১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ৬:০০:৪২ পূর্বাহ্ন


তারেকের আশঙ্কা আমলে নিচ্ছে না বেপরোয়া নেতাকর্মী
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০১-২০২৫
তারেকের আশঙ্কা আমলে নিচ্ছে না বেপরোয়া নেতাকর্মী তারেক রহমান


আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কার পাশাপাশি দেশের ভবিষ্যত রাজনীতির গতিপথ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আমলে নিচ্ছে না বিএনপির একশ্রেণীর বেপরোয়া নেতা কর্মী। দল থেকে এসব বেপরোয়াদের বহিষ্কারের মতো পদক্ষেপের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে স্থানীয় প্রশাসনকেও বিএনপি সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এক শ্রেণীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সহযোগিতার পরও থামছে না বেপরোয়ারাদের তাণ্ডব। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ঘুরে এসব তথ্য মিলেছে। তারা আমলেই নিচ্ছে না তারা তাদরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আকুতি। 

কি বললেন তারেক রহমান

‘আগামী নির্বাচন বিএনপির জন্য এতো সহজ নয়, জনগণই ম্যাটার্স’ বলে দলের নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন গত ১৯ জানুয়ারি রোববার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জনগণ বুঝিয়ে দিয়েছে তারাই গুরুত্বপূর্ণ। রোববার বিকেলে বিএনপির আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান আরো বললেন, ‘কাজেই আমরা যদি ভুল করি জনগণ কিন্তু আবার কোনোকিছু একটা বুঝিয়ে দেবে। তখন কিন্তু পস্তাতে হবে, তখন কিন্তু হা-হুতাশ করতে হবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখনও সময় আছে- আসুন আমরা জনগণের পাশে থাকি, জনগণের সঙ্গে থাকি। যারা এমন কিছু করবে যা আপনাকে-আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে- তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলব।

কিন্তু বাস্তবে কি হচ্ছে

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এমন আকুতি এর আগেও জানিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। সারাদেশে একের পর এক বেপরোয়ারা নেতা কর্মীরা এমন অবস্থা তৈরি করে রেখেছে এখনই কেউ টু-শব্দটিও করতে পারছে না। অনেক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ওইসব স্থানে বিএনপি’র মূল নেতা গোপনে কলকাঠি নেড়েই যাচ্ছেন। আর পাতি নেতাদের পাশাপাশি সদ্য গর্জে উঠা জাতীয়তাবাদী দলের অকুতোভয় সৈনিক নাম দিয়ে এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছে। দু-একটি জায়গায় সেনাবহিনী এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও আইন শৃংখলায় নিয়োজিত অন্যদের অবস্থান একেবারেই নিশ্চুপ বা ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো অবস্থা। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালনা কমিটির পদ-পদবি নিয়ে অনেক উচ্চ শিক্ষিত বেপরোয়ারা নেতাকর্মীরাও দখল নিতে হেন ক্ষমতা নেই যে তারা ব্যবহার করছে না। এরা এসব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করতে প্রশাসনে নিজেদের লোকদের দিয়ে এলাকায় এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেই যাচ্ছে। এসব কাজে নির্লজ্জ্ব বেহায়ার মতো এক শ্রেণীর তথাকথিত উচ্চ শিক্ষিত দাবিদার বিএনপি’র ব্যনারে থাকা বেপরোয়ারা পেশাজীবিরা প্রতিষ্ঠানগুলি করায়াত্তে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে। যা নিয়ে সারা দেশে বিএনপি’র বিরুদ্ধে এক ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা তুঙ্গে। 

