যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক গোপন ফেডারেল সন্ত্রাস ওয়াচলিস্ট এবং ‘নো ফ্লাই লিস্ট’ বাতিলের দাবিতে গত ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ম্যাসাচুসেটসের ফেডারেল আদালতে একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি লড়াই শুরু হয়েছে। মুসলিম নাম যেমন মোহাম্মদ, আলি বা মাহমুদের বিভিন্ন বানানসহ অন্তর্ভুক্ত নামের কারণে বাংলাদেশিসহ অনেক মুসলিম এই সন্ত্রাসী ওয়াচলিস্ট এবং ‘নো ফ্লাই লিস্ট’-এ তাদের নাম এন্ট্রি করা হয়েছে। শুধু এ তিনটি নামেরই তালিকায় প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার নামের এন্ট্রি রয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, এই তালিকা প্রায় সম্পূর্ণরূপে মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং কোনো বৈধ প্রক্রিয়া ছাড়াই হাজারো নিরপরাধ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করেছে। তালিকায় থাকা ৯৮ ভাগ নাম মুসলিম, যা এই সিস্টেমকে ইসলামফোবিয়ার উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করে। শুনানিতে বাদীদের অ্যাটর্নি গাড়ির আব্বাস আদালতকে বলেন, গোপন ফেডারেল সন্ত্রাস ওয়াচলিস্ট এবং ‘নো ফ্লাই লিস্ট’ শুধু নামের কারণে নিরপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে গভীর প্রভাব ফেলছে। যার মধ্যে রয়েছে ভ্রমণে বাধা, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদানে অসুবিধা, নাগরিক সুবিধা প্রত্যাখ্যান এবং সমাজে অপমানজনক আচরণের শিকার হওয়া। এই প্রক্রিয়ার অবসান এবং মুসলিমদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা ও তালিকাটি বাতিল করা হোক।
মামলাটি ১৫ জন আমেরিকান মুসলিমের পক্ষে দায়ের করা হয়েছে, যারা অন্যায়ভাবে ফেডারেল সন্ত্রাস ওয়াচলিস্ট এবং ‘নো ফ্লাই লিস্ট’-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। কেয়ার জানিয়েছে, এই গোপন ওয়াচলিস্ট প্রায় সম্পূর্ণরূপে মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। তালিকার ৯৮ ভাগ নাম মুসলিমদের। এতে প্রধানত মুসলিম নাম যেমন মোহাম্মদ, আলি বা মাহমুদের বিভিন্ন বানান অন্তর্ভুক্ত। শুধু এই তিনটি নামেরই তালিকায় প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার নামের এন্ট্রি রয়েছে।
নিউজার্সির প্রোসপেক্ট পার্কের মেয়র মোহাম্মদ টি খাইরুল্লাহ, যিনি মামলার অন্যতম বাদী, সম্প্রতি ‘নো ফ্লাই লিস্ট’-এর কারণে সমস্যার সম্মুখীন হন। গত মে মাসে, তিনি হোয়াইট হাউজে ঈদুল ফিতরের বার্ষিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাধা পান। এই তালিকা মুসলিমদের সামাজিক এবং পেশাগত জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই তালিকা ইসলামফোবিয়ার স্পষ্ট উদাহরণ। মুসলিম নাম, পোশাক, দাতব্য অনুদান এবং ইসলামিক ধর্মীয় প্র্যাকটিসগুলোকেই সন্দেহজনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ইউএস সরকার এই তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য কোনো তদন্ত, অভিযোগ বা অপরাধে দোষী প্রমাণ ছাড়াই নাম যোগ করে। তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা ভ্রমণের সময় হয়রানি, এসএসএসএস (সেকেন্ডারি সিকিউরিটি স্ক্রিনিং সিলেকশন) হিসেবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা তল্লাশি এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হন। অনেক সময় তাদের সরকারি চাকরি, নিরাপত্তা ছাড়পত্র, অস্ত্রের লাইসেন্স এবং অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। এমনকি তালিকা থেকে নাম সরিয়ে ফেলার পরও তাদের আগের ওয়াচলিস্ট রেকর্ড বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়।
কেয়ারের নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদ বলেন, আমাদের সাহসী ক্লায়েন্ট এবং আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানাই, যারা সরকারের এই বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিক ওয়াচলিস্টের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ সিস্টেম হাজারো নিরপরাধ মানুষের জীবনে দুঃখজনক প্রভাব ফেলেছে। আমরা আবারও ফেডারেল সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই এই তালিকা বিলুপ্ত করার জন্য। জাতীয় মামলার পরিচালক লিনা মাসরি বলেন, ২০ বছর ধরে সরকার একটি গোপন তালিকার মাধ্যমে মুসলিমদের শাস্তি দিয়ে আসছে, যা কখনো কংগ্রেস অনুমোদন করেনি এবং যা কোনো বৈধ প্রক্রিয়া ছাড়াই পরিচালিত হয়। এটি শুধু নিরপরাধ মুসলিমদের ওপর অসীম কষ্ট আরোপ করেছে। বাইডেন প্রশাসনের এখন দায়িত্ব এবং সুযোগ রয়েছে এটি বন্ধ করার। তিনি আরো বলেন, এই গোপন তালিকা নিরপরাধ মানুষদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকত্বে পরিণত করেছে। তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা তাদের নাগরিক সুবিধা যেমন পাসপোর্ট, ভিসা এবং নাগরিকত্ব প্রক্রিয়ায় বিলম্ব বা বাতিলের মুখোমুখি হন। তালিকায় তাদের নাম কোনো প্রমাণ ছাড়াই অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং তারা কখনোই জানেন না কেন তাদের সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ গোপন ব্যবস্থা অসাংবিধানিক কারণ এটি সমান অধিকার এবং আইনি প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে।
মামলার লক্ষ্য মুসলিম নাগরিকদের অধিকার রক্ষা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। এ মামলার মাধ্যমে সরকার মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু করার এ বৈষম্যমূলক প্রক্রিয়া বন্ধ করবে এবং নিরপরাধ মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পাবেন।