৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:১৬:০০ অপরাহ্ন


অবৈধ অভিবাসীদের নজরদারি ও বহিষ্কারে নতুন এআই সিস্টেম ‘ইমিগ্রেশন ওএস’
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৮-২০২৫
অবৈধ অভিবাসীদের নজরদারি ও বহিষ্কারে নতুন এআই সিস্টেম ‘ইমিগ্রেশন ওএস’ ডেনভারভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সফটওয়্যার কোম্পানি প্যালানটর


ইউএস ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) সম্প্রতি শরণার্থী এবং অবৈধ অভিবাসীদের গতিবিধি ট্র্যাক এবং নজরদারি করতে একটি নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সিস্টেম তৈরি করার জন্য ডেনভারভিত্তিক একটি সফটওয়্যার কোম্পানি প্যালানটরের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই সিস্টেমটির নাম দেওয়া হয়েছে ’ইমিগ্রেশন ওএস’। প্যালান্টির এআই সিস্টেমটি আগামী ২০২৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরীক্ষামূলক রূপে তৈরি হবে এবং ২০২৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। এ প্রকল্পের জন্য আইসিই প্যালানটরের কাছে ৩০ মিলিয়ন ডলার প্রদান করবে। প্যালানটরের প্রযুক্তি দীর্ঘদিন ধরে শরণার্থী এবং অভিবাসী শিকার অভিযান পরিচালনায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০১৩ সাল থেকে, প্যালানটরের সিস্টেমগুলি আইসিইর বিভিন্ন অপারেশনে ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ডাটা মাইনিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্দেহভাজন অননুমোদিত অভিবাসীদের শনাক্ত, নজরদারি ও বহিষ্কারের জন্য কাজ করছে। নতুন ‘ইমিগ্রেশন ওএস’ সিস্টেমটি এ কাজকে আরো দ্রুত এবং কার্যকরি করবে বলে আইস দাবি করছে, কিন্তু এ প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে বিশেষজ্ঞরা গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

প্যালান্টির একটি মূল বক্তব্য হল যে, তারা শুধু প্রযুক্তি সরবরাহ করে, নীতি বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যে সিস্টেমগুলো তৈরি করা হচ্ছে, তা তাদের ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে। এই ডিজাইনই বাস্তবে নীতি গঠনের সমতুল্য। ‘ইমিগ্রেশন ওএস’ সিস্টেমটি কীভাবে নির্মিত হবে, তা আসলে নির্ধারণ করবে কোনো ধরনের ডাটা সংকলিত হবে, কোনো তথ্যসমূহ ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হবে এবং কতটুকু ত্রুটি বা পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা থাকবে। এমন কিছু উদাহরণ রয়েছে, যেখানে ভুল বা পক্ষপাতিত্বের ভিত্তিতে বানানো অ্যালগরিদমগুলো গুরুতর ক্ষতি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালে প্রোপাবলিকা নামক সংবাদ সংস্থা রিপোর্ট করেছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধ বিচারব্যবস্থায় ব্যবহৃত একটি ঝুঁকি মূল্যায়ন সিস্টেম ‘কম্পাস’-এর প্রায় দ্বিগুণ বেশি সম্ভাবনা দেখিয়েছে, কৃষ্ণাঙ্গ আসামিরা পুনরায় অপরাধে লিপ্ত হবে এবং সাদা আসামিরা তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকির স্বীকার হয়েছেন, যদিও তাদের প্রকৃত ঝুঁকি একই ছিল। এ ধরনের সিস্টেমগুলোর ব্যবহারের মাধ্যমে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো প্রযুক্তির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়, যা শুধু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফল নয়, বরং প্রযুক্তির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

