ভারত থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী’র আমিরের একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান ধরনের গুঞ্জন। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার মতো একটি পত্রিকায় বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমানের সাক্ষাৎকারকে কেউ কেউ ইতিবাচক হিসাবে দেখলেও কারো কারো মতে দলটির রাজনৈতিক ইমেজের জন্য ক্ষতিকর হয়েছে। তারা মনে করেন, এধরনের সাক্ষাৎকারটি ঠিক এসময়ে প্রকাশিত হয়ে পড়ায় দলটির গোপন মিশন বা পরিকল্পনাটিই আসলে কৌশলে আনন্দবাজার পত্রিকা উন্মোচন করে দিয়েছে।
দেখা যাক কি কে বিষয় ইতিবাচক
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় বিশেষ করে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির সাক্ষাৎকার গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ। দেশটির সাথে সু-যোগাযোগের ইঙ্গিতই কেবল বহন করে না, ভবিষ্যতের একটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকেও ইশারা কবে। এমনও হতে পারে দেশটির সাথে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর কোনো পর্যায়ে একটি সুসসর্ম্পক হয়েছে, যা ভবিষ্যতে অনেক দূর পর্যন্ত গড়াবে। ইতিবাচকের আরো কারণ রয়েছে। অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দলটির আমীরের মনোভাব বা ইচ্ছাটি সরাসরি ঐ দেশের কারো সঙ্গে বৈঠক বা সাক্ষাৎ না করেও একটি বার্তা দেয়া হয়েছে। ধরে নেয়া যেতে পারে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ৫ আগস্টের পরপরই আমির শফিকুর রহমান ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক চায় বলে বক্তব্য দিয়েছিলেন। আর এমন আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির পক্ষ থেকে এক প্রেস ব্রিফিং এ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল আশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ভবিষ্যতে এ নিয়ে আরও আলাপ আলোচনা হতে পারে। সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারটি সেদিকে নিয়ে যাবার কোনো স্তুর কাজ করছে কি-না তা-ও দেখা বিষয়। উল্লেখ্য আনন্দবাজার পত্রিকায় সাংবাদিক অগ্নি রায় জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করেই বসেন। জানতে চান জামায়াতে ইসলামীর ভারত-বিরোধিতা সর্বজনপরিচিত। কী বলবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আমির শফিকুর রহমান বলেন, সম্পূর্ণ অস্বীকার করছি। এই ধারণা ভিত্তিহীন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের নিশানা করে এই মতবাদ ছড়ানো হয়েছে যাতে জামায়াতের রাজনীতির মিথ্যা ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। সমান মর্যাদা এবং সম্মানের ভিত্তিতে আমরা ভারত-সহ সমস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। আমাদের আন্তর্জাতিক নীতি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। চাই ভারতও একইরকম সাড়া দিক, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সহাবস্থানের ভিত্তিতে। আমির শফিকুর রহমানের এমন কৌশলী বক্তব্যকে অনেকে ভারতের সাথে দলটির ভবিষ্যত দহরম মহরমের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে সহায়তা করবে বলে মনে করেন।
নেতিবাচক যে কারণে
আনন্দবাজার পত্রিকায় বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের সাক্ষাৎকারে অনেকে নেতিবাচক দিক রযেছে বলেও কারো কারো অভিমত। তাদের মতে, পত্রিকাটির সাংবাদিক অগ্নি রায় জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের সাক্ষাকারে প্রশ্ন করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন তাদের মোটিভ বা লক্ষ্য। সাংবাদিক অগ্নি রায় দলটির আমির শফিকুর রহমানের সাক্ষাকারে প্রশ্ন করে জানতে চান জামায়াতে ইসলামীকে দেখা হয় কট্টর ইসলামি সংস্থা হিসাবে, অন্যান্য ইসলামি রাষ্ট্রে যে ‘ইসলামিক ব্রাদারহুড’ রয়েছে তার অংশ হিসেবে। নিজেদের সংগঠনকে কীভাবে দেখেন? এমন প্রশ্নের আসল লক্ষ্য আসলে যে কোনো পাঠকই বুঝতে পারার কথা। সাংবাদিক অগ্নি রায় আসলে বোঝাতে চাইলেন তার দেশ বা তাদের মতামত হচ্ছে ‘জামায়াতে ইসলামীকে দেখা হয় কট্টর ইসলামি সংস্থা’। পাশাপাশি এটাও যে তাদের কাছে খবর অছে তা হলো জামায়াতকে ধরে নেয়া হয় যে, ‘অন্যান্য ইসলামি রাষ্ট্রে যে ‘ইসলামিক ব্রাদারহুড’ রয়েছে তার অংশ হিসেবে।” অগ্নি রায়ের এমন ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের প্রতিক্রিয়ায় বোঝা গেছে প্রশ্নকর্তা ও তার দেশ যে তাদের কি চোখে দেখছে। কেননা বলা চলে রেগে গিয়েই আমির জবাব দেন....আবারও আপনি ধরেই নিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠন। এদিকে এই অগ্নি রায় আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে দেন সাক্ষাৎকারের প্রশ্নের আড়ালে।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের কাছে অগ্নি রায়ের প্রশ্ন ছিল ‘বিএনপির একটি অংশ আপনাদের কট্টরপন্থী মনোভাব নিয়ে অস্বস্তিতে। কী বলবেন? অগ্নি রায় আরেক জায়গায় প্রশ্ন করেন, ‘একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার এবং জামায়াত মিলিমিশে আওয়ামী লীগের পর এবার বিএনপিকেও সরিয়ে দিতে চাইছে। দুই বড় রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে নতুন শক্তির উত্থান হবে। কতটা ঠিক?’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আনন্দবাজারের প্রশ্নের এমন কৌশলে রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হয় যে, বাংলাদেশের ক্ষমতায় যাওয়ার যে স্বপ্ন বিএনপি দেখছে তা হয়তোবা এটি তাদের দ্বিবাস্বপ্ন। সেই আশা যে গুড়েবালি হয়ে যেতে পারে তার আভাস দিলেন প্রশ্নের মাধ্যমে সাংবাদিক অগ্নি রায়। পর্দার আড়ালে যে চক্রান্ত হচ্ছে খোদ বিএনপি’র এক সময়ের মিত্র দ্বারাই সেটি স্পষ্ট করা হলো অগ্নি রায়ের প্রশ্নের মাধ্যমে।