১৪ ডিসেম্বর ২০১২, শনিবার, ০৩:০৬:০৬ পূর্বাহ্ন


এমআইটি ২ লাখ ডলারের কম আয়সম্পন্ন পরিবারের জন্য টিউশন ফি মওকুফ করবে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১১-২০২৪
এমআইটি ২ লাখ ডলারের কম আয়সম্পন্ন পরিবারের জন্য টিউশন ফি মওকুফ করবে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) কিলিয়ান কোর্টে গ্রেট ডোম


ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ২০২৪ সালের শরৎকাল থেকে ২ লাখ ডলারের কম আয়সম্পন্ন পরিবারের শিক্ষার্থীরা এমআইটিতে টিউশন ফি ছাড়াই ভর্তি হতে পারবেন। এই পদক্ষেপটি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আরো বেশি শিক্ষার্থীর জন্য সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে, যাদের আর্থিক অবস্থার কারণে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি হওয়া কঠিন। এমআইটির নতুন আর্থিক সহায়তার নীতি অনুযায়ী, ২ লাখ ডলারের নিচে আয়সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি সম্পূর্ণভাবে মওকুফ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি জানিয়েছে যে, আগামী ক্লাসের ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী এই সুবিধা পাবেন। এছাড়াও যাদের পরিবারের আয় ১ লাখ ডলারের নিচে, তাদের জন্য এমআইটিতে সম্পূর্ণ টিউশন ফি ফ্রি হবে। এর মধ্যে টিউশন, আবাসন, খাবার, ফি এবং বই ও ব্যক্তিগত খরচের জন্য একটি ভাতা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এছাড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এ সিদ্ধান্তটি আরো বড় একটি সুযোগ নিয়ে এসেছে। অনেক বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এই আর্থিক সহায়তা তাদের উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণের পথ আরো সুগম করে তুলবে। যারা আর্থিক কারণে বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে পারতেন না, তাদের জন্য এখন এমআইটিতে ভর্তি হওয়া একটি বাস্তবতা হয়ে উঠবে। এমআইটির এই পদক্ষেপটি শুধু আমেরিকান শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করবে। এটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ প্রদান করবে।

এমআইটি প্রেসিডেন্ট স্যালি কর্নব্লুথ বলেন, এমআইটির শিক্ষা মডেল, যা তীব্র, চ্যালেঞ্জিং, বিজ্ঞতা ও প্রকৌশলে ভিত্তি করা, শিক্ষার্থীদের ও সমাজের জন্য গভীর ব্যবহারিক মূল্য রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, কলেজের খরচ একটি প্রকৃত উদ্বেগ এবং আমরা এই রূপান্তরকারী শিক্ষাগত অভিজ্ঞতাটি সবচেয়ে প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের আর্থিক পরিস্থিতি নির্বিশেষে উপলব্ধ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাই যে কোনো শিক্ষার্থী যে এমআইটিতে আসার স্বপ্ন দেখে: খরচ নিয়ে উদ্বেগ যেন আপনার পথে বাধা না হয়।

এমআইটি, আমেরিকার শীর্ষ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত এবং ফোর্বস দ্বারা দেশের তৃতীয় শীর্ষ সম্মানিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্থান পেয়েছে। এডুকেশন ডাটা ইনিশিয়েটিভ অনুযায়ী ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য এমআইটির টিউশন ছিল ৫৭ হাজার ৯৮৬ ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয়ভাবে চার বছরের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গড় খরচ ৩৯ হাজার ৪০০ ডলারের তুলনায় অনেক বেশি। এমআইটির ভর্তি ও ছাত্র আর্থিক সেবা বিভাগের ডিন স্টুশ্মিল বলেন, এই আর্থিক সহায়তার উদ্যোগটি আমেরিকার সবচেয়ে যোগ্য শিক্ষার্থীদের জন্য শীর্ষস্থানীয় শিক্ষালাভের সুযোগ তৈরি করে, তাদের পরিবারের আয়ের ওপর ভিত্তি না করেই। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এমআইটিকে দেশের সবচেয়ে প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে একটি শিক্ষা প্রদানকারী শ্রেষ্ঠ গন্তব্য হিসেবে গড়ে তোলা উচিত। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত। আজকে আমাদের প্রদত্ত চাহিদাভিত্তিক আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে, আমাদের শিক্ষা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সাশ্রয়ী হয়েছে।

এই টিউশন ফ্রি আর্থিক সহায়তা উদ্যোগটি সম্ভব হয়েছে এমআইটির অ্যালামনাই এবং বন্ধুদের উদার দানের মাধ্যমে। এমআইটি ইতিমধ্যে আমেরিকার ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি, যা আবেদনের প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় নেয় না। বিশ্ববিদ্যালয়টি ঐতিহ্যগতভাবে ঋণগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের চাপ দেয় না এবং দাতা বা অ্যালামনাই পরিবারের সন্তানদের জন্য ‘অ্যাডমিশন অ্যাডভান্টেজ’ প্রদান করে না।এটি এমআইটির নীতি। এমআইটি আরো জানিয়েছে যে, এ নতুন আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের জন্য একটি শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রদান করতে সক্ষম হবে, তাদের আর্থিক পরিস্থিতি নির্বিশেষে। এ টিউশন ফ্রি আর্থিক সহায়তা উদ্যোগটি উচ্চশিক্ষায় আর্থিক প্রতিবন্ধকতা দূর করার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হবে, যা প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ তৈরি করবে, যারা আর্থিক কারণে তাদের শিক্ষাজীবন চালিয়ে যেতে পারতেন না।

টিউশন ফ্রি আর্থিক সহায়তা উদ্যোগটি শুধু আমেরিকান শিক্ষার্থীদের জন্যই একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নয়, বরং বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের জন্যও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। বিশেষ করে বাংলাদেশের এবং অভিবাসী কমিউনিটির শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ থেকে বড় উপকার পাবে। আর্থিক সীমাবদ্ধতা যাদের শিক্ষার পথে বাধা ছিল, তাদের জন্য এমআইটির এই উদ্যোগটি একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখন এমআইটিতে তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে আরো একধাপ এগিয়ে যেতে পারবে এবং এর মাধ্যমে তারা বৈশ্বিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। এমআইটির উদার দানের মাধ্যমে এ উদ্যোগটি সম্ভব হয়েছে, যা শুধু একাডেমিক দিক থেকে নয়, বরং বৈশ্বিক শিক্ষার অগ্রগতিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

শেয়ার করুন