৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৩:২৯:৫৩ অপরাহ্ন


রাইজ আপের অনুষ্ঠানে বক্তারা
কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করার প্রতিশ্রুতি মেয়র প্রার্থীর
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০২-২০২৫
কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করার প্রতিশ্রুতি মেয়র প্রার্থীর বক্তব্য রাখছেন শাহ নেওয়াজ


‘রাইজ আপ নিউইয়র্ক সিটি’র অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থীরা বাংলাদেশি কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি জ্যাকসন হাইটস সংলগ্ন গুলশান টেরেস মিলনায়তনে নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের এজেন্ডা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা হয়। অনুষ্ঠানে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের অধিকার আদায় এবং মর্যাদায় রক্ষায় এ ধরনের সমাবেশের গুরুত্ব অপরিসীম বলে অভিমত ব্যক্ত করেন সিটি মেয়র, সিটি কম্পট্রোলার, পাবলিক অ্যাডভোকেট এবং কাউন্সিলম্যান প্রার্থীরা।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট মো. শামসুল হকের সাবলীল উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার শাহ নেওয়াজ বলেন, এ সিটির স্বল্প ও মাঝারি আয়ের কর্মচারীদের নিদারুণ কষ্টের কথা। বাসাভাড়াসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে বেতন-ভাতা বাড়ানো হচ্ছে না। একই অবস্থা অন্য পেশার লোকজনেরও। সিটি প্রশাসনকে এ ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে এবং নাগরিকদের নিরাপত্তাকে আরো গুরুত্ব দেওয়াও জরুরি।

মূলধারার রাজনীতিবিদ গিয়াস আহমেদ বলেন, ২০ বছর আগে আমি নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। তাই আমি জানি মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা কতটা জরুরি। কারণ রাজনীতি ও প্রশাসনের পরতে পরতে অভিবাসন আর মুসলিম বিদ্বেষীরা দিনরাত আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে।

সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-২৫ থেকে রিপাবলিকান পার্টির নমিনেশনের লড়াইয়ে অবতীর্ণ শাহ শহীদুল হক সাঈদ বলেন, আমরা অন্য কমিউনিটি ও ভাষার মানুষের জন্যে নির্বাচনী তহবিল গঠন করি। ওদেরকে ভোট দিয়ে সিনেট-কংগ্রেস-সিটি কাউন্সিলে পাঠাচিছ। এভাবে আর চলতে পারে না। এখন নিজেদেরই ওইসব আসনে জিততে হবে। 

ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেন, আমরা যদি আলোচনার টেবিলে বসতে না পারি, তাহলে কেউই আমাদের সমস্যা নিয়ে সরব হবেন না। আমি ২০১৬ সাল থেকে ডিস্ট্রিক্ট লিডারশিপে আছি, আমি সব সময় চেষ্টা করি কমিউনিটির গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুসমূহ রাজনীতি ও প্রশাসনের সামনে উপস্থাপনের জন্য। যারা সুপ্রিম কোর্টে জজ হিসেবে প্রার্থী হোন তাদের মনোনয়ন আমাকে দিতে হয়। এভাবেই আমরা কমিউনিটির গুরুত্ব মার্কিন ধারায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী আরো বলেন, আমরা শুধু সিটি কাউন্সিলের মেম্বার অথবা স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান কিংবা সিনেটর-মেয়র হলেই বুঝি যে লিডার হয়েছি। অথচ বহুাজাতিক এ সমাজে সবক্ষেত্রেই লিডার হওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং সেসবের গুরুত্বও আছে। আমি সব সময় ভালো কাজের সঙ্গে আছি। 

বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাডভোকেসি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদীন বলেছেন, ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে হবে এবং কেন্দ্রে যেতে হবে। তাহলেই কমিউনিটির গুরুত্ব বাড়বে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের ন্যায্য হিস্যা নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হবে না।

