এবার কিংস পার্টির আতঙ্কে রাজনৈতিক অঙ্গন অস্থির হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রত্যেকটি দলই এখন মনে করছে সামনের দিকে কিংস পার্টি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার আমলটি দীর্ঘ করতে চায়। আর আশঙ্কায় এমন খবরে বিচলিত হয়ে পড়েছে রাজনৈতিক অঙ্গন।
কিংস পার্টি?
ইন্টারনেট সূত্রে জানা গেছে কিংস পার্টি ধারণাটি মূলত পশ্চিমাদের থেকে ধার করা। একটি দেশে কিংস পার্টি বিভিন্নভাবে পর্যায়ে গঠন করা হয়। নানাবিধ কারণের মধ্যে রয়েছে সেনা বিদ্রোহ, বিক্ষোভ, জরুরি অবস্থার পরবর্তী কর্মকাণ্ড। যখন সামরিক শক্তি ক্ষমতায় আসে এবং ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য নিজেদের ছত্রছায়ায় নব্য রাজনৈতিক দলের জন্ম দেয় তখন সেই দলগুলোকে কিংস পার্টি বলা হয়।
এখন কেন শঙ্কা
দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে আন্দোলন সংগ্রামের পর দেশে এখন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চলছে। সবাই ধরে নিয়েছে যে দেশে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে যাচ্ছে, যার কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ছাত্র-জনতা মাঠে নেমেছে। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব একটা সুখকর না। কারণ একদিকে সংস্কার নয় দ্রুত নির্বাচনের দাবি উঠছে অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠরা চাচ্ছে এমনভাবে সংস্কার যেন ভবিষ্যতে অবৈধ্যভাবে আর কেউ যুগের পর যুগ ক্ষমতায় থাকার সাহস না দেখায়। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে গুজব উঠেছে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠরা কেউ কেউ চাচ্ছে কিংস পার্টি করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে।
সন্দেহ আরো যেসব কারণে
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর রেরিয়েছে যে, তারুণ্যনির্ভর একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কাজ শুরু করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এই লক্ষ্য সামনে রেখে দেশব্যাপী সংগঠন গোছাচ্ছে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় এখন চলছে থানা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজ। আবার এমন খবর মিলছে জাতীয় নাগরিক কমিটির পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও সাংগঠনিক কাজে তৎপর হয়েছে। তারাও জেলা পর্যায়ে কমিটি দেওয়া শুরু করেছে। একটি গণমাধ্যমের খবরে আারো দেখা গেছে, জাতীয় নাগরিক কমিটিতে দুই দফায় সদস্য বেড়ে ১০৭ জনে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করে আটজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক, আটজনকে যুগ্ম সদস্যসচিব, পাঁচজনকে সহমুখপাত্র, চারজনকে যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এবং ১৪ জনকে সংগঠক করা হয়। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলমকে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক মনোনীত করা হয়েছে। সারা দেশকে ২০টি জোনে (এলাকা) ভাগ করে সংগঠকদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছে নাগরিক কমিটি। জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য পদে ধর্মভিত্তিক ছাত্রসংগঠন ও বামপন্থী বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সাবেক নেতারাও রয়েছেন। তবে সর্বশেষ একটি দৈনিকে এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন যে, তারা কোনো কিংস পার্টি গঠন করছেন না। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কোনো দল করার ইচ্ছা নেই। তবে তিনি জানান অভ্যুত্থানের শক্তির মানুষগুলো সিদ্ধান্ত নেবেন আমরা কবে ও কীভাবে দল ঘোষণা করবো। এই জায়গাটায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের সঙ্গে কমিউনিকেশন (আলোচনা) হবে। তিনি জানান জাতীয় নাগরিক কমিটি তাদের সহযোগিতা করবে। দল ঘোষণার সম্ভাব্য সময় দুই মাস। এর মধ্যে সব থানা-উপজেলা কমিটি গোছাতে সক্ষম হব বলে আশা করি। থানা কমিটি হওয়ার পর আমরা ওয়ার্ডে যাব। যখন এগুলোর মিশ্র একটা জায়গা হবে, প্রতিটি থানা থেকে লোকজন নিয়ে আমরা জেলা কমিটি করবো। আমরা লোয়ার (নিচের স্তর) থেকে টপে (ওপরে) যাব। জাতীয় নাগরিক কমিটির থানা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের বিষয়টি সরাসরি দল গঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
তাহলে কি সত্যিই কিংস পার্টির আর্বিভাব হচ্ছে?
এমন খবরে যখন দেশ ভেসে যাচ্ছে রাজনীতিবিদদের মধ্যে আশঙ্কা আতঙ্ক চেপে বসেছে আসলেই কিংস পার্টির আর্বিভাব হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপিই নয় জামায়াতের মতো দলও কিছুটা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। কারো কারো মতে, কিংস পার্টির আসলে হবে না কি প্রভাব পড়বে এসব বিষয় জানতে জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।