৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:২৯:৩৪ অপরাহ্ন


বাইডেনের ‘প্যারোল ইন প্লেস’ প্রোগ্রাম বাতিল করেছেন ফেডারেল বিচারক
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১১-২০২৪
বাইডেনের ‘প্যারোল ইন প্লেস’ প্রোগ্রাম বাতিল করেছেন ফেডারেল বিচারক গত ১৭ জুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ‘প্যারোল ইন প্লেস’ প্রক্রিয়া ঘোষণা করছেন


টেক্সাসের ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক জে. ক্যাম্পবেল বার্কার গত ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বাইডেন প্রশাসনের ‘প্যারোল ইন প্লেস’ প্রক্রিয়া বাতিল করেছে। বিচারক বার্কার গত বৃহস্পতিবারে দেওয়া রায়ে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই প্রোগ্রামটি বেআইনি এবং তার নির্বাহী ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছে। এই উদ্যোগটি আইনবহির্ভূত। বাইডেন প্রশাসনের এমন প্যারোল প্রদানের বৈধ ক্ষমতা নেই বলে তিনি মত দেন। এই প্রোগ্রামের লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জীবনসঙ্গী হিসেবে বসবাসরত ৫ লাখের বেশি অবৈধ অভিবাসীকে বৈধ করে তোলা। তবে বার্কারের রায় অনুযায়ী, অবৈধ অভিবাসী জীবনসঙ্গীদের বৈধ করার প্রয়াস থমকে গেল।

বাইডেন প্রশাসন গত জুনে এই প্রোগ্রাম চালু করেছিল, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সঙ্গে বিবাহিত অবৈধ অভিবাসীদের ডিপোর্ট বা বিতাড়নের হাত থেকে সুরক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল মিশ্র-অবস্থার পরিবারগুলোর পারিবারিক ঐক্য বজায় রাখা, যা ‘কিপিং ফ্যামিলিস টুগেদার’ নামে পরিচিত।এই পদক্ষেপে, একজন অভিবাসীকে গত ১৭ জুন সোমবারে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের ১০ বছর পূর্ণ হতে হবে, এ দেশে বসবাস করতে হবে এবং একজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হতে হবে। এই যোগ্যতার ভিত্তিতে অভিবাসীর আবেদন অনুমোদিত হলে, তিনি গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করার জন্য তিন বছর সময় এবং একটি অস্থায়ী ওয়ার্ক পারমিট পাবেন। অবৈধভাবে থাকার যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাবেন। তাছাড়া এর মধ্যে তিনি নির্বাসন থেকে রেহাইও পাবেন। দম্পতিকে কত দিন বিয়ে করতে হবে তার কোনো প্রয়োজন নেই, তবে ১৭ জুন সোমবারের পর কেউ বিয়ে করলে তিনি আবেদনের যোগ্য হবেন না। মার্কিন আইন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সঙ্গে বিবাহিত অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতার জন্য তাদের প্রথমে দেশ ছেড়ে আবার বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে হয়। এই নীতিটি সেই শর্ত বাতিল করে অভিবাসীদের গ্রিনকার্ডের জন্য সরাসরি আবেদন করতে সুযোগ দেয় ।

ফেডারেল কোর্টের এই সিদ্ধান্ত বাইডেন প্রশাসনের জন্য বড় ধরনের একটি পরাজয় হিসেবে দেখছেন অভিবাসীরা। প্রশাসন দাবি করেছিল, আনুমানিক ৫ লাখ অনথিভুক্ত অভিবাসী এই প্রোগ্রামের আওতায় বৈধতার সুযোগ পাবে। তবে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে বলে জানিয়েছে। একই সঙ্গে, বাইডেনের অভিবাসন নীতির বিরোধিতাকারী আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসন এ ধরনের নীতিকে ভেঙে ফেলার অঙ্গীকার করেছে। প্রেসিডেন্ট ইলেকট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছিলেন যে, তিনি মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তকে শক্তিশালী এবং সামরিকীকরণ করবেন এবং মার্কিন ইতিহাসে বৃহত্তম গণ বিতাড়নের উদ্যোগ নেবেন।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাঞ্জেলো ফার্নান্দেজ হার্নান্দেজ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি এবং পরবর্তী পদক্ষেপ মূল্যায়ন করছি। তিনি আরো বলেন, রায়টি রিপাবলিকান রাজ্য কর্মকর্তাদের পক্ষ নিয়ে আমেরিকান নাগরিকদের পরিবারগুলিকে ভয়ের মধ্যে ছায়ায় রেখে দেওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছিলেন, আমেরিকা এমন একটি দেশ নয় যেখানে পরিবারগুলোকে আলাদা করা হয়।