কঠেরতায়ও কাজ হচ্ছে না

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনের পতনের পরপরই দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। অধিকাংশের বিরুদ্ধেই দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। সব মিলিয়ে কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার, দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের খবরে দেঝখা যায় ৫ আগস্টের পর শুধু কেন্দ্রীয়ভাবে ১ হাজার ৩১ নেতাকে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপি’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। বলা হয়। ১ হাজার ২০৩ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়েও অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনও শত শত নেতাকর্মীকে শাস্তি দিয়েছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেক স্থানে প্রশাসন বেপারোয়া বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা নিয়েও সরাসরি মনিটরিং করা হচ্ছে। ব্যবস্থা নিতে বিএনপি’র পক্ষ থেকেও সুপারিশ করা হচ্ছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এতে কাজ হচ্ছে না। 

বহিষ্কার প্রত্যাহার হবেই

এদিকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে ত্যাগী নেতাকর্মী যারা বিএনপি’র প্রকৃত শুভানুধ্যায়ী তাদের মতে, দলের এসব বেপরোয়া নেতাকর্মীদের এখন শাস্তি দেয়া হলেও ঠিক নির্বাচনের আগে আবার তা প্রত্যাহার হয়েই যাবে। জানা গেছে এক শ্রেণীর নেতাকমীদের ধারণা বা আশাবাদ যে, যদি বিএনপি ক্ষমতায় চলে আসে তাহলে তো এই বহিষ্কৃতরা বিভিন্ন কায়দা-কানুন করে দলে ভিড়ে যাবেই। আবারও বহাল তবিয়তে বিভিন্ন পদ-পদবি আঁকড়িয়ে পুরো এলাকায় দাবড়িয়ে বেড়াবে। 

শেষ কথা

গত রোববার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরেকটু আকুতি করেই বলেছেন, গত কয়েক মাস ধরে বলছি, সামনের নির্বাচন এতো সহজ নয়- আপনারা যত সহজ ভাবছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবারের আকুতি একেবারে ভিন্ন প্রকৃতি। ধরে নেয়া যায়, সামনের দিন গুলি বিএনপি বা পুরো দেশের জন্য কোনো ক্ষতিকর বার্তা আছে তারেকের সর্বশেষ এই আকুতিতে। হয়তো দূর থেকে কিন্তু পশ্চিমাদের কাছাকাছি একেবারে মূল ঘাটিতেই বসে কলকাটি নাড়ানো দেখছেন তিনি। দেখছেন কি হচ্ছে বাংলাদেশের ভবিষ্যত? গতিপথ কোন দিকে দিয়ে যাচ্ছে? এতে তারেক রহমান বুঝেছেন তা দলের একশ্রেণীর বেপরোয়ারা নেতা কর্মীর দ্বারা তার দল, সর্বোপরি দেশই বড়ো ধরনের বিপর্যয়ের মুখ পড়তে পারে। কিন্তু দলের মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে তার দলের বেপরোয়ারা নেতাকর্মীরা তারেক রহমানের আতঙ্ক উদ্বেগ কানেই নিচ্ছে না। আর নিচ্ছে না বলেই রাজশাহীর বাঘায় উপজেলা বিএনপির আহবায়কের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে সাবেক পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম মেরাজহ ৩১২ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফকরুল হাসান বাবুল বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় ১১২ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাতনামা ১০০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। শুভানুধ্যায়ীদের প্রশ্ন এতে কি মনে হয় না যে সেই পতিত ফ্যাসিবাদীদের পথেই কি হাঁটা হচ্ছে না বিএনপি’র? এটা কি বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সাথে প্রশাসনও মিলেমিশে মামলাবাণিজ্য করা না? তা না হলে একটি মামলায় ১১২ জনের নাম চলে আসে কিভাবে? আবার মামলা বাণিজ্যের জন্য অজ্ঞাতনামার চাপ্টারও রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন সামনে দিনে যে অল্প সময় সময় পাচ্ছে তা-তে দলের একশ্রেণীর বেপরোয়া চাঁদাবাজ ও মামলা বাণিজ্যে লিপ্তদের থামাতে না পারলে ভবিষ্যৎ অন্ধকারই থাকবে বিএনপির। 

শেয়ার করুন