ফ্লারিডার স্টেট সিনেটর এবং রিপাবলিকান কংগ্রেস প্রার্থী র্যান্ডি ফাইন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের দুই মুসলিম নারী সদস্য ইলহান ওমর (ডি-মিনেসোটা) এবং রাশিদা তালিব (ডি-মিশিগান)-এর উদ্দেশ্যে একটি বিতর্কিত বার্তা টুইট করে হুমকি দিয়েছেন। টুইটে দেয়া হুমকিতে তিনি বলেন, ওমর ও তালিব ’আমার আগে কংগ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন।’ তিনি আরও হ্যাশট্যাগ BombsAway ব্যবহার করেন, যা তাৎক্ষণিকভাবে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
র্যান্ডি ফাইন ফ্লোরিডার ৬ষ্ঠ কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট থেকে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই আসনের বর্তমান প্রতিনিধি মাইক ওয়াল্টজ (আর-ফ্লোরিডা) শীঘ্রই পদত্যাগ করবেন এবং প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যেই র্যান্ডি ফাইনকে তার সমর্থন দিয়েছেন। ফাইন, যিনি নিজেকে হিব্রু হ্যামার বলে পরিচিত করেন, তার টুইট বার্তায় ইলহান ওমর এবং রাশিদা তালিবকে কটাক্ষ করে তাদের কংগ্রেস ছাড়ার পরামর্শ দেন।
কংগ্রেসওমেন রাশিদা তালিব, কংগ্রেসের প্রথম ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সদস্য এবং ইলহান ওমর দুজনই ইসরায়েলের গাজা অবরোধের কঠোর সমালোচক। তারা বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন এবং সংঘাতে বেসামরিক প্রাণহানির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সূত্র অনুযায়ী, চলমান ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৪,০০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহতদের ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু। অন্যদিকে, র্যান্ডি ফাইন ইসরায়েলের দৃঢ় সমর্থক এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বানের বিরোধিতা করে আসছেন।
ফাইন অতীতেও মুসলিম সম্প্রদায় নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি আল-আকসা মসজিদকে উল্লেখ করে ’মুসলিম দখলদারদের’ সমালোচনা করেন এবং সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।
ফাইন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ’জিহাদ জো’ বলে কটাক্ষ করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন যে বাইডেন হোয়াইট হাউসে ’মুসলিম সন্ত্রাসীদের’ চাকরি দিয়েছেন। তিনি বাইডেনের একজন ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কর্মকর্তা মাহের বিটারকে নিয়োগ দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে এই মন্তব্য করেন। ফাইন আরও বলেন, আমেরিকার মুসলিমদের ভয় না পাওয়া বোকামি।
র্যান্ডি ফাইন তার আচরণের কারণে আইনি সমস্যায়ও পড়েছেন। অক্টোবর মাসে একটি ভার্চুয়াল আদালত শুনানিতে তিনি অশালীন অঙ্গভঙ্গি করেন, যেমন মিডিয়া প্রদর্শন এবং গালিগালাজ করেন। ওই শুনানিতে তিনি তার পুরোনো নির্বাচনী প্রচারের টি-শার্ট পরিধান করেছিলেন, যা আদালতের নিয়ম ভঙ্গ করে। এই শুনানি ছিল একটি মামলার অংশ, যেখানে একজন সমালোচক ফাইনকে রিপাবলিকান নেতৃত্বের প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেন। যদিও মামলাটি পরে খারিজ হয়ে যায়, আদালতের প্রতি র্যান্ডি ফাইনের আচরণ সমালোচিত হয়েছে।
ফাইনের BombsAway মন্তব্যকে উসকানিমূলক এবং বিপজ্জনক হিসেবে দেখা হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই মন্তব্যকে মুসলিম-বিরোধী বিদ্বেষ ছড়ানোর প্রচেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইলহান ওমর এবং রাশিদা তালিব এখনও ফাইনের এই মন্তব্যের সরাসরি প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে তারা গাজায় মানবিক সহায়তা এবং যুদ্ধবিরতির পক্ষে তাদের অবস্থান ধরে রেখেছেন। ফ্লোরিডার ৬ষ্ঠ কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ফাইনের বিতর্কিত বক্তব্য মার্কিন রাজনীতির মেরুকরণকে আরও গভীর করেছে এবং নির্বাচিত কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।