এই প্রোগ্রামটি চালু হওয়ার অল্পদিন পরেই টেক্সাসসহ ১৪টি রিপাবলিকান স্টেটের আইনি চ্যালেঞ্জের কারণে প্রোগ্রামটি স্থগিত হয়ে যায়। আমেরিকা ফার্স্ট লিগ্যালের নির্বাহী পরিচালক জিন হ্যামিল্টন এ রায় প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থার ধ্বংস ও সীমান্তের নিরাপত্তা তুলে ধরার উদ্যোগের বিরুদ্ধে এই রায় আমাদের পক্ষে একটি বড় বিজয়। আমরা বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের শত শত হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গণ ক্ষমা দেওয়ার অবৈধ প্রচেষ্টা সফলভাবে বন্ধ করেছি। এই মামলার স্টেটগুলো হলোÑটেক্সাস, আইডাহো, আলাবামা, আরকানসাস, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, আইওয়া, কানসাস, লুইজিয়ানা, মিসৌরি, নর্থ ডাকোটা, ওহাইও, সাউথ ক্যারোলাইনা, সাউথ ডাকোটা, টেনেসি এবং ওয়াইয়োমিং।

বাইডেন প্রশাসন ধারণা করেছিল যে প্রায় ৫ লাখ অভিবাসী এবং ৫০ হাজার শিশু এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে সুবিধা পাবে, তবে রাষ্ট্রগুলোর জোট দাবি করেছে যে এটি প্রায় ১.৩ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসীকে বৈধতা প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

ফেডারেল কোর্টের এই রায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জীবনসঙ্গী হিসেবে থাকা অবৈধ অভিবাসীদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে। বাইডেন প্রশাসনের ‘কিপিং ফ্যামিলিস টুগেদার’ নীতির লক্ষ্য ছিল পরিবারগুলোকে একত্রিত রাখা, তবে আদালতের এই সিদ্ধান্তে সেই প্রচেষ্টা আপাতত স্থগিত হলো। রিপাবলিকানদের কঠোর অবস্থান এবং সম্ভাব্য ট্রাম্প প্রশাসনের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের নতুন উদ্যোগ এই নীতির ভবিষ্যৎকে আরো অনিশ্চিত করেছে। যদিও বাইডেন প্রশাসন আপিলের মাধ্যমে প্রোগ্রামটি পুনরায় চালুর চেষ্টা করতে পারে। অভিবাসন নীতি, পারিবারিক ঐক্য এবং সীমান্ত নিরাপত্তার ভারসাম্যের এই প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ অভিবাসন ব্যবস্থার রূপরেখা কেমন হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

‘প্যারোল ইন প্লেস’ কী?

২০২৪ সালে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট (ডিএইচএস) ‘কিপিং ফ্যামিলিজ টুগেদার’ প্রক্রিয়া চালু করেছে। আনুমানিক ৫ লাখ দীর্ঘমেয়াদি অবৈধ মার্কিন নাগরিকদের পতœীর জন্য প্যারোল ইন প্লেসের সুবিধা প্রসারিত করেছে। প্যারোল ইন প্লেসের সুবিধাভোগীরা অস্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত হওয়া থেকে সুরক্ষিত থাকবেন। তারা বৈধ কর্ম অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং তারা বৈধ স্থায়ী বাসিন্দার জন্য তাদের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো ২ মিলিয়ন আমেরিকান পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে, যার মধ্যে ৫০ হাজার অবৈধ শিশু এবং তরুণদের পরিবারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আমেরিকান পরিবারগুলোকে একসঙ্গে রাখা

২০২৪ সালের ১৮ জুন, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করেছে যে, কিছু অবৈধ অভিবাসী যারা মার্কিন নাগরিকদের সঙ্গে বিবাহিত, তারা প্যারোল ইন প্লেসের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই দীর্ঘস্থায়ী আইনগত ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের শত শত হাজার মিশ্র-অবস্থা আমেরিকান পরিবারগুলোর জন্য সাহায্য, সমর্থন এবং সুযোগ প্রদান করা হবে। ‘কিপিং ফ্যামিলিজ টুগেদার’ প্যারোল ইন প্লেস প্রক্রিয়ার জন্য আবেদন ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট থেকে খোলা হয়েছিল। তবে আইনগত চ্যালেঞ্জগুলো আবেদনের প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

৫ লাখ অবৈধ পত্নী

৫ লাখ অবৈধ মার্কিন নাগরিকদের পত্নী যারা এই প্রশাসনের নতুন প্যারোল ইন প্লেস প্রক্রিয়ার জন্য যোগ্য হতে পারেন, তারা ২৩ বছর গড় সময় ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। যে পরিবারগুলো এই রিলিফ পাবে, তাদের মধ্যে প্রায় ১.৪ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক বসবাস করছে, যার মধ্যে ৬ লাখেরও বেশি শিশু রয়েছে। এ প্রকল্পটি কয়েক লাখ পরিবারকে পরিবার বিচ্ছেদ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। অবৈধভাবে বসবাসকারী ব্যক্তিরা মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে বিবাহিত থাকলেও এবং মার্কিন নাগরিক শিশু থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের ঝুঁকি থাকে, বিশেষত এমন রাজ্যে যেখানে অভিবাসন বিরোধী কঠোর আইন প্রয়োগ করা হয়।

শেয়ার করুন