১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, রবিবার, ০৭:২০:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘সহিংসতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার একমাত্র উত্তর ভালোবাসা’ বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে- ড. ইউনূস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ৩-দিনব্যাপী ‘তারুণ্যের উৎসব’ সুন্দরবন দিবসের বিষয়ে তরুণ প্রজন্ম কিছুই জানে না! ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন দুবাই পৌঁছেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত সরকার আইয়ামে জাহেলিয়া প্রতিষ্ঠা করে গেছে- ড. ইউনূস মানবাধিকার লঙ্ঘনে শেখ হাসিনা সরাসরি জড়িত- ভলকার টার্ক হজযাত্রীদের সঙ্গে শিশুদের নিতে সৌদি আরবের নিষেধাজ্ঞা


অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে কঠোর চাপ পশ্চিমাদের
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০১-২০২৫
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে কঠোর চাপ পশ্চিমাদের নির্বাচন কমিশন ভবন


বাংলাদেশের একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ শান্তিপূর্ণের পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় পশ্চিমারা। সব দলের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলেই সেধরনের নির্বাচন আয়োজনে পাশে থাকবে তারা। এর পাশাপাশি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকেও সবধরনের সহায়তাও তারা দেবে, নচেৎ নয়। 

জানা গেছে, বাংলাদেশে একটি দ্রুত জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিচ্ছে পুরো পশ্চিমারা। তারা মনে করেন, জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা না হলে তার সাথে কাজ করা পশ্চিমাদের পক্ষে অসম্ভব। আর এজন্য বাংলাদেশে একটি দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তাগিদ দিচ্ছে তারা।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত

কূটনৈতিক সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষের পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত শক্ত অবস্থান নিয়েছে। বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক চ্যালেনের খবর নিয়ে জানা গেছে যে, পশ্চিমারা বাংলাদেশে দ্রুত জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজে সর্তক দৃষ্টি রাখছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বয়ং। আর তার সাথে কাজ করে যাচ্ছে দেশটির কৌশলগত সামরিক মিত্র ভারত। সেই ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী’র একটি বক্তব্যে বোঝা গেছে তারা একটি নির্বাচিত সরকারের সাথেই কাজ করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন। সম্প্রতি ভারত ও বাংলাদেশের সামরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা আগের মতোই আছে উল্লেখ করে ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী তার বক্তব্যে বলেছেন, দুই দেশের পারস্পরিক সার্বিক সম্পর্ক তখনই স্বাভাবিক হবে, যখন সে দেশে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে। অন্যদিকে ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি’র একটি বক্তব্যে বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজনের ব্যাপারে তাগাদার বিষয়টির ফুটে উঠেছে। একটি সূত্র জানায়, তাদের ধারণা ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি’ক দেশটি কেবল দ্রুত নির্বাচনই নয় বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনও আদায় করে নিতে কাজ করে যাচ্ছে। ভারতও শুধু দ্রুত না বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ঘোরতর সমর্থক। 

এদিকে আরেকটি সূত্র জানায়, আমেরিকার পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউও দ্রুত নির্বাচনের পাশাপাশি অংশগ্রহমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপ দিচ্ছে।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ইস্যুতে জাতিসংঘের তৎপরতা

এদিকে বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে জাতিসংঘ তৎপরতা শুরু করেছে বলে শোনা যাচ্ছে। তারাও বাংলাদেশে দ্রুত একটি নির্বাচনের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক সরকার দেখার অধীর অপেক্ষায় আছে। এর পাশাপাশি তারা চায় সবদল মতের অংশগ্রহণে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। গত ২০ জানুয়ারি সোমবার ঢাকার গুলশানে জাতিসংঘ ভবনে বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসে জামায়াতে ইসলামীর প্রভাবশালী নেতারা। ওই বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চেয়েছেন। আরেকটি সূত্র জানায়, বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদলটি স্পষ্টভাবে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে তারা বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এমন আভাসও মিলেছে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের বক্তব্যে। ঢাকার গুলশানে জাতিসংঘ ভবনে বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদরটি আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করতে পারবে কি না জানতে চেয়েছেন। তবে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলের এমন তাগিদের জবাবে জামায়াত নেতারা আসলে কি আশ্বস্ত করেছেন তা-স্পস্ট না হলেও বোঝা গেছে তারা এমন একটি পরিস্থিতিতে দেশের ভেতরের রাজনৈতিক ও বাইরের চাপে আছে। জামায়াত নেতার জবাবে সেটিই ফুটে উঠেছে। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘আমরা বলেছি, কোনো দলের পক্ষে-বিপক্ষে আইনগত কোনো বিষয় নিয়ে আমরা কোনো মতামত দিচ্ছি না। এটা পিপলস উইল ডিসাইড, সোসাইটি উইল ডিসাইড, সিচুয়েশন উইল ডিসাইড।’

শেষ কথা

বাংলাদেশের একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ শান্তিপূর্ণের পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে পশ্চিমারা দেড় যুগেরও বেশি ধরে একাট্টা। তারাও বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের সাথে সব সময় এ দাবিতে কূটনৈতিক পরিসীমার মধ্যে থেকেই সোচ্চার ছিলেন। দফায় দফায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে কূটনৈতিক ভাষাতেই বোঝাতে চেষ্টা করেছে বাংলাদেশের একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ শান্তিপূর্ণের পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক গুরুত্ব। তবে এর বিপরীতে বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হউক বা না হউক তা নিয়ে আওয়ামী লীগের সময় ভারত নিজ দেশের স্বার্থে বাংলাদেশের জনগণের দাবিতে নিশ্চুপ একেবারেই ছিল। সেই ভারত এখন বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে সব ধরনের কলকাঠি নাড়াচ্ছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এঅঞ্চলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল তাদের কিন্তু কৌশলগত সামরিক মিত্র হচ্ছে ভারত। সামরিক জোট না করেও তারা সামরিক মিত্র। কারো কারো মতে, বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের এমন দাবি বা ভূমিকার পেছনে তার নিজস্ব রাজনৈতিক সামরিক স্বার্থও জড়িত। অন্যদিকে বিশ্ব রাজনীতিতে বর্তমানে আমেরিকা যদি এঅঞ্চলে ছড়ি ঘোরাতে চায় সেক্ষেত্রে ভারতকে তার পাশে রাখবেই। সেজন্য বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কতটা সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারবে তা সময় বলে দেবে। যদিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেই ফেলেছেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে সরকার এযাবৎকালের সেরা করার পরিকল্পনা করছে, যাতে এটি গণতন্ত্রের একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সামনের দিনে বোঝা যাবে বিশ্বের অন্যতম এই সম্মানী ব্যক্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূস কিভাবে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। 

শেয়ার করুন