তারেক রহমান
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা হিসাব নিকাশ। গ্রামের মানুষের মধ্যে এক ধরনের বোঝাপড়া। অন্যদিকে শহরের মানুষের মধ্যে আরেক রকম। এদের মধ্যে নির্বাচনের আগে কি হতে পরে কি হবে তা নিয়ে ভাবনার শেষ নেই। অন্যদিকে সমাজের উঁচুস্তরের অন্যরকম আলিশান ভাবনা। তারা ভাবছে তারা যা মনে করে সেটাই সঠিক। তবে কমবেশি সবাই উদ্বিগ্ন দেশে কি হচ্ছে? নির্বাচন কি হবে না হবে না? নির্বাচনের আগে কি পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাবে? না-কি পরে খারাপ হবে। আবার দেখা যাচ্ছে নির্বাচন হবে কি-না তার নেই কোনো খবর নেই-এমন ধারণাকারীও চিন্তিত। এই নির্বাচন সুষ্ঠু বা নিরপেক্ষ হবে কি-না? আবার এমন ভাবনাও পেয়ে বসছে যে, নির্বাচনের পরে কি হবে? টিকতে পারবে তো সেই ক্ষমতাসীন সরকার- এমন বিস্তর আলোচনার ঝড় বইছে দেশে।
দেশের প্রান্তিক মানুষ থেকে নিয়ে সব উঁচু পর্যায়ের মানুষের মধ্যে সাথে এই বিষয়ে একান্তে আলাপ করে দেখা গেছে, এদের কাছে আরও বেশি খবর চলে আসে। তবে সব পর্যায়েই একটি বিষয় মোটামুটি স্থির হচ্ছে যে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে কি-না তা নিয়ে সবার মধ্যে দোদুল্যমনতা আছে।
তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে দেখা গেছে, নির্বাচনের আগে একটি জটিলতা কোনো একটি পক্ষ থেকে আসবেই। এমন আভাস মিলছে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার তার কথিত মেয়াদ শেষের আগে চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুই বন্দর পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া নিয়ে নানান আলোচনা মাঝে। এটি নিয়ে সব মহল থেকেই জোরালোভাবেই প্রতিবাদের ঝড়ের পাশাপাশি নানান ধরনের প্রশ্ন তোলা হয়েছে। একটি অনির্বাচিত সরকার তার মেয়াদ শেষের আগে কেন চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুই বন্দর পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানিকে দিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, ‘নিজেদের ঘোষণা অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকার আগামী দুই-তিন মাসের বেশি ক্ষমতায় নেই। এ রকম একটা সরকার কী কারণে ৪০-৫০ বছরের এমন একটা চুক্তি করবে, যেটা পুরো অর্থনীতি ও দেশকে প্রভাবিত করবে এবং যার মধ্যে অনেক ধরনের উদ্বেগের বিষয় আছে। সেই চুক্তি স্বাক্ষর কেন গোপনীয়তা ও অস্বচ্ছতার সঙ্গে ছুটির দিনে তাড়াহুড়া করে করা হবে? তারা এ ধরনের একটা চুক্তি করার এখতিয়ার কীভাবে পায়?’
এরপর অনেকই তুলেছেন। তবে ২৫ নভেম্বর মঙ্গলবার দেখা গেলো অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে রাখা একটি খবর। তা ছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য। গণমাধ্যমের খবরে দেখা যাচ্ছে গত ২৪ নভেম্বর সোমবার এক ফেসবুক পোস্টে বন্দর নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
এতে অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের বন্দর কিংবা এলডিসি থেকে উত্তরণের মতো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারেক রহমান বলেছেন, ‘একটি দেশ যেই সরকারকে নির্বাচিত করেনি, সেই সরকার দেশের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিতে পারে না।’ চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ পরিচালনা এবং ঢাকার পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে সোমবার এক ফেসবুক পোস্টে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি, যা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলা যায় সামনের দিনে অনেক পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, দুটি টার্মিনাল নিয়ে চুক্তির পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারেক রহমান ওই পোস্টে বলেছেন, দেশের জনগণের ওপর এসব সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে। অথচ এমন একটি সরকার এসব কৌশলগত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যাদের গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট নেই।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ইংরেজিতে লেখা দীর্ঘ পোস্টে তিনি এই দুটি বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান। পাঠকদের জন্য সম্পূর্ণ পোস্টটি ভাষান্তর করে তুলে ধরে একটি বহুর প্রচারিত গণমাধ্যমে। এতে এক জায়গায় বলা হয়, এলডিসি থেকে উত্তরণের বিষয়ে আমরা যেমনটা দেখেছি, চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়েও তা–ই দেখছি। সব কৌশলগত বিকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জনগণের সমালোচনাকে ভালোভাবে নেওয়া হচ্ছে না। দ্রুতততা ও অনিবার্যতার অজুহাত দেখিয়ে যৌক্তিক উদ্বেগগুলোকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের বিষয়ে সরকারি বিবৃতি নিয়ে বিতর্ক যতটা হচ্ছে; প্রকৃতপক্ষে এটা তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপি আগেও বলেছে, সময় নেওয়ার বিকল্পের পথে না গিয়ে ২০২৬ সালে উত্তরণের সময়সূচি এগিয়ে নেওয়া পুরোপুরি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, অথচ তা নিচ্ছে এমন একটি অন্তর্বর্তী সরকার, যাদের কোনো নির্বাচনী ম্যান্ডেট নেই। তারপরও তারা এমন দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতিকে বহু দশক ধরে প্রভাবিত করবে। আমাদের বলা হয়েছে, দেরি করাটা ‘অসম্ভব’। এমনকি এটা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করাটাও ‘অপমানজনক’ হবে। জাতিসংঘ বিবেচনা করবে না। কিন্তু আমরা সবাই যদি নিবিড়ভাবে দেখি-দেখব, ইতিহাস আরও জটিল গল্প বলছে।
একেবারে শেষে তারেক রহমান লিখেছেন, ‘এ কারণেই আমাদের অনেকেই ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। দেশের মানুষের কথা বলার, বেছে নেওয়ার এবং একটি সহজ সত্য নতুন করে প্রমাণ করার সুযোগ এটা। আর সত্যটি হলো-এ দেশের ভবিষ্যৎ তাদের দ্বারাই গঠিত হবে; যাঁরা এখানে বসবাস করেন এবং বিশ্বাস করেন ‘সবার আগে বাংলাদেশ’।
শেষ কথা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওই লেখায় ‘ইতিহাস আরও জটিল গল্প বলছে।’ কিংবা ‘আমাদের অনেকেই ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছি’ ..অন্যদিকে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’- এই কথাগুলো বর্তমান কিংবা আগামী দিনের সামনের দিনের বাংলাদেশের জন্য বেশ ইঙ্গিতবহ। এসব মন্তব্য কিংবা অভিমত যা-ই বলা হোক না কেনো এর-ই মধ্যে‘ ২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ এবং এনিয়ে ‘কোনো ধরনের সমঝোতা যা লন্ডন বৈঠক বলে পরিচিত তা ভেঙ্গে যাওয়া-সহ অনেক কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সামনের দিনে বলে দেবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি আসলে কোন দিকে যাচ্ছে...।