০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৩:০০:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


দেশকে রেনেসাঁর নকীব খান
স্বপ্ন পুরোপুরি পূরণ হয়নি
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০১-২০২৫
স্বপ্ন পুরোপুরি পূরণ হয়নি নকীব খান


বাংলাদেশের সংগীত জগতের কিংবদন্তি নকীব খান, যাঁর ৫০ বছরের সংগীত ক্যারিয়ারে অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে, সম্প্রতি সংগীতে তার অর্ধশতকের যাত্রা পূর্ণ করেছেন। সংগীতের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও অবদান অপরিসীম, তবে তাঁর মতে, এই দীর্ঘ পথচলায় তিনি শুধুমাত্র কিছু নুড়ি কুড়িয়েছেন এবং আরও অনেক কিছু করার বাকি। এ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ প্রত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: আপনার সংগীত জীবন শুরু কীভাবে হয়েছিল?

নকীব খান: ১৯৭২ সালে বালার্ক ব্যান্ডে যোগ দিয়ে আমার সংগীত জীবন শুরু। ১৯৭৩ সালে ব্যান্ডটি ভেঙে গেলে সোলসে যোগ দিই। সেখানে ১০ বছর মৌলিক গান করেছি। পরে ১৯৮৫ সালে রেনেসাঁ ব্যান্ড গঠন করি।

প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত গানের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখার বিষয়টি আপনার কাছে কেমন লাগে? 

নকীব খান: এই অনুভূতি স্বপ্নের মতো। সত্যি কখনো ভাবিনি, গানে গানে এতটা পথ পাড়ি দিতে পারব। এই দীর্ঘ পথচলায় শ্রোতার ভালোবাসাই ছিল অনুপ্রেরণা।

প্রশ্ন: সংগীতে ৫০ বছর পূর্তিতে আপনার প্রাপ্তি কী মনে হয়?

নকীব খান: সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে, মানুষের ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা পাওয়া। ৫০ বছর ধরে সংগীতজীবন চালিয়ে যেতে পারা এবং মানুষের হৃদয়ে জায়গা তৈরি করা, সেটাই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন। গান দিয়ে সেই জায়গাটা অর্জন করেছি, এর চেয়ে বড় কিছু আমি চাই না।

প্রশ্ন: বর্তমান সংগীতের অবস্থা কেমন?

নকীব খান: বর্তমান সময়টা অনেক প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আসছে, যেমন ক্যাসেট, সিডি, ডিজিটাল মাধ্যমের উন্নতি হয়েছে। এর ফলে কিছু সুবিধা যেমন ইন্টারন্যাশনাল ফোকাসের সুযোগ তৈরি হয়েছে, তেমনি সমস্যা যেমন পাইরেসি, অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গানের মান সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে না, শিল্পীরা রয়্যালটি পাচ্ছেন না, সঙ্গীত শিল্পটি স্থবির হয়ে পড়েছে।

প্রশ্ন: আইন প্রয়োগের অবস্থা নিয়ে আপনার মতামত কী?

নকীব খান: কপিরাইট আইন আছে, কিন্তু সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না। মনিটরিং সিস্টেম সঠিক না থাকায় পাইরেসি বেড়েছে, ফলে শিল্পীরা তাদের প্রাপ্য রয়্যালটি পাচ্ছেন না। এই সমস্যা সমাধান করতে আইন প্রয়োগ আরও শক্তভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

প্রশ্ন: উত্তরণের উপায় কী হতে পারে?

নকীব খান: আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো যেভাবে আইন প্রয়োগ করছে, আমাদের সেভাবে করতে হবে। মেকানিজমগুলোকে সঠিক করতে হবে যাতে শিল্পীরা তাদের প্রাপ্য রয়্যালটি পেতে পারেন। সেই সঙ্গে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং কনট্রোলিং পদ্ধতি আরও কার্যকর করতে হবে।

প্রশ্ন: ক্যারিয়ারের ৫০ বছর শেষে নতুন পরিকল্পনা কী?

