৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০১:১৪:৫৬ অপরাহ্ন


ভারতের আধিপত্যকে প্রতিরোধ করা সম্ভব : আনু মুহাম্মদ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০১-২০২৫
ভারতের আধিপত্যকে প্রতিরোধ করা সম্ভব : আনু মুহাম্মদ আনু মুহাম্মদ


বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই বিভ্রান্ত্র মধ্যে পরবে যদি আধিপত্যের সুনির্দিষ্ট বিষয়কে পাশ কাটিয়ে অন্য দিকে মনোযোগ সরিয়ে দেবার প্রবণতা থাকে। ভারতের রাষ্ট্রের আধিপত্য হিন্দু-মুসলমান বিষয় না। তিনি আরো বলেন, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের মধ্যে সংহতি স্থাপনের মাধ্যমেই এই অঞ্চলে ভারতের আধিপত্যকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

‘বাংলাদেশে ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্য : স্বরূপ এবং করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে সভাপ্রধানের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে গত ১১ জানুয়ারি শনিবার সর্বজনকথার এই সেমিনারে বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান এবং সঞ্চালনা করেন গবেষক মাহা মির্জা।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ভারত প্রসঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আছে। একটা বৃহৎ রাষ্ট্রের পাশে একটা রাষ্ট্র যে রাষ্ট্র স্বাধীনভাবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিভিন্ন সময়ে তাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে ভারত রাষ্ট্র। এইটাই মূল সমস্যা। এই আধিপত্য থেকে বের হতে হলে আধিপতের সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো জানতে হবে হবে এবং জনমত তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত রাষ্ট্র তার সেইসময়ের কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু ভারতের মানুষ সহমর্মীতা নিয়ে সেই সময় বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আমরা অবশ্যই সেই সহযোগিতার কথা স্মরণ করবো এবং সেইসাথে ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্যের বিরোধিতা আমরা করবো। শেখ হাসিনার আমলে শর্তহীনভাবে আত্মসমপর্ণ করার কারণ শেখ হাসিনার দরকার ছিল নির্বাচন ছাড়া চিরস্থায়ী ক্ষমতা তৈরি। তিনি বলেন, এই সরকারের প্রয়োজন সামরিক, বেসামরিক সকল চুক্তি জনগণের কাছে প্রকাশ করা। সেইসব চুক্তির মধ্যে যেগুলো জনস্বার্থ বিরোধী সেইগুলো বাতিল করা। কিন্তু এই সরকারের বিভিন্ন মাধ্যমে শুনতে পাই, যে, চুক্তি বাতিল করা যাবে না। পুরনো চুক্তি, প্রকল্প থাকবে কিন্তু আমরা একটি নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করবো তা হতে পারে না।

আনু মুহাম্মদ বলেন, নেপাল এবং ভুটানের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিতে বলে। এবং ট্রানজিট চুক্তি প্রসঙ্গে বলেন, যদি ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যদি ট্রানজিট ব্যবহার করে তাহলে ভারতের মধ্য দিয়েও বাংলাদেশের ট্রানজিট ব্যবহার করতে পারতে হবে। কোনো অসম চুক্তি বাংলাদেশ চায় না। 

সেমিনার শুরুতে প্রথমেই প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা তার নির্ধারিত বক্তব্যে বাংলাদেশে ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্যের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি ট্রানজিট চুক্তি, রামপাল চুক্তি, বিদ্যুৎ চুক্তিসহ বিভিন্ন চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি সীমান্তে হত্যা নিয়ে বহুপাক্ষীয় ফোরামে যাবার প্রস্তাব দেন। যে সমঝোতার মধ্য দিয়ে ভারত রাষ্ট্র এবং ভারতে কতিপয় ব্যক্তি পুঁজির স্বার্থ পূরণ হচ্ছে সেইসব চুক্তি ও সমঝোতা বাতিল করার দাবি তোলেন। তিনি আরো বলেন, ভারত বিভিন্ন অসম চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছে, আবার চুক্তি স্বাক্ষর না করেও বাংলাদেশের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছে। যার উদাহরণ হলো তিস্তা চুক্তি। শুধু তিস্তা নয়, কোন ধরণের চুক্তি বা সমঝোতা ছাড়াই ভারত বাংলাদেশের ৫৪টি আন্ত:সীমান্ত নদীর মধ্যে ৩০টির উপর নানা ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। ভারতের অরুণাচল প্রদেশের সরকার ব্রহ্মপুত্রের উজানে বাঁধ দিয়ে ১২টি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প চূড়ান্ত করেছে। বাংলাদেশের নদীর উজানে বাধ নির্মাণ করে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ আবার উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে সঞ্চালন করবার সমঝোতা করেছে বাংলাদেশের সাথে। অথচ বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের ‘ওয়াটার কোর্স কনভেনশন ১৯৯৭’ স্বাক্ষর করেনি।

মোশাহিদা সুলতানা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভারত নির্ভরতার স্বরূপ তুলে ধরেছেন। তিনি বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন, বহরম্পুর-পাবনা সঞ্চালন লাইন প্রকল্প, সূর্যমনি- কুমিল্লা সঞ্চাল লাইন, আদানির ঝাড়খনদের গোড্ডা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, রিলায়েন্স এলএনজি ভিত্তিক মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র এর মোট সক্ষমতা, উৎপাদন এবং এই প্রকল্পগুলোর জাতীয় স্বার্থের বিরোধগুলো তুলে ধরেছেন। সেই সাথে জ্বালানি খাতের বিনিন্ন প্রকল্প যেমন ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপ্লাইনের মাধ্যমে পরিশোধিত তেল আমদানি, এলএঞ্জি আমদানি, ওএঞ্জিসির গুয়াস উত্তোলন প্রকল্পগুলোর আর্থিক লাভ-ক্ষতি এবং এইগুলোর কৌশলগত ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি এই সমস্ত প্রকল্প বাতিল করার দাবি উপস্থাপন করেন। এবং কেন বাতিল করতে হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, দেশব্যাপী অধিকাংশ মানুষের প্রতিরোধ উপেক্ষা করে পূর্ববর্তী সরকারের নেয়া সিদ্ধান্তের দায় বাংলাদেশের জনগণ নিতে বাধ্য না।

অধ্যাপক তানজিমউদ্দীন খান তিস্তা চুক্তি এবং বিভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির মূল প্রতিবন্ধকতাগুলো নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ভারতের সবথেকে বড় সংবেদনশীলতার জায়গা তার সেভেন সিস্টার। যার কারণে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা ভাবে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তির ক্ষেত্রে বারবার রাজ্য বনাম কেন্দ্রের যে ঠেলাঠেলি তা অনেকটাই রাজনৈতিক। তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। তাই তিস্তা চুক্তি করার সমস্ত এখতিয়ার আছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের। তাই তিনি দ্রুততম সময়ে তিস্তা চুক্তি সম্পাদন করার দাবি জানান। সেই সাথে তিনি ভারতের সাথে করা সমন্ত চুক্তি জনসমক্ষে উন্মোচন করার দাবি করেন।

শেয়ার করুন