ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি না হলেও মার্চের শুরু থেকেই তীব্র জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ সংকটে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দুঃখজনক হলেও সত্য সেদিকে খুব একটা নজর দেওয়ার ফুরসত নেই যেন কারো। এখন দেশে শীত জেঁকে বসেছে। বিদ্যুৎ চাহিদা সংগত কারণেই ৯০০০-১০,০০০ মেগাওয়াট। এ সময়েও কখনো কখনো লোডশেডিংয়ের কথা শোনা যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারি থেকে সেচ মৌসুম শুরু। বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে ১২০০০-১৩০০০ মেগাওয়াট হয়ে যাবে। মার্চ থেকে রোজার সময় ইফতার, সাহরির সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ধীরে ধীরে গরম পড়তে থাকায় একসময় বিদ্যুৎ চাহিদা ১৭ হাজার পেরিয়ে ১৮ হাজার মেগাওয়াট হয়ে যাবে। মার্চ থেকে আগস্ট এই ধারা চলবে। অথচ কোনোভাবেই বিদ্যুৎ জ্বালানি সেক্টর ১৫০০০-১৬০০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে না। প্রতিদিন ২৫০০-৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটানোর জন্য লোডশেডিং ছাড়া গতি থাকবে না।
গ্যাস সংকটের কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট থাকা সত্ত্বেও সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন সম্ভব নয়। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫ হাজার ৫৫০ মেগাওয়াট হলেও আমদানি এবং পরিবহন সংকটের কারণে উৎপাদন ৪৫০০-৫০০০ মেগাওয়াট সীমিত থাকবে। বিপুল বকেয়া থাকায় ১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি আমদানি সম্ভব হবে না। বাকি থাকলো ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন। সেখানেও রয়েছে বিপুল বকেয়া। ব্যক্তিখাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মালিক সমিতি জানিয়েছে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বকেয়ার একটি অংশ পরিশোধ না করা হলে তাদের পক্ষে এলসি খুলে ফার্নেস অয়েল আমদানি করা সম্ভব হবে না। বিপুল বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে, জনজীবন বিপর্যস্ত হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বসিয়ে রেখে সরকারকে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে।
সেচ কাজকে কোনোভাবেই বিঘ্নিত করা চলবে না। হয়ত মাঝ রাতের পরে সেচ কাজ চালিয়ে কিছুটা সামাল দেওয়া যাবে। কিন্তু রোজার সময় তারাবি, রাতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে। জানিনা কি ভেবে রেখেছে জ্বালানি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পর বিদায় নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু গত ৬ মাস সময়ে নতুন সরকার পরিস্থিতি উন্নয়নে কাব্যিক কিছু করেছে বলে দৃশ্যমান নয়। পূর্ববর্তী সরকার আমলের কিছু কর্মকর্তাকে অপসারণ করা হয়েছে। কিছু পদ্ধতি পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু সেক্টরের মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধানের কোনো বাস্তবসম্মত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। জ্বালানি সেক্টর এখনো আমলানির্ভর। পেট্রোবাংলার কার্যক্রমে গতিশীলতা আসেনি। এখনো অবাস্তব পরিকল্পনা, আকাশ কুসুম স্বপ্ন। সরকার গঠিত কমিটি তাড়া হুড়া করে সুপারিশ করায় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই সরকার কিছু স্বাক্ষরিত চুক্তিসহ আলোচনায় থাকা জ্বালানি বিদ্যুৎ প্রকল্প ঢালাওভাবে বাতিল করেছে। এ ধরনের কাজ ইনভেস্টর কমিউনিটিকে ভুল সংকেত দিয়েছে। যার প্রতিফলন দেখা গেছে গভীর সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আহ্বানকৃত দর পড়তে কোনো সাড়া না পড়ায়। আমার মনে হয় না নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত জ্বালানি বিদ্যুৎক্ষেত্রে কোনো নতুন বিনিয়োগ আসবে। ২০২৫, ২০২৬, ২০২৭ তীব্র জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকট তীব্রতর হবে। মার্চ থেকে আগস্ট সরকার বিব্রত হবে। এমনকি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট কারিগরি কারণে সহসা উৎপাদনে আসবে বলে নিশ্চয়তা নেই।
দেখুন সেই ২০১০ এমনকি তার আগে থেকে বারবার বলেছি, লিখেছি গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে, কয়লা আহরণের সিদ্ধান্ত নিতে। যারা সরকারকে ভুল পরামর্শ দিয়েছে, তারা এখন কোথায়? কোথায় জ্বালানি উপদেষ্টা, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ও সচিব বাহাদুররা?
এখন একমাত্র উপায় ব্যবহারে জ্বালানি বিদ্যুৎ সব পর্যায়ে কৃচ্ছ্রসাধন, জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি, সঠিক পেশাদারদের সঠিক স্থানে পদায়ন করে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া। আসন্ন গ্রীষ্মে গ্যাস চুরি সীমিত করে অন্তত ১০০-১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বাঁচাতে হবে। গ্রীষ্মকাল জুড়ে আলোকসজ্জা পরিহার করতে হবে, এসির ব্যবহার সীমিত করতে হবে, শপিং সময় সীমিত করার বিষয় ভাবতে তবে। ঈশান কোণে মেঘ পরিলক্ষিত হচ্ছে।