জ্বালানি তেলের লাইন
সংকট সময়ে জ্বালানি সেক্টরের চারটি প্রকল্প বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এগুলো সব দ্রুত জ্বালানি বিদ্যুৎ সরবরাহ, বিশেষ আইন ২০১০-এর অস্বচ্ছভাবে গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রকল্পগুলো হলো চট্টগ্রামে বিতর্কিত এস আলম গ্রুপকে দেওয়া দ্বিতীয় তেল শোধনাগার প্রকল্প, কক্সবাজারের মহেশখালীতে সামিট গ্রুপকে দেওয়া তৃতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প, ইন্ট্রাকো গ্রুপকে ভোলা দ্বীপ থেকে গ্যাস সিএনজি করে ঢাকায় নিয়ে আসা প্রকল্প এবং ভোলায় বাপেক্স সফল হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাসপ্রমকে গ্যাসকূপ খনন প্রকল্প। বাংলাদেশের জ্বালানি সেক্টরে ২৮ বছর মাঠ কর্মী হিসাবে কাজ করা, জ্বালানি সেক্টর নিয়ে গভীরভাবে সংযুক্ত থাকার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই অযাচিতভাবে কাজগুলো চারটি কোম্পানিকে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় দেওয়া হয়েছিল।
চট্টগ্রামে তেল শোধনাগার প্রকল্প
কোন কারণে, কি যোগ্যতারভিত্তিতে একটি বিতর্কিত বাংলাদেশের ব্যাংক লুটেরা, অর্থসম্পদ পাচারকারী এস আলম গ্রুপকে তেল শোধনাগারের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারিগরি ঘন প্রকল্প দেওয়া হয়েছিল। গভীর সমুদ্র থেকে সিংগেল মুরিং প্রকল্প দীর্ঘসূত্রতার পর বাস্তবায়ন হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তত একটি বা দুটি তেল শোধনাগার স্থাপন এখন জরুরি হয়ে গেছে। বিপিসিকে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে অবিলম্বে স্বচ্ছ টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোম্পানি নিয়োগ করে ছয় মাসের মধ্যে কাজটি সম্পাদনের চুক্তি করা যেতে পারে। অত্যন্ত দুঃখজনক যে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও বাংলাদেশে একটি দ্বিতীয় তেল শোধনাগার গড়ে ওঠেনি।
মহেশখালীতে তৃতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল
সঠিক সময়ে উন্মুক্ত টেন্ডার করে স্বচ্ছ পদ্ধতিতে কোম্পানি নিয়োগ করে ভাসমান টার্মিনাল স্থাপন করলে এবং সেই সঙ্গে মহেশখালী থেকে তৃতীয় গ্যাস-সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মিত হলে এখন বিদ্যমান গ্যাস-সংকট অনেকটাই সহনীয় থাকতো। কিন্তু বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার জন্য সামিটকে একক সুবিধা দেওয়া হয়। হয়তো উন্মুক্ত টেন্ডার করলেও সামিট কাজটি পেতে পারে। আশা করি কাল বিলম্ব না করে পেট্রোবাংলা জরুরিভিত্তিতে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পাদন করে মার্চ ২০২৫-এর মধ্যে সঠিকভাবে নির্বাচিত কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে। একই সঙ্গে জিটিসিএলকে তৃতীয় টার্মিনাল এবং মাতাববাড়িতে নির্মাণাধীন ভূমিতে স্থাপনতব্য টার্মিনালকে বিবেচনায় নিয়ে ২০২৮-এর মধ্যে গ্যাস-সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করতে হবে।
ভোলায় গ্যাসকূপ খনন
শাহওয়াজপুর গ্যাস আবিষ্কার করেছে বাপেক্স, সেখানে নতুন কূপ খনন করেছে বাপেক্স। যোগ্যতা এবং দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও কিছু দুর্নীতিপরায়ণ মানুষের স্বার্থরক্ষার জন্য বাপেক্সকে বঞ্চিত করে বিদেশি কোম্পানিকে অযাচিতভাবে কূপ খননের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। চুক্তি বাতিল শুধু নয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা উচিত।
গ্যাসকে সিএনজি করে ঢাকায় আনার সিদ্ধান্ত ছিল আনাড়ি
সেই ১৯৯৯ ইউনোকোল রিপ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ২০০৫-এর মধ্যে ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা পর্যন্ত গ্যাস পৌঁছে যেত। কায়েমি স্বার্থবাদীদের ষড়যন্ত্রে দক্ষিণ বাংলাকে গ্যাসবঞ্চিত রাখা হয়েছে। বরিশাল, খুলনা, মোংলা, সাতক্ষীরা অঞ্চলের ব্যাপক শিল্পায়নের সম্ভাবনাকে টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। তীব্র গ্যাস-সংকটের সময়ে ২ টিসিএফের বেশি গ্যাস ভোলায় মাটির নিচে পড়ে রয়েছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার জন্য গ্যাসকে সিএনজি করে ঢাকায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা মোটেই সমীচীন হয়নি।
জানি, দেশের তীব্র গ্যাস-সংকট দ্রুত সমাধানের কোনো ম্যাজিক ফরমুলা নেই। সরকারকে উপরোক্ত প্রথম তিনটিসহ ভোলা থেকে পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস দক্ষিণ বাংলায় দুই-তিন বছরের মধ্যে সরবরাহের কার্যক্রম দ্রুত গ্রহণ করতে হবে। পেট্রোবাংলা এবং বাপেক্স গৃহীত গ্যাসকূপ খনন প্রকল্পগুলো নিবিড় মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত শেষ করতে হবে। ২০২৮ নাগাদ গ্যাস-সংকট অনেকটাই স্বস্তিদায়ক হয়ে যাবে। কিন্তু সেটি করতে হলে পেট্রোবাংলা এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোতে ব্যাপক সংস্কার করা জরুরি।