সিটি মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়নের দৌড়ে অবতীর্ণ একমাত্র মুসলিম প্রার্থী যোহরান মামদানি বলেন, ৩০ বছর যাবত এ সিটিতে বাস করছি। আমি জানি অভিবাসীদের স্বপ্নের পরিধি কত বিস্তৃত। এ সিটির পাঁচ বরোর অভিবাসীদের একই স্বপ্ন। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, সেই স্বপ্নগুলোর কথা স্মরণ করতেও কষ্ট হচ্ছে। কীভাবে এ সিটিতে নিরাপদে বসবাসের উপযোগী একটি পরিবেশ তৈরি করা যাবে, সেটিও অসম্ভব হয়ে উঠেছে। নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৩৬ থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির অ্যাসেম্বলিম্যান যোহরান ইতিমধ্যেই খেটে খাওয়া অভিবাসীদের সব আন্দোলনে সরব রয়েছেন। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন শুরু থেকেই। ট্যাক্সি ড্রাইভারদের দাবি আদায়ের আন্দোলনের সময় অনশন করেছেন। গ্রেফতারও হয়েছিলেন অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষার আন্দোলনের সময়। এভাবেই নিজেকে বাংলাদেশিদের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে পরিগণিত করতেও সক্ষম হয়েছেন।

মেয়র প্রার্থী ব্র্যাড লেন্ডার নিজেকে বাংলাদেশি লিডার হিসেবে দাবি করে বলেন, ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ড এলাকা থেকে ২০১০ সালে সর্বপ্রথম আমি সিটির কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হয়েছি সেখানকার বাংলাদেশিদের অকুণ্ঠ সমর্থনে। এরপর আমি ২০২১ সাল পর্যন্ত একই আসনে বিজয়ী হয়েছি। এরপর আমার আসনটি ছেড়ে দিয়েছি বাংলাদেশি আমেরিকান শাহানা হানিফের সমর্থনে। শাহানা হয়েছেন এই সিটির প্রথম বাংলাদেশি এবং প্রথম কাউন্সিলওম্যান। ২০২১ সালের নির্বাচনে আমি বিজয়ী হয়েছি সিটি কম্পট্রোলার পদে। চার বছরের দায়িত্ব শেষে লড়ছে মেয়র পদে। ডেমোক্রেটিক পার্র্টির মেয়র হিসেবে বিজয়ী হতে পারলে এই সিটির অভিবাসী সমাজের মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে কাউকে টানাটানি করতে দেব না। ব্র্যাড লেন্ডার বলেন, আমি হচ্ছি নিউইয়র্ক সিটির সর্বোচ্চ পর্যায়ে জুইশ কমিউনিটির একজন। সে আলোকে সকল কমিউনিটির স্বার্থকে আমি বরাবরই প্রাধান্য দিয়ে আসছি। শুধু তাই নয় নিউইয়র্ক স্টেটে আমিই প্রথম জুইশ লিডার, যিনি গাজায় যুদ্ধ বিরতির আন্দোলনে সরব ছিলাম।

হোস্ট সংগঠনের প্রধান শামসুল হক স্বাগত বক্তব্যে তথ্য-উপাত্তের আলোকে উল্লেখ করেন যে, আমেরিকায় বাঙালিদের আগমন শুরু হয়েছে ১৮৮৭ সালে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর আগমনের হার ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে এখনো বিশেষ একটি পরিচিতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশিরা। তবে সংখ্যার অনুপাতে মার্কিন রাজনীতি ও প্রশাসনে যেভাবে ঠাঁই পাওয়া উচিত ছিল তা এখনো দৃশ্যমান হয়নি। সেই সংকট কাটিয়ে ওঠার অভিপ্রায়ে ‘রাইজ আপ নিউইয়র্ক সিটি’ কাজ করছে। আজকের এ আয়োজনে অনেক ভালো লাগছে। নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন পর্যায়ের প্রার্থীর সমাগম ঘটায় আশা করছি, কমিউনিটি আরো উজ্জীবিত হবে।

প্রার্থীদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন হায়রাম মনসেরাত, জেনিফার রাজকুমার, ইসমাইল মালাভি, মাইকেল ব্ল্যাক, জাস্টিন ব্র্যানন, মার্ক লেভিন, জুমানি উইলিয়ামস, স্টেট সিনেটর জন ল্যু, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অনিক রাজ, আশা হোমকেয়ারের প্রেসিডেন্ট আকাশ রহমান, মূলধারার রাজনীতিবিদ খোরশেদ খন্দকার, অজিৎ ভৌমিক, এনওয়াইপিডির কর্মকর্তা জামিল সরোয়ার জনি, ডিটেকটিভ মাসুদ প্রমুখ।

শেয়ার করুন