নকীব খান: ৫০ বছর তো কাটিয়ে দিলাম, তবে মনে হয় এখনও অনেক কিছু করা বাকি। স্বপ্ন ছিল, কিন্তু পুরোপুরি পূরণ হয়নি। সংগীত আমার কাছে এক মহাসমুদ্র, যেখানে অনেক কিছু অর্জন করা বাকি। আশা করি, বেঁচে থাকলে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।

প্রশ্ন: কোন গানগুলো আপনার প্রিয়?

নকীব খান: সব গানই আমার সন্তানের মতো। তবে ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’, ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’, ‘ভালো লাগে জ্যোৎস্না রাতে’, ‘ও নদী রে’-এমন কিছু গান রয়েছে যা শ্রোতাদের কাছে প্রিয় এবং আমি নিজেও খুব ভালোবাসি।

প্রশ্ন: ‘এখন অনেক রাত’ গান নিয়ে বিভ্রান্তি কেন?

নকীব খান: ‘এখন অনেক রাত’ গানটি আমার নয়, এটি আইয়ুব বাচ্চুর সুর করা গান। তবে আমার গাওয়া একই নামে আরেকটি গান রয়েছে, যা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

প্রশ্ন: রেনেসাঁ ব্যান্ডের বর্তমান অবস্থা কী?

নকীব খান: রেনেসাঁর ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা নতুন গান প্রকাশ করতে যাচ্ছি। রেনেসাঁ আমাদের জন্য আর্থিক লাভের জায়গা নয়, এটি মানসিক প্রশান্তির জায়গা। আমরা গানগুলোর লিরিক্যাল ভ্যালু এবং মেলোডি নিয়ে কাজ করছি, যাতে প্রতিটি গান সমাজে ভালো মেসেজ পৌঁছাতে পারে।

প্রশ্ন: রেনেসাঁর নতুন গান কবে প্রকাশ করবেন?

নকীব খান: আমরা নতুন একটি অ্যালবামের কাজ শুরু করেছি। আশা করি ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কিছু গান প্রকাশ করতে পারব।

প্রশ্ন: রেনেসাঁর শুরু কখন?

নকীব খান: ১৯৮৫ সালে রেনেসাঁ ব্যান্ড শুরু হয়।

প্রশ্ন: সোলসে যোগ দেওয়ার পর থেকে আপনার ক্যারিয়ার গণনা শুরু?

নকীব খান: না, আমি আমার ক্যারিয়ার গণনা করছি প্রথম সুর করা গান থেকে, যা ১৯৭৪ সালে। সোলসেও আমি ১৯৭৪ সালে যোগ দিয়েছিলাম, তাই আমার ক্যারিয়ারের দুটি অংশই সমান গুরুত্ব বহন করে।

প্রশ্ন: প্রথম সুর করা গানটি সম্পর্কে কিছু বলুন?

নকীব খান: ‘একাকী যখন নির্জনে আমি’ গানটি ছিল আমার প্রথম সুর করা গান। এটি প্রয়াত হেনা ইসলাম লিখেছিলেন। গানটি তখন রিলিজ হয়নি, তবে এখন ভাবছি গানটি রিলিজ করব।

প্রশ্ন: আপনার পরিবারের আর কে কে গান করেন?

নকীব খান: আমার ছোট ভাই পিলু গান করেন এবং রেনেসাঁ ব্যান্ডে রয়েছেন। আমার মেয়ে একসময় গান করত, তবে বিয়ের পর এটি আর চালিয়ে যেতে পারেনি। পিলুর ছেলে বর্তমানে আন্তর্জাতিক সংগীতের সঙ্গে যুক্ত।

প্রশ্ন: নেসলে বাংলাদেশে কাজ করার পর এখন কী করছেন?

নকীব খান: এখন আমি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনির বাংলাদেশের কান্ট্রি হেড এবং অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছি। পাশাপাশি, ন্যামকন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কনসালট্যান্সি করছি।

শেয়ার করুন