২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:৪৪:৫১ পূর্বাহ্ন


গবেষণায় তথ্য
আওয়ামী লীগকে নিয়ে ভারতই এখন বিপাকে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১২-২০২৫
আওয়ামী লীগকে নিয়ে ভারতই এখন বিপাকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়


আওয়ামী লীগকে নিয়ে ভারতই এখন বিপাকে পড়েছে। সদ্য পতিত আওয়ামী লীগকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে দেড়যুগ ধরে সমর্থন ও সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে এসেছে। এখন এনিয়ে দেশটি দেশের ভেতরে-বাইরে নানান ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কয়েকদিন আগে ব্রাসেলসভিত্তিক সংস্থা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে ‘সোনালি অধ্যায়ের পর: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সঠিক পথে ফেরানো’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, ভারতকে আ.লীগ নির্ভরতা থেকে সরে আসতে হবে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি; ক্রাইসিস গ্রুপ নামেও পরিচিত) হল একটি বিশ্বব্যাপী অলাভজনক, বেসরকারি সংস্থা যা ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, যা নীতিনির্ধারক এবং শিক্ষাবিদদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়, বৈশ্বিক সংকটের উপর গবেষণা ও বিশ্লেষণ পরিচালনা করে। বলা যায় এধরনের সংস্থাকি ব্যবহার করেই বিভিন্ন দেশের ক্রাইসিস মুহূর্তে ভারত তার পররাষ্ট্র নীতি ঝালাই করে নেয়। 

হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে ভারত ছিল তাঁর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিত্র। নয়াদিল্লির সমর্থন আওয়ামী লীগকে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন পার হতে সহায়তা করেছিল। এসব নির্বাচনের প্রতিটিই অংশগ্রহণমূলক দূরে থাক নিজের প্রতিও আওয়ামী লীগ অবিচার করেছে। আওয়ামী বিত্তশালী বা হাইব্রিডদের শেখ হাসিনা প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা দিয়ে তথাকথিত বিজয়ী করে এনেছিল। আর এসব বিতর্কিত নির্বাচনের একটিকেও ভারত অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেনি। যদিও এখন ভারত বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে কথা বলে যাচ্ছে। কিন্তু একটি অজনপ্রিয় শাসকের সঙ্গে ভারতের মতো গণতান্ত্রিক সরকারের দাবিদারদের এমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তাদেরই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বেশি। আবার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর সে-ই সরকারের অধিকর্তাকে আশ্রয় দিয়ে প্রতিকূল অবস্থানে পড়ে ভারত। ভারত সরকারের এধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাবে বেশি ইন্দন জুগিয়েয়ে বলে দেশটির ভেতর থেকেই এখন মনে করা হচ্ছে, যা ক্রাইসিস গ্রুপের বিভিন্ন সভা সমাবেশে ফুটে উঠছে। এখন ভারত মনে করছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আওয়ামী লীগের ওপর নির্ভশীল হওয়ায় দুদেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ভারতকে এই ‘আওয়ামী লীগ-নির্ভরতা’ থেকে সরে আসতে হবে। আরও খবর হচ্ছে, বাংলাদেশে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনার সাজা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে পরীক্ষায়ও ফেলেছে। আর একারণে ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদনে পরামর্শও দেওয়া হয় যে, বাংলাদেশে নির্বাচনের পর নয়াদিল্লির উচিত হবে ঢাকার নতুন সরকারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। বিনিময়ে ঢাকার নতুন সরকারকেও ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের বিষয়গুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।

আওয়ামী লীগ থেকে ভারত না সরলে বিপদের আঁচ?

এদিকে আরও খবর মিলেছে যে, ভারতের একচেটিয়া আওয়ামী প্রীতি এখন তার দেশের ভেতরে বাইরে, এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যে বিপদে আছে তা-ই ওই ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদনে ইঙ্গিত মিলেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক ইমেজকে ভারত হিসাব করে চলতে হবে। জানা গেছে, দিল্লি একসময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা ক্ষুণ্ণ করারও চেষ্টায় ছিল। তাই ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে নয়াদিল্লির বেশির ভাগ ক্ষোভ ব্যক্তি ড. ইউনূসের প্রতি। কিন্তু তাতে যে ভারতের কিছু করার নেই তা ক্রাইসিস গ্রুপে প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে। এতে বলা হয় পশ্চিমাদের সঙ্গে ইউনূসের দীর্ঘ সময়ের সুসম্পর্ক এবং ভারতের প্রতি বিরুদ্ধাচরণ। ইউনূস-মোদি বৈঠকের জন্য বারবার ঢাকার অনুরোধ প্রত্যাখ্যানে দূরত্ব বেড়ে যায়। নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশিদের ভিসা স্থগিতও ক্ষোভ বাড়ায় জনমনে। আন্তঃসীমান্ত ট্রেন সংযোগ স্থগিত করায় দুই দেশের বাণিজ্য এবং জনগণের সম্পর্কে ভাটা পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এসব করে ভারতেরই ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

শেষ কথা

ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও দেশটির থিংক ট্যাংক এখন বিকল্পই ভাবছে বলে তাদের বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যে উঠে আসে। তাদের অনেকেরই অভিমত, ‘ক্ষমতায় যে থাকে, যে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং আপনার কাজ সমাধানে সহযোগিতা করে, তার সঙ্গেই আপনি কাজ করেন। আপনি কেন এটা পরিবর্তন করবেন? পররাষ্ট্রনীতি সাধারণত জনগণের মনোভাব বা নৈতিকতা দিয়ে পরিচালিত হয় না, রাষ্ট্রীয় সম্পর্কগুলো খুব কমই এমন হয়।’- এমন ধারণা নিয়ে তারা এখন সামনের দিকে এগুতে চায়। তারা এখন মনে করেন অভ্যন্তরীণভাবে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এটা হবে দেশটির জন্য কলহপ্রিয়, গভীরভাবে বিভাজনমূলক এবং ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তাই অনেকে মনে করে ভারত এখন দ্রুত না হলেও আওয়ামী প্রীতি থেকে তার দেশী-বিদেশী নৈতিক ইমেজকে অক্ষুণ্ণ রাখতে চায়। সেক্ষেত্রে এখন বা ভবিষ্যত বাংলাদেশের সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে থাকা দলটির পক্ষে থাকবে না। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের এই বার্তা ও ভারতের থিংক ট্যাঙ্কের সাম্প্রতিক মন্তব্য পরামর্শ তা-ই ফুটে উঠছে।

শেয়ার করুন