প্যালান্টির ‘ইমিগ্রেশন ওএস’ সিস্টেমটির তিনটি প্রধান উপাদান রয়েছে। প্রথম উপাদানটি হলো টার্গেটিং এবং এনফোর্সমেন্ট প্রাইওরিটাইজেশন, যা আইসিইকে সাহায্য করবে কাদের প্রথমে অপসারণ করা উচিত তা নির্ধারণ করতে, যেমন ‘হিংসাত্মক অপরাধী’ এবং যারা ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে। তবে ‘হিংসাত্মক অপরাধী’ কে চিহ্নিত করা হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। দ্বিতীয় উপাদানটি হলো স্বেচ্ছায় দেশত্যাগের ট্র্যাকিং, যা দেখবে, ব্যক্তিরা স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ করছে কি না। তৃতীয় উপাদানটি হলো, ইমিগ্রেশন লাইফ সাইকেল ম্যানেজমেন্ট, যা পুরো বহিষ্কারের প্রক্রিয়াটি সহজ এবং দ্রুত করবে, যেমন ব্যক্তি চিহ্নিত করা থেকে শুরু করে তাদের অপসারণের কাজ। এ সিস্টেমটি সরকারি ডাটাবেজ থেকে বিশাল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করবে, যা আরো গোপনীয় তথ্যের মধ্যে প্রবেশ করবে, যেমন পাসপোর্ট রেকর্ড, সামাজিক নিরাপত্তা ফাইল, আইআরএস ট্যাক্স ডাটা এবং এমনকি লাইসেন্স প্লেট রিডার ডাটা। এর মূল লক্ষ্য হলো, ব্যক্তির একটি বিস্তৃত প্রোফাইল তৈরি করা, যা আরো দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

এমন একটি সিস্টেমের মাধ্যমে, যেখানে হাজার হাজার মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তাদের প্রতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, তা সিভিল লিবার্টিজ এবং গোপনীয়তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হতে পারে। যদিও প্যালান্টির দাবি, তাদের সিস্টেম কোনো ব্যক্তি বা জাতির বিরুদ্ধে নয়, বরং শুধু প্রযুক্তি সরবরাহ করা হচ্ছে, বাস্তবতা হলো যেভাবে ডাটা একত্রিত এবং বিশ্লেষণ করা হয়, তা কীভাবে অ্যালগরিদমকে প্রভাবিত করতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রেই পক্ষপাতিত্ব তৈরি করতে পারে। আইসিই কর্তৃপক্ষ এবং প্যালান্টির মধ্যে সম্পর্কের প্রতি অনেকের সন্দেহ রয়েছে, বিশেষত এ চুক্তির সঙ্গে যুক্ত থাকা রাজনীতিকদের পূর্ব ইতিহাসের কারণে। ২০১৬ সালের ট্রাম্প প্রশাসনে শরণার্থী এবং অভিবাসী বিরোধী নীতির প্রধান স্থপতি স্টিফেন মিলারের নামও উঠে এসেছে, যিনি প্যালান্টির সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের কারণে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। এটি প্রকল্পের স্বচ্ছতার ওপর প্রশ্ন তুলেছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যবহারকে সম্ভাব্য করে তুলেছে।

প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্যালান্টির ভূমিকা শুধু সরবরাহকারী হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখার কোনো বাস্তবতা নেই। তারা যে সিস্টেমগুলো তৈরি করছে, সেগুলি আইসিইর ইমিগ্রেশন পরিচালনা এবং আইন প্রয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ফলে প্রযুক্তির নির্মাণ প্রক্রিয়া কেবল একটি প্রযুক্তিগত সমস্যা নয়, বরং নৈতিক এবং সামাজিক প্রভাব বিস্তারকারী একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইসিই এবং প্যালান্টির দাবি করা হচ্ছে যে, এ সিস্টেমগুলো আইনি প্রক্রিয়াকে আরো দ্রুত এবং সঠিক করবে। তবে এ ধরনের সিস্টেমগুলোর মানবাধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতার প্রতি প্রকৃত হুমকি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং, এটি অত্যন্ত জরুরি, এ ধরনের প্রকল্পের জন্য নির্দিষ্ট পর্যালোচনা এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকা উচিত। প্রযুক্তি নির্মাণের প্রক্রিয়া কোথায় কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, সে সম্পর্কে পূর্ণ স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন।

প্যালান্টির তৈরি নতুন ‘ইমিগ্রেশন ওএস’ সিস্টেমটি যদি কার্যকরি হয়, তবে এটি আইসিইর শরণার্থী এবং অভিবাসী শিকার কর্মসূচির আরো কঠোর প্রয়োগের একটি সরঞ্জাম হিসেবে কাজ করবে। তবে এর মাধ্যমে তৈরি হওয়া গোপনীয়তা এবং পক্ষপাতিত্বের ঝুঁকি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। যদি এ ধরনের প্রযুক্তির পরিচালনা এবং পর্যবেক্ষণ কঠোরভাবে না করা হয়, তবে তা মানবাধিকার, নাগরিক স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই এটি অত্যন্ত জরুরি, এর কার্যক্রমে সর্বাধিক সতর্কতা এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়।

শেয়ার করুন