে গ্রেফতার করে সৌদি পুলিশ। এরপর সৌদি পুলিশের সহায়তায় তাকে যুক্তরাষ্ট্র এনে নিউইয়র্ক এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের পর ওজনপার্কে তার বাড়িতে খোঁজখবর নিতে থাকে এফবিআই। পারভেজের কম্পিউটারসহ যাবতীয় কাগজপত্র অনুসন্ধান করে এফবিআই নিশ্চিত হয়, তিনি আইএসে যোগ দিতেই সৌদি আরব থেকে যেতে চেয়েছিলেন। 

এফবিআইয়ের হাতে আটক পারভেজের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছিলেন, হঠাৎ করেই বদলে যান পারভেজ। সবকিছু ছেড়ে তিনি নীরব হয়ে যান। বাবার সঙ্গে সৌদি আরবে যান পারভেজ। সেখান থেকেই উধাও হন। ফেডারেল কোর্টে দায়েরকৃত অভিযোগ অনুযায়ী পারভেজ তার মা-বাবাকে লিখে জানিয়েছিলেন, ‘আমি যদি কোনো কারণে নিষ্ঠুর হয়ে থাকি, অতিরিক্ত কিছু করে থাকি, তাহলে ক্ষমা করে দিও। 

আরেকটি ঘটনা ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার অভিযোগে এক বাংলাদেশি যুবককে গ্রেফতার করে এফবিআই। কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিস (২১) নামের ওই বাংলাদেশির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার ও জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদাকে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়। ম্যানহাটনে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সামনে ‘বিস্ফোরকভর্তি’ ভ্যান দাঁড় করিয়ে নাফিস পাশের মিলেনিয়াম হিলটন হোটেলে যান। সেখান থেকে তিনি ভ্যানে রেখে আসা সেলফোনে বারবার কল দিতে থাকেন ১ হাজার পাউন্ড (৪৫৪ কেজি) বিস্ফোরকে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য। কিন্তু ভ্যানে সত্যিকারের বিস্ফোরক না থাকায় সেটি আর ফাটেনি। নিউইয়র্ক পুলিশ বলছে, নাফিস আসলে এফবিআইয়ের পাতা ফাঁদে পা দেন। তার ওপর নজর রাখা হচ্ছিল গত জুলাই থেকেই। 

পারভেজ ও নাফিসের ঘটনার মধ্যেও এই একই মিল আছে যে তারা তাদের নিজেদের বিভ্রান্ত যুক্তি আর উগ্র প্রতিবাদ চিন্তায় বিপদে ফেলছে আরো লাখ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশিকে, যারা এই দেশে জীবনযাপন করছেন। এ ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া বা নিশ্চুপ থাকার সময় নেই। বিপথগামী বাংলাদেশি তারুণ্যকে এখনই সঠিক পথে নিয়ে আসার ব্যবস্থা না করা গেলে, পুরো যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের আগামীর অভিবাসন আর জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে বিপদের মধ্যে পড়বে। ইউরোপের দেশ আইসল্যান্ডে ৮০ ও ৯০ দশকে জন্মগ্রহণকারী তরুণদের নিয়ন্ত্রণ করা ক্রমে কঠিন হয়ে উঠছিল। তাদের মধ্যে ক্রমে মদ্যপান ও মাদক আসক্তির সংখ্যা বাড়ছিল। ফলে বিষয়টি আর কোনো ক্রমেই হেলাফেলার উপায় ছিল না। 

বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকরাও আইসল্যান্ডের অল্পবয়সীদের এ বিপথগামিতা থেকে ফেরানোর জন্য কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেন। দেশটির ১৬ বছর বয়সের নিচের সবাইকে রাত ১০টার মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে বাসায় ফিরতে হয়। রাত ১০টা বাজলেই রাস্তাঘাটে তল্লাশি চালানো হয়, যেন কোনো অল্পবয়সী বাড়ির বাইরে না থাকতে পারে। অভিভাবকরা নিজেদের মধ্যেই একটি অঙ্গীকার করেন যে, তারা নিজেদের মাঝে কয়েকটি নিয়ম মেনে চলবেন। এসব নিয়মের মধ্যে থাকতে পারে তারা তাদের শিশুদের অ্যালকোহল থেকে দূরে রাখবেন এবং পরিবারের সঙ্গে বেশি করে সময় কাটাবেন। 

সন্তানদের ব্যস্ত রাখার জন্য বেশ কয়েকটি কাজ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে স্কুলের পরও যেন তারা খেলাধুলা, ঘোড়ায় চড়া ও অন্যান্য বিনোদনমূলক কাজে যুক্ত থাকতে পারে, তা নিশ্চিত করা। এজন্য তাদের প্রত্যেককে ৫০০ ডলারের একটি ভাউচারও দেওয়া হয়। 

এসব পদক্ষেপে সুফল মিলেছে আইসল্যান্ডে। তরুণরা ফিরে এসেছে সুপথে। তাদের মধ্যে আর মদ্যপান, ধূমপান ও মাদক গ্রহণের মতো অপরাধ দেখা যায় না বললেই চলে। আইসল্যান্ডের এ উদ্যোগ এখন বিশ্বের সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছে। ইউরোপের ৩৫টি শহরে আইসল্যান্ডের এ উদ্যোগ এখন অনুসরণ করা হচ্ছে। 

আমাদের তরুণদের উজ্জীবিত করার মূল দায়িত্ব নিতে হবে পরিবারকেই। এ ছাড়া মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম দরকার। সুষম, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে। সুস্থ-স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। মাদকাসক্তিসহ যে কোনো ধরনের আসক্তি থেকে দূরে থাকতে হবে। তরুণদের বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, রাগ, হতাশা, বিরক্তি, মানসিক চাপের মতো বিষয়গুলো পারিবারিকভাবেই সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সামাজিক ও পারিবারিকভাবে সচেতনতা বাড়াতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে টিনএজদের সুস্থ মানসিক ও শারীরিক বিকাশের মূল ভূমিকাটি হচ্ছে তার পরিবার। আর প্রতিটি পরিবারকে মনে রাখতে হবে আমাদের সন্তানরা পুরোপুরি ফুলের বাগান কিংবা কুমারবাড়ির মাটি। তাদের সঠিক পরিচর্যা আর পালনের মধ্য দিয়েই পেতে পারি একেকটি সুবাসিত ফুল। কিংবা কুমারের নিখুঁত ও চৌকস হাতের স্পর্শে গড়ে নিতে একেকটি চমৎকার মানুষ। অভিভাবকদের উচিত হবে সবার আগে নিজের সন্তানের প্রতি লক্ষ্য রাখা। অতি আদরের সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, সে কী পড়ছে, ইন্টারনেটে কী দেখছে সেগুলো লক্ষ রাখতে হবে। বিশেষ করে সন্তান ধর্মান্ধতার দিকে ঝুঁকছে কি না সেই বিষয়টি খুবই সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। 

আমাদের অভিভাবকরাও নিজ নিজ সন্তানের জন্য এসব উদ্যোগ নিলে সুফল মিলবে বলে নিশ্চিতভাবেই আশা করা যায়। 

# নিউইয়র্ক, ২৭ অক্টোবর 

শেয়ার করুন